বকুলতলায় বর্ষা উৎসব: বর্ষার জন্য অনন্ত ভালোবাসা
‘আমি যখন ছোট ছিলাম খেলতে যেতাম মেঘের দলে,
একদিন এক মেঘবালিকা প্রশ্ন করলো কৌতূহলে—
“এই ছেলেটা, নাম কি রে তোর??”
আমি বললেম, “ফুসমন্তর”
মেঘবালিকা রেগেই আগুন—
“মিথ্যে কথা, নাম কি অমন হয় কখনো??”
আমি বললেম, “নিশ্চই হয়, আগে আমার গল্প শোন!! ”
জয় গোস্বামীর সেই বালিকা চলে গিয়েছিল। তাঁকে “সবাই এখন বৃষ্টি বলে ডাকে...।” তবে একঝাঁক মেঘবালিকার সমাবেশ ঘটেছিল আজ চারুকলার বকুলতলায়। মধ্য আষাঢ়ে বর্ষা উৎসবে তারা এসেছিল, নেচেছিল, গেয়েছিল। তাঁদের কথায় আর গানে ছিল বর্ষার জন্য অনন্ত ভালোবাসা।
আজ শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় ছিল ‘বর্ষা উৎসব-১৪২৫’। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজনে এ উৎসব শুরু হয় খেয়াল দিয়ে। বর্ষার রাগ মিয়াকি মালহারে খেয়াল পরিবেশন করেন শিল্পী শেখর মণ্ডল। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ গানের সঙ্গে নাচ করে নৃত্যজন, ‘মন মোর মেঘেরও সঙ্গী’ গানে নটরাজ, আধুনিক গান ‘মেঘের গায়ে নূপুর বাজে’-এর সঙ্গে স্পন্দন, নজরুলের ‘এসো হে সজল শ্যামঘন দেয়া’-এর সঙ্গে বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টসের শিল্পীরা এবং রবীন্দ্রনাথের ‘গহন ঘন ছাইল’ গানে স্বপ্ন বিকাশ কলাকেন্দ্রের শিল্পীরা নাচ পরিবেশন করেন।
উৎসবে ছিল বর্ষারই যত গান, কবিতা। এ উৎসবের উদ্দেশ্য ভালোবেসে প্রকৃতিকে সুরক্ষার আহ্বান। বর্ষা যেভাবে বৃক্ষকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে, জল প্রাণের উদ্ভব ঘটায়। সে জন্যই বর্ষার এত এত বন্দনা। এক যুগ ধরে বর্ষা উৎসবের আয়োজন করা সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, ‘আমরা চাই এই নগরে বেড়ে ওঠা প্রজন্ম প্রকৃতিবান্ধব হোক, প্রকৃতিকে চিনুক। রবীন্দ্রনাথ যেভাবে আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দিয়ে গেছেন, সেভাবে খুব কম কবিই করেছেন। তাঁর সৃষ্টিকে সঙ্গী করে আমরা অসাম্প্রদায়িক এ উৎসবটি করে আসছি।’
উৎসবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পূব হাওয়াতে দেয় দোলা’ গেয়ে শোনান ফাহিম হোসেন চৌধুরী, নজরুলের ‘যাও মেঘদূত দিও প্রিয়ার হাতে’ লিনা তাপসী খান, ‘শাওন আসিল ফিরে’ সুমন মজুমদার এবং অনিমা রায় রবীন্দ্রনাথের ‘বহু যুগের ওপার হতে এলো আষাঢ়’ গানটি গেয়ে শোনান । নায়লা তারাননুম চৌধুরী জয় গোস্বামীর ‘মেঘবালিকার জন্য রূপকথা’ এবং নির্মলেন্দু গুণের ‘পনেরো পাঁচ চুরাশি’ আবৃত্তি করেন মাশকুর-এ-সাত্তার।
বর্ষাকথন পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বর্ষা জীবনকে নতুন করে উজ্জীবিত করে। জলের আরেক নাম জীবন। এ জন্যই বর্ষাকে আমরা স্বাগত জানাই। বর্ষার মতো করে যে মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবাসবে, সে আরও মানবিক হয়ে উঠতে পারবে।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘বর্ষা আমাদের কাছে সুন্দরের প্রতীক হয়ে ধরা দেয়। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের শেকড় ও সংস্কৃতিকে ফিরে পাই। কিন্তু এ-ও মনে রাখতে হবে, প্রকৃতির ওপর খবরদারি সে সহ্য করে না। প্রকৃতির সঙ্গে বৈরী আচরণ করে আমরা যে বৈশ্বিক উষ্ণতার সৃষ্টি করেছি, এর ফল ভয়াবহ। প্রকৃতিকে তাঁর মতো করে বেড়ে উঠতে দেওয়া উচিত।’
বর্ষাকথনে আরও কথা বলেন, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি নিগার সুলতানাসহ অন্যরা।
উৎসবে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে স্বভূমি লেখক-শিল্পী কেন্দ্র, বহ্নিশিখা, পঞ্চভাস্কর, সমস্বর, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী এবং একক কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন দিলারা আফরোজ খান, আরিফ রহমান, আবিদা রহমান, আঁখি বৈদ্য প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।
আরও পড়ুন
-
যুক্তরাষ্ট্রে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছেলের মৃত্যু, কান্না থামছে না মা–বাবার
-
সাকিবের সঙ্গে দেখা করলেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থী, মুহূর্তেই ছবি ভাইরাল
-
রাজধানীর তাপমাত্রা আরও বাড়ল, চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের সর্বোচ্চ
-
মোস্তাফিজের এবারের আইপিএল: সাবেক দলের বিপক্ষে উইকেট যে কারণে কম
-
ট্রাম্পের বয়স নিয়ে খোঁচা দিলেন জো বাইডেন