Thank you for trying Sticky AMP!!

বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যেভাবে কৃষিতে সাফল্য

১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ চত্বরে এসেছিলেন। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন। ধান, গম ও ভুট্টা চাষে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বর্তমানে সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ।

কিন্তু কৃষির এ সাফল্য এমনি এমনি আসেনি বলে মনে করেন কৃষিবিদ আর কৃষি গবেষকেরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য লুৎফুল হাসান বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণেই কৃষিতে অবারিত সাফল্য এসেছে। কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা দেওয়ার কারণেই মেধাবীরা কৃষির সঙ্গে যুক্ত হতে থাকেন। তাঁদের গবেষণা ও উদ্ভাবনের কারণেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সবুজ চত্বরে গিয়েছিলেন। ব্রহ্মপুত্রের তীরে সবুজ শ্যামল অঙ্গন ওই দিন মহান নেতার পদস্পর্শে মুখর হয়েছিল সেদিন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক মিলন, নৈকট্য, কৃষিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময়, দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ এবং কর্মব্যস্ততা এ দিনকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

এ বিষয়ে বাকৃবির সহ-উপাচার্য জসিমউদ্দিন খান বলেন, দেশের কৃষি, কৃষক ও কৃষিবিদদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নিবিড় সম্পর্কের কথা কারও অজানা নয়। নির্বাচনী ডামাডোলের শত ব্যস্ততার মধ্যেও মমতার টানে তাই তো সেদিন তিনি ছুটে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও শেষ সফর। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সেই সফর আজও কৃষিবিদদের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করে রেখেছে। কৃষিবিদ সমাজ ঐতিহাসিক এ দিনের অপরিসীম গুরুত্ব ও মর্যাদাকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতিবছর ১৩ ফেব্রুয়ারি ‘কৃষিবিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে সেদিন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে অপরূপ সাজে সজ্জিত এবং অধুনালুপ্ত সমাবর্তন মণ্ডপকে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। সার্কিট হাউস থেকে উপাচার্য কাজী ফজলুর রহিম, বাকসুর জিএস আব্দুর রাজ্জাক (বর্তমান কৃষিমন্ত্রী), ছাত্রলীগ সভাপতি মো. রহমতুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক মো. রফিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি শাহান-উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আনোয়রুল হক বঙ্গবন্ধুকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সংবর্ধনাস্থলে নিয়ে আসেন। বাকসুর তৎকালীন ভিপি মুক্তিযোদ্ধা ও বাকৃবির সাবেক রেজিস্ট্রার নজিবুর রহমান মঞ্চ থেকে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন। এ লালগালিচা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। ‘জয় বাংলা বাহিনী’র এক সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুকে গার্ড অব অনার প্রদান করে সেদিন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কারণেই কৃষিতে অবারিত সাফল্য এসেছে। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের পূর্বে বাকসুর ভিপি নজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধুকে ‘বাংলাদেশের কৃষি’ আদর্শে প্রতিফলিত একটি কাঠের কারুকার্য এবং ‘বাংলার উৎফুল্ল কৃষক’ নামে একটি আলোকচিত্র উপহার দেন। মানপত্র পাঠ করেন বাকসুর জিএস আব্দুর রাজ্জাক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন বিভাগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে ছাত্রদের বোনা একটি কম্বল উপহার দেওয়া হয়। ‘বাকসু’ কর্তৃক আলোকচিত্রী নাইব উদ্দিন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ফটো অ্যালবাম প্রদান করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে প্রকাশিত কৃষি ‘বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা’র বিশেষ সংখ্যার একটি কপি বঙ্গবন্ধুকে উপহার দেওয়া হয়। পরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অফিসে শহীদ স্মৃতি পাঠাগারের দ্বারোন্মোচন করেন। পাঠাগারের বই কেনার জন্য পাঁচ হাজার টাকা, দুটি ট্রাক এবং ছাত্রদের পুনর্বাসনের জন্য নগদ এক লাখ টাকা দেন বঙ্গবন্ধু।

একই সঙ্গে তিনি ছাত্রদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুটি নতুন মডেলের বাস আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি পূর্ণাঙ্গ রেলস্টেশন প্রতিষ্ঠার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর আগমনের মধ্য দিয়েই এ দেশে কৃষিশিক্ষা ও কৃষিবিদদের যথাযথ গুরুত্ব, সামাজিক সম্মান ও প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা এবং কৃষির নতুন অভিযাত্রা সূচিত হয়েছিল।

*লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়