Thank you for trying Sticky AMP!!

বটমূলে গানে ভাষ্যে ছায়ানট

বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করছেন সনজিদা খাতুন

বরাবরের মতো এবারও রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি ছিল উৎসবের মূল কেন্দ্র। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বাঙালি সংস্কৃতিকে দলনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ধারায় ছায়ানট বাঙালির ঐতিহ্য অন্বেষণের নানামাত্রিক কার্যক্রমের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানের সূত্রপাত করেছিল। সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধের মতো অনিবার্য কারণ ছাড়া বর্ষবরণের এই অনুষ্ঠান কখনোই বন্ধ হয়নি।
এরই মধ্যে ১৪০৮ বঙ্গাব্দের বর্ষবরণের এই উৎসবে বোমা বিস্ফোরণে দশজনের মৃত্যু ঘটে। মানুষ ভুলে যায়নি রক্তঝরা সেই দিনটি। তাই বলে বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন ছায়ানটের অনুষ্ঠান থেমে যায়নি, বরং এর পর থেকে প্রতিবছরই উৎসবের ব্যাপ্তি বেড়েছে এবং বাঙালি জাতির সংগ্রামী-সংক্ষুব্ধ মানসিকতার জয় ঘোষিত হচ্ছে।
রমনার বটমূলে প্রায় দেড় শ শিল্পীর অংশগ্রহণে স্বদেশ ও সম্প্রীতির অনুষ্ঠান শুরু করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। শিল্পীদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের সংখ্যাই ছিল বেশি। সকাল সোয়া ছয়টার মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দিকনির্দেশনা মেনে সুশৃঙ্খলভাবে দলে দলে প্রবেশ করে মানুষ। মানুষ, সমাজ ও সংস্কৃতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রাধান্য দেওয়া হয় ‘সম্প্রীতি ও স্বদেশ’ শিরোনামের এ সাংস্কৃতিক আয়োজনে। অনুষ্ঠানের শুরুতে সরোদে আহির-ভৈরব সুরের আলাপ পরিবেশন করেন শিল্পী রাজরূপা চৌধুরী। এরপর শুরু হয় একক ও দলীয় কণ্ঠের গান। গানের ফাঁকে ফাঁকে চলে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ খ্যাতিমান লেখকদের লেখা থেকে পাঠ।
শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন ইফফাত আরা দেওয়ান, মিতা হক, খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, সুমন মজুমদার, সুমা রানী রায়, মহিউজ্জামান চৌধুরী, লাইসা আহমেদ, শারমিন সাথী ইসলাম, পার্থ সারথী সিকদার, প্রিয়াঙ্কা গোপ, এ টি এম জাহাঙ্গীর, অনিন্দিতা চৌধুরী, সৈকত মুখার্জি প্রমুখ। একক আবৃত্তি করেন মাহিদুল ইসলাম ও ফাহিমা সামাদ।
অনুষ্ঠানে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘আমরা আজ প্রভাতি সুরে প্রকৃতির স্নিগ্ধ শান্তির কথা, মানুষকে ভালোবাসবার কথা বলেছি।’ তিনি বলেন, ‘ধর্মের প্রকৃত শিক্ষা যে হানাহানি নয়, মিলন আর পরস্পর সম্প্রীতি—এ কথা বোঝাবার দায় আমাদের। ভয়ভীতি দেখিয়ে ধর্মীয় মোহের কারাগারে নিরীহ মানুষকে বন্দী করছে যারা, তারা সাধারণ জনের কল্যাণকামী নয়, এ জ্ঞান পৌঁছে দিতে হবে সবার কাছে।’
রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে সন্জীদা খাতুন বলেন, ‘ধর্মের বেশে মোহ এসে ধরে। মোহমুগ্ধতা বিচারবুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ধর্মকথা শোনানো রাজনীতিকরা বস্তুত সাধারণের ঘাড়ে পা রেখে ক্ষমতার আসনে বসতে চায়। গান-পাঠ-কবিতা-নাটক ইত্যাদির সাহায্য নিয়ে মানুষকে সব কথা জানাতে হবে। জ্ঞানপাপী বুদ্ধিদাতাদের কবল থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে হবে।’