Thank you for trying Sticky AMP!!

বদলে গেল গুরুদাসপুর ভূমি অফিসের চিত্র

সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বলছেন এসি ল্যান্ড নাহিদ হাসান। ছবি: প্রথম আলো

একটা সময় দালালদের ভিড়ে টেকা দায় ছিল নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা ভূমি অফিসে। গ্রামের সাধারণ মানুষ এসব দালালের কারণে আর্থিক ক্ষতি ও হয়রানির শিকার হতেন। কিন্তু অনলাইন পদ্ধতিতে ‘ই-নামজারি’ চালু হওয়ায় বদলে গেছে ভূমি অফিসের চিত্র।

জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে ১ হাজার ১১৮টি আবেদনের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৭৪টির। নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ২৪৪টি। এখন আর তদবিরকারী কিংবা দালালের পেছন পেছন দৌড়াতে হয় না সেবাপ্রত্যাশীদের। জমি নিজের নামে নিতে বা খাজনা দিতে ভূমি অফিসে গেলে আগে দালালদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া কোনো কাজই হতো না। পদে পদে তাঁদের টাকা দিতে হতো। এখন অনলাইনে এই সেবা নিতে পারছেন অনেকে। 

উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান বলেন, গেল জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশনার পর থেকে অনলাইন সেবার বিষয়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। সেবাসংক্রান্ত প্রচারপত্র ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিলবোর্ড স্থাপন এবং অনলাইন, ফেসবুকে প্রচারণা চালানো হয়। এ ছাড়া নিয়ম করে গণশুনানির আয়োজন করা হয়। এসব কারণে মানুষ এখন অনলাইনে সেবা নিচ্ছে। সাড়াও মিলছে বেশ।

গত বুধবার এমন এক গণশুনানির আয়োজন করা হয় ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে। সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন কৃষক তাঁদের সুবিধা–অসুবিধার কথা তুলে ধরেন। হাসমারী গ্রামের কৃষক হারেজ আলী ওই গণশুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি এক ফাঁকে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর আট বিঘা জমি আছে। জমির খাজনা খারিজের জন্য কয়েক মাস ধরে ঘুরছিলেন। এক দালালকে ২ হাজার টাকা দিয়েছিলে জুনে। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে আরেক কৃষকের মাধ্যমে ই-সেবার বিষয়টি জানতে পারেন। ভূমি অফিসে এসে সেখানকার কর্মকর্তাদের সাহায্যে অনলাইনে আবেদন করেন। এর তিন সপ্তাহের মধ্যে জমির খাজনা খারিজ নিষ্পত্তি হয়েছে। 

পাঁচপুরুলিয়া গ্রামের রুপালী খাতুন বলেন, ‘নানা ব্যস্ততার কারণে নিজে গিয়ে জমির খাজনা খারিজ করতে পারিনি। দুই ব্যক্তিকে মাস ছয়েক আগে বেশ কিছু টাকা দিয়ে কাজটি করে দেওয়ার দায়িত্ব দিয়েও কাজ হয়নি। পরে এলাকার মোড়ে বিলবোর্ডে ই-নামজারি সংক্রান্ত তথ্য দেখে নিজেই ভূমি অফিসে গিয়ে অনলাইনে আবেদন করেছি। ২০ দিনের মাথায় আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়েছে।’

উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অধিকাংশ কৃষকই স্বল্পশিক্ষিত। তাঁরা অনলাইন বা ই-নামজারির বিষয়টি বোঝেন না। তাই কার্যালয়ে তিনজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁরা এসব কৃষকের অনলাইনে ফরম পূরণসহ সেবা গ্রহণের ব্যাপারে বিনা খরচায় সহযোগিতা করেন। 

সেবাটি চালু হওয়ার পর আবেদনের ২৮ দিনের মধ্যে খাজনা খারিজসহ অন্যান্য সেবার নিষ্পত্তি হচ্ছে। প্রবাসীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৯ কার্যদিবসের মধ্যেই সেবাটি পাচ্ছেন। এ জন্য সরকার–নির্ধারিত ডিসিআর (ডুপলিকেট কার্বন রিসিট) ফি ১ হাজার ১৫০ টাকা, কোর্ট ফি ২০ টাকাসহ ১ হাজার ১৭০ টাকা দিতে হচ্ছে। আগে সনাতন পদ্ধতিতে দেড় মাস সময় লাগত। দালালেরাও গ্রাহকদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো টাকা নিতেন। 

ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন সেবাটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সেবা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে বিনয়ী আচরণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। 

ই-নামজারি সেবাটি পেতে যা করতে হয়
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, সরকারি ফি জমা ছাড়াও দলিলের ফটোকপি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি ও আরএস খতিয়ানের ফটোকপি জমা দিতে হয়। সর্বশেষ ভূমি উন্নয়ন করের (খাজনা) রসিদ জমাসহ আবেদনকারীর মুঠোফোন নম্বর দিতে হয়। ভূমি অফিস ছাড়াও ব্যক্তি উদ্যোগেও ভূমি অফিসের ওয়েবসাইটে (https://minland.gov.bd) গিয়ে গ্রাহক এ সেবা পেতে পারেন।  

অনলাইনে আবেদনের পর গ্রাহকের নামজারি আবেদন সম্পন্ন হয়েছে কি না, তা আবেদনকারীর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। এর বাইরেও আবেদনকারীরা তাঁদের ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সমস্যার সমাধান পেতে সরাসরি ভূমি কর্মকর্তার সঙ্গে নির্ধারিত মুঠোফোনে (০১৭৬২৬৯২১১৭) কথা বলতে পারেন। 

গুরুদাসপুর ইউএনও মো. তমাল হোসেন বলেন, শতভাগ অনলাইন সেবা কার্যক্রমের ফলে ভূমি অফিসের অনিয়ম, দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব এখন আর নেই। গুরুদাসপুর ভূমি অফিসের এ উদ্যোগ অনুকরণীয় হতে পারে।