Thank you for trying Sticky AMP!!

বনভূমির পাশে জায়গা প্রস্তাব

সিলেটের তামাবিল এলাকার বন বিভাগের পাশে কানাইজুড়ির ১৩৩ একরের এই জায়গা স্টোন ক্রাশার জোন করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকেলের দৃশ্য। প্রথম আলো

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তামাবিল এলাকায় ১৩৩ একর জায়গায় ‘স্টোন ক্রাশার জোন’ (পাথর ভাঙার অঞ্চল) করার প্রস্তাব করেছে প্রশাসন। গত সোমবার সিলেটে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) আলোচনা সভায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়। তবে বনভূমির পাশে এই স্থান নির্ধারণ করায় তা ‘স্টোন ক্রাশার জোন স্থাপন নীতিমালার’ সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে শুরুতেই প্রশ্ন উঠেছে।

‘স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন নীতিমালা-২০০৬’–এ বলা হয়েছে, শহর, উপজেলা সদর, পৌরসভা এলাকায় স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা যাবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বসতবাড়ি, প্রধান সড়ক ও মহাসড়কের ৫০০ মিটারের মধ্যে ও কৃষিভূমি বা বন বিভাগের ভূমিতে স্টোন ক্রাশার মেশিন স্থাপন ও পরিচালনা করা যাবে না।

তামাবিলে যে ১৩৩ একর জায়গা পাথর ভাঙার অঞ্চল করার প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল লাগোয়া। বন বিভাগ সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালের গেজেটভুক্ত ২ হাজার ৫০০ একর জায়গা রয়েছে তামাবিলে। এ জায়গার পাশে কানাইজুড়ি নামের এলাকায় প্রস্তাবিত স্থান পড়েছে।

জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রস্তাবিত স্থান নিয়ে বন বিভাগের সঙ্গে উপজেলা প্রশাসনের কোনো আলোচনা হয়নি। বন বিভাগ এ বিষয়ে কিছু জানেও না। জানালে পরে আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারব।’

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জৈন্তাপুরের পাথর কোয়ারি ছাড়াও নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরেই পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। তামাবিল, ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হয় বোল্ডার পাথর। উত্তোলিত ও আমদানি করা এসব পাথর ভাঙার জন্য সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে দেড় সহস্রাধিক পাথর ভাঙার কল। এই কলগুলোর ধুলা ও শব্দ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে করছে বিপর্যস্ত। এসব কল এক জায়গায় নিয়ে একটি জোন স্থাপনে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনা ছিল। তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত সোমবার আলোচনা সভা করে বেলা। ওই সভায় পাথর উত্তোলনে নৈরাজ্য দূর করতে আমদানিনির্ভরতার বিষয়টি তুলে ধরে জেলা প্রশাসন থেকে পাথর ভাঙার অঞ্চল স্থাপন প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।

সীমান্তবর্তী তামাবিল সিলেটের অন্যতম একটি স্থলবন্দর। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোয় যাতায়াতে একটি অভিবাসন কেন্দ্র রয়েছে সেখানে। পাথর, চুনাপাথর, কয়লা আমদানিকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক তৎপরতা তামাবিল এলাকার মূল পরিচিতি। ভবিষ্যতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে শুধু আমদানি শুরু করলে পাথর ভাঙার কলগুলোর অঞ্চল তামাবিলে হওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয় প্রস্তাবে।

২০১৬ সালের দিকে জৈন্তাপুর উপজেলার লাল শাপলার বিল এলাকা নামে পরিচিত ডিবির হাওরের ৯০০ একর জায়গায় স্টোন ক্রাশার জোন করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। এ নিয়ে ২০১৬ সালের ১৩ মার্চ প্রথম আলোয় ‘হাওর হত্যার আয়োজন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ছাপা হলে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর আন্দোলনের মুখে তা বাতিল করা হয়। এবার প্রস্তাবিত স্থানটি তামাবিল এলাকায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনের পাশে হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী বলেন, হাওর ছেড়ে এবার বনভূমির পাশে স্টোন ক্রাশার জোন স্থাপন প্রস্তাবও বন ও পরিবেশের জন্য আত্মঘাতী হবে। এমনিতেই তামাবিল এলাকায় বন বিভাগের জমি বেহাত অবস্থায় আছে। সেখানকার পাশে স্টোন ক্রাশার জোন হলে বনভূমি বিরানভূমিতে রূপ নেবে।

স্টোন ক্রাশারের জন্য প্রস্তাবিত স্থান নির্ধারণকাজে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার পাল গতকাল মঙ্গলবার বলেন, প্রস্তাবিত স্থানটি নিয়ে দুটি মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি স্থানান্তরিত হলে এ নিয়ে পরবর্তী আলোচনা বা পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। পাথর আমদানির ভবিষৎ বিবেচনায় তামাবিলে স্টোন ক্রাশার জোন করার জন্য ১৩৩ একর জায়গা প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে বলেন, এ প্রস্তাব অনুমোদন পর্যায়ে গেলে নীতিমালার বিষয়টি দেখা হবে।