Thank you for trying Sticky AMP!!

বন্ধ থাকার পরও পৌনে তিন লাখ নতুন সংযোগ

গ্যাসের সংযোগ বন্ধ থাকার পরও তিতাস প্রায় পৌনে তিন লাখ গ্রাহককে আবাসিক সংযোগ দিয়েছে। এসব গ্রাহক ব্যাংকে মাসের বিলও জমা দিচ্ছেন।

ঘুষ দিয়ে সংযোগ নিতে চাননি এমন কয়েকজন গ্রাহক প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, টাকা ছাড়া কেউ সংযোগ পাননি।

দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণ প্রতিষ্ঠান তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহে গ্যাস বিতরণ করে।

গ্যাস–সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারা দেশে নতুন আবাসিক গ্যাস–সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। তবে ২০১৩ সালের শেষ দিকে সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস–সংযোগ না দিতে বলা হয়। এরপরও বিভিন্ন সময় তিতাস গ্যাস–সংযোগ দিয়েছে। ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিতাসের বোর্ড সভা এমন সাত লাখ গ্রাহককে বৈধ করেছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তিতাসসহ সব কটি গ্যাস বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানকে আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজির নতুন সংযোগ না দিতে বলে জ্বালানি বিভাগ।

নতুন সংযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের বোর্ড সভার পরিচালক খান মঈনুল ইসলাম মোস্তাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবাসিকে সংযোগ বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালের প্রথম দিকে তিতাসের বোর্ড সভা সাত  লাখ গ্রাহকের সংযোগ বৈধ করেছিল। এটি একবারই হয়েছে। এরপর আর বোর্ডে আবাসিক সংযোগ বৈধ করার বিষয় আসেনি। ফলে এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।’

গত ডিসেম্বরে প্রকাশিত তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮–১৯ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক ছিল ২৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৯, যা ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে ছিল ১৮ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৩। অর্থাৎ চার বছরে সংযোগ বেড়েছে ৯ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬। এর মধ্যে ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সাত লাখ সংযোগ বৈধ করা হয়। এর বাইরে ২ লাখ ৬৬ হাজার সংযোগ রয়েছে বলে তিতাস সূত্র জানিয়েছে। 

>২০১৮ সালে তিতাসের বোর্ড সভা ৭ লাখ গ্রাহককে বৈধ করে। এখনো অনুমোদন পায়নি ২ লাখ ৬৬ হাজার গ্রাহক।

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন নিজের বাড়ির জন্য নতুন গ্যাস সংযোগের আবেদন করেছিলেন। এরপর তিতাসের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর ডিমান্ড নোট জমা দেন তিনি। নতুন সংযোগ পেতে তিতাসের কর্মকর্তারা তিন লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন অভিযোগ করে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঘুষ না দেওয়ায় গ্যাসের সংযোগ মেলেনি। প্রতিকার চেয়ে তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) দুই দফা লিখিত আবেদন করেন। বিইআরসি জবাবে জানিয়েছে, ‘নতুন সংযোগ দিলে তখন এই সংযোগটিও দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি গত ডিসেম্বরে এখানে এসেছি। এসব ঘটনা ঘটেছে তার আগে। এখন কোনো গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। 

রাজধানীর দুটি আবাসন খাতের ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘুষ দিলে সংযোগের আবেদনটি পেছনের তারিখে দেখিয়ে (ব্যাক ডেট) কাগজপত্র তৈরি করে দেন তিতাসের কর্মকর্তারা। 

তিতাসের কর্মকর্তা এবং যাঁরা ঘুষ দিয়েছেন, এমন অন্তত পাঁচজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিটি নতুন আবাসিক সংযোগে এক থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। 

তিতাসের ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোতে ‘তিতাসে “কেজি মেপে” ঘুষ লেনদেন’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রতিবেদনেও দুর্নীতির বিষয়টি উঠে এসেছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, ‘তিতাসে ঘুষ ছাড়া সংযোগ পাওয়া যায় না। ঘুষ দিলে গ্যাস–সংযোগ বন্ধ আছে নাকি খোলা আছে, সেটা ব্যাপার না, সংযোগ লেগে যাবে। এ বিষয়ে বারবার অভিযোগ করে আমরা ক্লান্ত।’