Thank you for trying Sticky AMP!!

বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে পিপিই নেই, ঝুঁকিতে স্বাস্থ্যকর্মীরা

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর বরিশাল বিভাগের স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ বিভিন্ন উপসর্গের রোগী চাপ বেড়েছে। কিন্তু সেবাপ্রদানকারী অধিকাংশ কর্মীর কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) নেই। পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ না করায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন এসব কর্মী।

বরিশাল, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি ও বরগুনার অন্তত ১৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। কেবল পটুয়াখালীর চৈতা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ছাড়া কেউই পিপিই পাননি। এ ছাড়া নয়টি কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীর (সিএইচসিপি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা কেউই এখন পর্যন্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য পিপিই পাননি।

এসব কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর দলে দলে মানুষ গ্রামে ফিরেছেন। উপজেলা, জেলা ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে নানা ধরনের ঝামেলার আশঙ্কা থাকে। তাই এখন গ্রামে বসবাসকারী মানুষের পাশাপাশি গ্রামে ফেরা মানুষজন জ্বর, সর্দি, কাশির সমস্যায় পড়লে দ্বারস্থ হচ্ছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কিংবা কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে।

বরিশাল নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাফুলিয়ো এলাকার আশরাফুল ইসলাম ঢাকার একটি পোশাক কারখানার কর্মী। দেশে করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতেই বরিশাল নিজ বাড়িতে চলে এসেছেন। কয়েক দিন বাদে হালকা জ্বরে আক্রান্ত হলে চিন্তিত হয়ে পড়েন। তিনি শুনেছেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা হাসপাতালগুলোতে জ্বরের চিকিৎসা নাকি আপাতত বন্ধ। চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারগুলোতে জ্বরের রোগী দেখছেন না কেউ। শেষ পর্যন্ত তিনি বাড়ির পাশের কমিউনিটি ক্লিনিকে যান। সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মী (সিএইচসিপি) করোনা প্রতিরোধক নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই তাঁকে চিকিৎসা দিয়েছেন। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে পাওয়া চিকিৎসাতেই আশরাফুল সুস্থ হয়েছেন।

আশরাফুলের চিকিৎসা দেওয়া স্বাস্থ্য কর্মী ইয়াছির আরাফাত বলেন, মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকলেও পিপিই, গ্লাভস কিংবা মাস্ক কিছুই হাতে পাননি তাঁরা। ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত রোগী দেখতে হচ্ছে। মৌসুম পরিবর্তনের কারণে আগত রোগীদের বেশির ভাগই জ্বরে আক্রান্ত। এখন এদের মধ্যে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, তা আগেভাগে বোঝার উপায় নেই। তবুও এমন রোগীতে সেবা দিতে হচ্ছে তাঁদের। ফলে চিকিৎসা দিতে গিয়ে নিজের এবং অন্যের মধ্যে করোনার বিস্তার ঘটার আশঙ্কা থাকছেই।

একইভাবে প্রতিটি এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোনো ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা ছাড়াই প্রতিদিন তৃণমূল পর্যায়ে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। সিএইচসিপি বরিশাল জেলা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সরফরাজ চৌধুরী বলেন, করোনাভাইরাসে আতঙ্কে লোকজন এখন সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে যান না। এ জন্য তৃণমূল এলাকার লোকজন তাঁদের কাছেই ভিড় করছেন। আগে গড়ে প্রতিদিন একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০-৪০ জন রোগী পাওয়া যেত; এখন আসছে তার দ্বিগুণ। কিন্তু কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে এখন পর্যন্ত পিপিই বা সুরক্ষার অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয়নি।

বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ৩৫২টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং প্রায় এক হাজার ১০০ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের সুরক্ষার উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের বরিশাল বিভাগীয় সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের এসব স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত এসব কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আমরা অবগত। তবে আমাদের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হচ্ছে, যেসব চিকিৎসক করোনা ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকবেন তাঁদের জন্য পিপিই সরবরাহ করা। ধীরে ধীরে সবাই যাতে পিপিই পান, সে জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’