Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশে প্রতিরোধের ডাক আল-কায়েদার

জিহাদোলজি ডটনেট থেকে নেওয়া ছবি

বাংলাদেশে ‘ইসলামবিরোধী’দের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলনের (ইন্তিফাদা) ডাক দিয়েছেন আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি। একটি কথিত ভিডিও বার্তার মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি এ আহ্বান জানান তিনি।
‘বাংলাদেশ: ম্যাসাকার বিহাইন্ড এ ওয়াল অব সাইলেন্স’ শীর্ষক এ ভিডিও বার্তার ব্যাপ্তি প্রায় ২৯ মিনিট। বার্তার শুরুতে ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের ওপর হামলার স্থিরচিত্র দেখানো হয়।
আল-জাওয়াহিরি তাঁর বক্তব্যে সরাসরি হেফাজতে ইসলাম বা জামায়াতে ইসলামীর নাম উচ্চারণ করেননি। তবে বার্তাটির শুরুতে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের স্থিরচিত্র দেখানো হয়। আর বক্তৃতার একটি অংশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। আল-কায়েদার প্রধান বাংলাদেশ সরকারকে ‘ইসলামবিরোধী’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
গতকাল শনিবার ইউটিউব, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে আল-জাওয়াহিরির বক্তব্যটি নজরে আসে। তবে বাংলাদেশে এ বার্তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আল-কায়েদার প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত আস্-সাহাব মিডিয়া ফাউন্ডেশন গত নভেম্বরে বার্তাটি তৈরি করেছে। আস্-সাহাবের ওয়েবসাইটে এটি অবশ্য নেই। বিভিন্ন ব্লগে আল-জাওয়াহিরির পুরো বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। আর ভিডিও বার্তাটি রয়েছে জিহাদোলজি ডটনেট নামের একটি ওয়েবসাইটে।
ভিডিও বার্তায় দেখা গেছে, আরবিতে জাওয়াহিরি বক্তব্য দিচ্ছেন। আর নেপথ্যে তাঁর স্থিরচিত্র। পর্দার নিচে ভেসে উঠছে বক্তব্যের ইংরেজি অনুবাদ।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা জেমসটাউন ফাউন্ডেশনের নিয়মিত প্রকাশনা টেররিজম মনিটর-এর ২৪ জানুয়ারির সংখ্যায় আল-জাওয়াহিরির এই বক্তৃতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কবে, কোথায় বার্তাটি প্রচার করা হয়েছে, সেটি বলা হয়নি।
ভিডিও বার্তাটি সঠিক কি না—এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি, দু-এক দিনের মধ্যে আমরা সঠিক তথ্য পাব।’
এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বিবিসিকে বলেন, ‘বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হতে দেওয়া হবে না। আমরা এ ব্যাপারে সব সময় সচেষ্ট ও সক্রিয় আছি।’ সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার পর এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান তিনি।
সরকারের নীতিনির্ধারকেরা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই নির্বাচনবিরোধী পক্ষ দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্র করে আসছে। এটাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ কি না, তা দেখা হচ্ছে। তবে সরকার সব সময়ই এ বিষয়ে সজাগ এবং সতর্ক। এরই মধ্যে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সরকার কঠোর ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশের মুসলমানদের উদ্দেশে দ্বিতীয়বারের মতো বক্তব্য দিলেন আল-কায়েদার প্রধান আয়মান আল-জাওয়াহিরি। এর আগে গত বছর টুইন টাওয়ারে হামলার (৯/১১) এক যুগপূর্তিতে বক্তৃতাকালে তিনি বাংলাদেশ প্রসঙ্গ তোলেন।
আল-জাওয়াহিরি তাঁর সর্বশেষ বক্তৃতায় বলেন, ‘বাংলাদেশে ইসলামের বিরুদ্ধে যারা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। উপমহাদেশ ও পশ্চিমের শীর্ষ অপরাধীরা ইসলাম, ইসলামের নবী ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে, যাতে করে আপনাদের তারা অবিশ্বাসীদের দাসে পরিণত করতে পারে।’
বার্তায় তিনি উল্লেখ করেন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ভারতীয় উপমহাদেশসহ এ অঞ্চলে ইসলামের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক আক্রমণের অংশ। নৃশংস এসব হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে নীরব থাকায় তিনি পশ্চিমা গণমাধ্যমের সমালোচনা করেছেন।
আল-কায়েদার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ আজ এমন এক ষড়যন্ত্রের শিকার, যাতে ভারতীয় দালাল, পাকিস্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত সেনা নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের ক্ষমতালোভী, বিশ্বাসঘাতক রাজনীতিবিদেরাও জড়িত। উপমহাদেশ, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মুসলিম উম্মাহ এ ষড়যন্ত্রের মূল শিকার।
জাওয়াহিরি অভিযোগ করেন, উপমহাদেশের মুসলমান রক্ষার নামে ৬০ বছর আগে পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও দেশটিতে শরিয়ার কোনো স্থান নেই। ৪০ বছর আগে জনগণের মুক্তির দাবিতে স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশ আজ পরিণত হয়েছে কারাগারে। যেখানে মুসলমানদের সম্মান ও পবিত্র স্থান অপবিত্র করা হচ্ছে।
তাঁর মতে, ‘ইসলামবিরোধিতার’ জায়গায় ‘স্বার্থ’ এক হওয়ায় এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পাচ্ছে।
সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে আল-জাওয়াহিরি বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজপথে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। তাদের অপরাধ ছিল একটাই, ইসলামবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ সরকারের সঙ্গে কতিপয় বিপথগামী নাস্তিক্যবাদীর যোগসাজশের প্রতিবাদে তারা রাস্তায় নেমেছিল।’
নাম উল্লেখ না করে জামায়াতে ইসলামী নেতাদের প্রসঙ্গ টেনে আল-জাওয়াহিরি বলেন, ‘শত শত আলেমকে কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। তাঁদের জেলে আটক রাখা হয়েছে, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। কোনো অপরাধ না থাকার পরও তাঁদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। ইসলামবিরোধীদের বিরোধিতা করাই ছিল তাঁদের একমাত্র অপরাধ।’
ইসলামের ‘সত্যিকারের আলেমদের’ কাছে জড়ো হয়ে তাদের সমর্থন ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি বাংলাদেশের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান। আর উলামায়ে কেরামদের ওপর ইসলাম ‘যে দায়িত্ব দিয়েছে’ তা পালনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। আল-জাওয়াহিরি বলেন, ‘আমি আপনাদের ইন্তিফাদা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক অবদুর রব খান গতকাল রাতে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আল-কায়েদা একটি হাই লেভেলের সংগঠন, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলে। যেখানে তাদের কার্যক্রম চলছে, সেখান নিয়ে কথা বলেছে আগে। আমাদের কাছে বিষয়টি বিস্ময়কর লাগল, এই প্রথম বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে।’
অডিও বার্তায় হেফাজতে ইসলামের ওপর হামলার স্থিরচিত্র প্রদর্শন প্রসঙ্গে আবদুর রব খান বলেন, ‘বক্তব্য বেশি সাধারণীকরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে কোন পরিস্থিতিতে গত কয়েক মাসে ঘটনাগুলো ঘটেছে এবং হেফাজত ও জামায়াত বিষয়ে তাদের ধারণা পরিষ্কার নয়। অনেকটাই সরলীকরণ করেছে তারা।’
এদিকে হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে গতকাল রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আল-কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির নামে প্রচারিত অডিও বার্তার সঙ্গে সংগঠনটির কোনো সম্পর্ক নেই।