Thank you for trying Sticky AMP!!

বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সংলাপে প্রত্যর্পণ চুক্তি গুরুত্ব পাবে

>
  • তৃতীয় কৌশলগত সংলাপে বসছে দুই দেশ
  • রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দুই দেশের বৈঠক
  • শহীদুল হক বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন
  • যুক্তরাজ্যের নেতৃত্ব দেবেন ম্যাকডোনাল্ড

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সরকার গত বছর থেকে জোরের সঙ্গেই বলে আসছে। বিশেষ করে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় এ নিয়ে সরকার চাইলেও তাঁকে ফেরত আনা যাচ্ছে না। এই প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার ঢাকায় দুই দেশের তৃতীয় অংশীদারত্ব সংলাপে প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়টি গুরুত্ব পাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে প্রথম আলোকে জানান, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় কৌশলগত সংলাপের সময় দুই দেশ পারস্পরিক আইনি সহায়তা ও আসামি প্রত্যর্পণের বিষয়ে সহযোগিতায় রাজি হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসবে।

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের এবং যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সায়মন ম্যাকডোনাল্ড তাঁর দেশের নেতৃত্ব দেবেন।

অবশ্য যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পারমানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সায়মন ম্যাকডোনাল্ড গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘কৌশলগত সংলাপে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এ বিষয়ও আলোচনায় আসবে। দুই দেশের মাঝে কোনো প্রত্যর্পণ চুক্তি নেই। আর দুই দেশেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির ক্ষেত্রে মামলা রয়েছে। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করব না।’

তৃতীয় অংশীদারত্ব সংলাপ সামনে রেখে তিনি এদিন সন্ধ্যায় ঢাকায় যুক্তরাজ্য হাইকমিশনারের বাসায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলেন।

অবশ্য যুক্তরাজ্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ বিবেচনার আশ্বাস দিলেও এতে যে জটিলতা আছে, সেটিও উল্লেখ করেছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মাইক ফিল্ড প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের অনুরোধ বিবেচনায় নেবে যুক্তরাজ্য। তবে বিষয়টি যুক্তরাজ্যের আদালত আর পুলিশের এখতিয়ার হওয়ায় এতে কিছুটা জটিলতাও আছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গত রোববার এই প্রতিবেদককে জানান জানান, ২০১৭ সালের মার্চে ঢাকায় প্রথম সংলাপের পর থেকে নিয়মিতভাবেই এক বছরের মধ্যে তৃতীয় সংলাপটি হচ্ছে। এতে স্পষ্ট যে বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপে যুক্তরাজ্যের বিশেষ মনোযোগ আছে। ভূরাজনৈতিক অবস্থানসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্ককে গভীর থেকে গভীরতর করতে যুক্তরাজ্যের আগ্রহ আছে। আগ্রহী বাংলাদেশও। এবারের আলোচনায় রাজনৈতিক সম্পর্ক নিবিড় করা, রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়ানো এবং শিক্ষা খাতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দুই দেশের সহযোগিতা কীভাবে বাড়ানো যায়, এ বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে।

এদিকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সংলাপে রোহিঙ্গা সমস্যার পাশাপাশি সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রবাদ দমন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কের সম্প্রসারণ, সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র, আঞ্চলিক সংযুক্তি ও স্থিতিশীলতার মতো পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।

তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, আসামি প্রত্যর্পণের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের আদলে পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা চুক্তি (এমএলএটি) সই করার কথা বিবেচনা করছে বাংলাদেশ। লন্ডনে কৌশলগত সংলাপে বিষয়টি তুলেছিল বাংলাদেশ।

কৌশলগত সংলাপের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে সায়মন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ‘কৌশলগত সংলাপে অন্তত ১৬টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। দুই দেশের সম্পর্ককে যুক্তরাজ্য যে ঘনিষ্ঠ থেকে আরও ঘনিষ্ঠতর করতে চায়, দুই বছর আগে এই ফোরাম গঠনের মধ্য দিয়ে তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কানাডা ও ইসরায়েলের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কৌশলগত সংলাপে আমি নেতৃত্ব দিয়ে আসছি।’

তিনি জানান, যুক্তরাজ্য এখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যায়নি। ফলে ব্রেক্সিটের প্রক্রিয়া শেষেও বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাজ্যের বিশেষ বাণিজ্য অংশীদার থাকে, সেখানে গুরুত্ব আছে। তাই এ মুহূর্তে বাংলাদেশের দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকে থাকা বাণিজ্যে ভারসাম্য আনতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বিশেষ মনোযোগ আছে যুক্তরাজ্যের।