Thank you for trying Sticky AMP!!

বাইক্কা বিলের ডুংকর

বাচ্চাকে খাওয়াচ্ছে একটি ডুংকর l ছবি: লেখক

সাপপাখির ছবি তোলার অভিযান শেষ করে ক্যামেরা কাঁধে বাইক্কা বিল থেকে ফিরছি। রোদেলা বিকেল। পুকুরপাড় ধরে সন্তর্পণে এগিয়ে চলেছি। আধ ঘণ্টায় বেশ কয়েকটি ডুবালুর দেখা পেলাম। দুটি ডুবালুর চমৎকার ছবি তুললাম বেশ কাছ থেকে। হঠাৎ ১৯ বছর আগে বাগেরহাটের উত্তুরের হাওরের বিল কোদালিয়ায় দেখা এক পাখির সন্ধান পেয়ে গেলাম। পুকুরের সোনা আভা নীল জলে ওরা দুটিতে যেন রেস খেলায় মত্ত। ইতিপূর্বে ওদের বেশ কিছু ছবি তুললেও এ রকম খোলামেলা পানিতে তেমন একটা দেখিনি।

এরা হলো এ দেশের আবাসিক পাখি জলমুরগি বাডাকাব পায়রা। বৃহত্তর খুলনায় ডুংকর নামে পরিচিত। বিল কোদালিয়ার যখন প্রথম দেখি সেখানকার লোকজন এ নামই বলেছিল। নামটির মধ্যে কেমন যেন একটা বিদেশি গন্ধ পেয়েছিলাম। অবশ্য ভারতের কোথাও কোথাও ওরা ডমকুর নামে পরিচিত। সেখান থেকে এ নাম এসেছে কি না, বলতে পারব না। তবে কোদালিয়া বিলের কিনারায় ভূমিতে যে কাঁটাওয়ালা বৈচিগাছ রয়েছে সেগুলোকে স্থানীয়রা ডুংকর নামে চেনে। শুনেছি এই পাখি ডুংকর গাছের ঘন ঝোপেও বাসা বাঁধে। এ কারণেও পাখিটির নাম ডুংকর হয়ে থাকতে পারে। ডুংকরের ইংরেজি নাম Common Moorhen, Moorhen বা Indian Moorhen। Rallidaeপরিবারের জলজ পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম gallinula chloropus.

ডুংকর ডাহুক আকারের পাখি। ঠোঁটের আগা থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৩২-৩৬ সেন্টিমিটার, ওজন ২০০-৩৪০ গ্রাম। পিঠ জলপাই-বাদামি। মাথা, চিবুক, ডানা ও বুক কালচে, তাতে ধূসরের আভা। ডানায় কিছু সাদা দাগ রয়েছে। লেজের তলা সাদা। প্রজনন মৌসুমে ঠোঁটের রং হয় কমলা লাল, আগাটা থাকে হলুদ। পা ও আঙুল ধূসরাভ সবুজ হয়ে যায়। অন্য সময় ঠোঁট ফ্যাকাশে হলুদ এবং পা ও আঙুল অনুজ্জ্বল হয়। অপ্রাপ্তবয়ষ্ক পাখির প্রায় পুরো দেহ বাদামি এবং বুক ও বগলে ধূসর আভা থাকে। পেট সাদাটে। ঠোঁট অনুজ্জ্বল সবুজ। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো কালচে।

সারা দেশের হাওর, বিল, পুকুর, বাদা ও জলজ উদ্ভিদসমৃদ্ধ জলাশয়ে এদের দেখা যায়। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট দলে বিচরণ করে। এরা ভালো সাঁতারু, পানিতে ডুবে থাকতেও ওস্তাদ। সাঁতার কেটে বা ভাসমান জলজ উদ্ভিদের ওপর হেঁটে হেঁটে ফল, বীজ, কীটপতঙ্গ, শামুক-গুগলি, ব্যাঙ, ছোট মাছ ইত্যাদি খায়। সাঁতার কাটা ও হাঁটার সময় মাথাটা চমৎকারভাবে আগে-পিছে দোলায়। ডাহুকের মতো সারাক্ষণই ছোট্ট লেজটি নাড়াতে থাকে। সচরাচর থেমে থেমে নীচু স্বরে ব্যাঙের মতো ‘ক্রুক-ক্রুক-ক্রুক’ শব্দে ডাকে। তবে প্রজননকালে দিনে-রাতে ডাকতে থাকে।

মে থেকে সেপ্টেস্বর প্রজননকাল। এ সময় জলার কিনারের ঘন ঝোপালো গাছে বা জুতসই নলখাগড়ার ওপর লতাপাতা, শিকড় ইত্যাদি দিয়ে বড় আকারের বাসা বানায়। ডিম পাড়ে ৩-৬টি স্ত্রী-পুরুষ দুজনেই পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফোটে ১৯-২২ দিনে। সদ্য ফোটা বাচ্চাগুলো সচরাচর মায়ের সঙ্গেই ঘোরে। বাচ্চারা ৩০-৩৩ দিনে বড় হয় ও উড়তে শেখে।