Thank you for trying Sticky AMP!!

বাগেরহাটে দুটি মন্দিরে আগুন, প্রতিমা ভাঙচুর, আটক ৩

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের হিন্দু-অধ্যুষিত উত্তর কচুবুনিয়া গ্রামে গতকাল বুধবার গভীর রাতে দুটি মন্দিরে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তরা একটি মন্দিরের রাধা-গোবিন্দ প্রতিমা ভাঙচুর করে। এ ঘটনার পর এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ওই গ্রাম থেকে আবদুল হালিম শেখ, আসাহাক হাওলাদার ও মিন্টু শেখ নামের তিনজনকে আটক করেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মন্দির দুটি হলো উত্তর কচুবুনিয়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দির ও কামলা জিলবুনিয়া সার্বজনীন কালীমন্দির।

জামায়াতে ইসলামীর নেতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর এলাকা পিরোজপুর জেলা সীমান্তে অবস্থিত এ এলাকাটি বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) সংসদীয় আসনের অংশ এবং প্রশাসনের স্পর্শকাতর তালিকায় রয়েছে। ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী মো. মোজাম্মেল হোসেন বিজয়ী হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, রাধা-গোবিন্দ মন্দিরে রাধা-গোবিন্দের যুগল মূর্তি ভাঙা অবস্থায় উপুড় হয়ে পড়ে আছে। পাকা ওই মন্দির কক্ষের বাইরে লাগোয়া টিন ও কাঠের একটি ঘর আগুনে সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ঘটনাস্থল থেকে গ্রামবাসী কোরোসিন রাখার একটি প্লাস্টিকের বোতল উদ্ধার করেছে।

মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ হালদার জানান, আগে এই ঘরটিই ছিল মূল মন্দির। বর্তমান পাকা ঘর নির্মাণের পর থেকে এ ঘরটি মন্দিরের বিভিন্ন মালামাল রাখার জন্য ব্যবহূত হতো।

উত্তর কচুবুনিয়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী রাধা-গোবিন্দ মন্দিরে জমিদাতা এবং ওই মন্দিরের পাশের বাসিন্দা সুনীল বিশ্বাস ও সেবিকা মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, রাত দেড়টার দিকে মন্দিরে আগুন লাগার শব্দ পেয়ে তাঁরা ঘরের বাইরে বের হন। এ সময় তাঁরা দূর থেকে মন্দির এলাকায় অন্তত চার-পাঁচজন সন্দেহভাজন লোককে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখেছেন। তবে ওই লোকদের তাঁরা চিনতে পারেননি।

কামলা জিলবুনিয়া সার্বজনীন কালীমন্দিরের মূল ঘরের ভেতরে খড়কুটার একটি ছোট গাদায় আগুন ধরানো হয়েছিল। এখানে মন্দির গৃহ বা প্রতিমার কোনো ক্ষতি হয়নি।

ওই মন্দির ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুখরঞ্জন শিকদার বলেন, রাতে তাঁরা আগুনের বিষয়টি টের পাননি। ভোরে মন্দিরে আসা পুণ্যার্থীরা মন্দিরের ভেতরে নিভে যাওয়া খড়কুটো দেখতে পান। এরপর আগুন লাগানোর চেষ্টার খবর ছড়িয়ে পড়ে।

রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় প্রায় ৩০০ হিন্দু পরিবারের বসবাস। ভোটের পর সারা দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটলেও বাগেরহাটে এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটল। এলাকায় সব ধর্মের মানুষের দীর্ঘদিনের সম্প্রীতি ও সহাবস্থানকে বিঘ্নিত করতে কোনো সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এই কাজ করেছে।’ তিনি এলাকার মানুষের নিরাপত্তা প্রদান ও সুযোগ সন্ধানীদের খুঁজে বের করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হায়াতুল আসলাম খান বলেন, এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন বিএনপির তিন কর্মীকে এলাকা থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।