Thank you for trying Sticky AMP!!

বাঙালি আনন্দে-দুঃখে কেন গ্রামে ফিরে যায়

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্প সমাপ্তিতে বাংলা ১৩০০ সনে লিখেছিলেন ‘অপূর্ব কৃষ্ণ বি. এ পাশ করিয়া কলিকাতা হইতে দেশে ফিরিয়া আসিতেছেন’। এই দেশ মানে তার নিজ এলাকা, গ্রামে। এখন ১৪২৬ বাংলা। এখনো ঢাকা বাসী গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু সেটা কোনো সুসংবাদ বা আনন্দের ভাগাভাগি করতে না, ভয়ে ত্রাসে। করোনার ভয়ে। তারা ভাবছে গ্রামে গেলে হয়তো তারা একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারবেন। জনকোলাহল এড়িয়ে, নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের স্বাদ পাবেন।

আমাদের বাঙালি স্বত্তাটা হাজারো বছর ধরেই এই নিয়মে বিশ্বাসী। সবচেয়ে সুখের মুহূর্তটা গ্রামে পরিবার পরিজনকে নিয়ে পাড়ি দাও, আবার সবচেয়ে কষ্টের মুহূর্তটা গ্রামে সবাই মিলে কাটাও। ঈদে আমাদের ব্যস্ত শহরগুলো ফাঁকা হয়ে যায়, পূজায় মানুষ গ্রামে ছোটে, গরমের ছুটিতে মানুষ গ্রামে যায় টাটকা ফলের স্বাদ নিতে। মুদ্রার অপর দিকে আবার আমরা দেখি বস্তিতে আগুন লাগলে বস্তিবাসীর অনেকেই গ্রামে চলে গিয়ে নতুন ঠাঁই খোঁজেন, কারোর মৃত্যু হলে সেই লাশের দাফন কাফন বেশির ভাগই হয় গ্রামে গিয়ে, এখন নতুন আতঙ্কে আবার মানুষ গ্রাম মুখী হচ্ছে।

গ্রাম যেন আমাদের কাছে মায়ের মতন। ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়া না পেরে মার খেতাম মায়ের কাছে এসে নালিশ করতাম, আবার যখন রেজাল্ট ভালো করার আনন্দে বাড়ি ফিরতাম সবার আগে কোনো যেন সেই খবর মায়ের কাছেই বলতাম। বাড়িতে এসে কোনো কারণে মা'কে না পেলে বাবার সঙ্গে প্রথম কথা হতো, ‘মা কোথায়?’

ঈদের সময় বিভিন্ন সংবাদকর্মী ‘ঘরমুখো’ মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়। আমরা খবরের কাগজে ঘরমুখো মানুষের কথা পড়ি, টেলিভিশনে তাদের হাসি খুশি মুখ দেখি, কথা শুনি। তারা বলে, ‘দেশে যাচ্ছি, সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেব, দেশের বাড়িতেই আসল আনন্দ।’ তারা যখন ক্যামেরার সামনে কথা বলে, কী তৃপ্ত তাদের মুখ, এক নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাবোধের বিশ্বস্ততা তাদের চোখ থেকে ঠিকরে পড়ে। গত কয়েক দিন ধরে যখন টেলিভিশনে, খবরের কাগজে ঘরমুখো মানুষের কথা শুনছি-পড়ছি-তাদের মুখে হাসি নেই, চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। তবুও একটা জায়গায় যেন পরম মিল। তারা সবাই দেশের বাড়ি যাচ্ছেন। কষ্টের ভাগাভাগি যেন পরিচিত মানুষের সান্নিধ্যে হয়, এটুকু আশা নিয়েই তারা রওনা হয়েছে চিরচেনা পথে।

ওপরে যাদের ঘটনা বলা হয়েছে সবই এ দেশের মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তের চিত্ত। উচ্চবিত্তদের দেশ মানে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, লন্ডন। তারা ছুটি পেলে সেসব দেশে ছুটে যান, অসুস্থ হলেও সেসব দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তাদের সন্তানরা সেসব দেশেই শিক্ষিত হয়। তবে করোনা যেন উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সবাইকে এক সারিতে নিয়ে এসেছে। এখন সবাই দেশ দেশ করছে। সবাই দেশে ফিরে আসছেন। দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করতে জোর তাগাদা দিচ্ছেন। এই তাগাদা যেন করোনা পরবর্তী সময়েও এই দেশে থাকে সেই আশা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের। এ দেশের মাটিতে আনন্দ-দুঃখ ভাগাভাগি করার মতো তৃপ্তি আর যে কোথাও নেই: এই দেশের মাটিতে মৃত্যুই যেন ধনী-গরিব সকলের পরম পাওয়া হয়।

*লেখক: ডিপার্টমেন্ট অফ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা