Thank you for trying Sticky AMP!!

বাণিজ্য বাড়াতে সংযুক্তিতে অগ্রাধিকার দুই দেশের

সড়ক ও রেলপথে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে পাঁচটি রুটে সংযুক্তির বিষয়গুলো তুলবে বাংলাদেশ।

  • বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর, স্বাধীনতা সড়ক, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালুসহ আট প্রকল্পের উদ্বোধন হবে।

  • সই হতে পারে দুর্যোগে সহায়তাসহ ছয়টি সমঝোতা স্মারক।

সড়ক, রেল ও নৌপথের পাশাপাশি সামুদ্রিক যোগাযোগের মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তাই প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে সংযুক্তিতে বিশেষ জোর দিতে চায় দেশটি। নানা পথে সংযুক্তি বাড়লে বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যও। এমন এক প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন বৈঠকে সংযুক্তি আর ব্যবসায় বিশেষ জোর দেবে বাংলাদেশ।

একই সময়ে ভারতও মনে করছে, দুই নিকট প্রতিবেশীর কার্যকর সংযুক্তির ওপর নির্ভর করছে সম্পর্কের ভবিষ্যৎ।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ঢাকায় ২৭ মার্চ অনুষ্ঠেয় দুই শীর্ষ নেতার আলোচনায় সংযুক্তি, ব্যবসার পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনার মতো বিষয়গুলোও প্রাধান্য পাবে।

কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ ছবিটা আঁকার সময় দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যা সুরাহায় রাজনৈতিক সদিচ্ছার পরিচয় দিতে হবে। যাতে মানুষের কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় যে উদ্যোগগুলো দুই পক্ষের জনগণের কল্যাণে নেওয়া হচ্ছে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় সংযুক্তি কতটা গুরুত্ব পাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন রোববার বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, অন্য কয়েকটি বিষয়ের পাশাপাশি সংযুক্তির বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে গুরুত্ব পাবে।

দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশ সংযুক্তিতে বিশেষ জোর দেবে। আর এই সংযুক্তি দুই দেশের মধ্যে সীমিত না রেখে নানা পথে নেপাল ও ভুটানকে যুক্ত রাখার বিষয়টিও বাংলাদেশ তুলবে। নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে জনগণ ও পণ্যের অবাধ চলাচল নিশ্চিতে বিশেষ গুরুত্ব থাকবে।

অন্য এক কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের আলোচনায় পানিসম্পদ বণ্টনের বিষয়টিও যথারীতি গুরুত্ব পাবে। এবারের সফরে তিস্তা নিয়ে কোনো অগ্রগতি হবে না, সেটা আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে। তারপরও বাংলাদেশ বিষয়টি আলোচনায় তুলবে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যসভা নির্বাচনের পর ভারত যাতে চুক্তি সইয়ের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়, সেই অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ।

সংযুক্তির যেখানটায় গুরুত্ব

কূটনৈতিক সূত্রগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ সড়ক, রেল, নৌ আর সমুদ্রপথে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সংযুক্তির উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছে। তাই বাংলাদেশ দুই দেশের বিদ্যমান নৌ প্রটোকলের আওতায় নেপালকে এ দেশের নৌপথ ও ভূখণ্ড ব্যবহার করে পণ্য পরিবহন করতে দিতে চায়। এর পাশাপাশি ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানে পণ্য পরিবহন করতে চায়। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ এর মধ্যেই ভারতকে সড়ক ও রেলপথে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে সংযুক্তির জন্য পাঁচটি রুটে পণ্যবাহী যান চলাচলের অনুরোধ জানিয়েছে। ঢাকার বৈঠকে বিষয়টি তুলে তা দ্রুত বাস্তবায়নের অনুরোধ জানাবে বাংলাদেশ। সড়কপথে নেপালের জন্য মেছিনগর, বিরাটনগর, বীরগঞ্জ ও রেলপথে রোহানপুর-সিংহাবাদে অনুমতির অনুরোধ জানিয়েছে। আর ভুটানের সঙ্গে রেলপথে চিলাহাটি-হলদিবাড়ীতে যুক্ত হতে অনুমতির অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভারতের অগ্রাধিকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরকারের এক কর্মকর্তা জানান, ভারত বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে সংযুক্তিতে ইদানীং জোর দিচ্ছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মাসের শুরুতে ঢাকায় এসে বঙ্গোপসাগরের সংযুক্তির উদ্যোগে জাপানের মতো বন্ধুদেশগুলোর যুক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ফলে এটা বলাই বাহুল্য যে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের পাশাপাশি সমুদ্রপথে ভারত নিজের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযুক্তির বিষয়টি তুলবে।

উদ্বোধন হবে যে প্রকল্পগুলো

দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীদের আলোচনার পর এখন পর্যন্ত আটটি প্রকল্প উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু-বাপু ডিজিটাল জাদুঘর, শিলাইদহের সংস্কারকৃত কুঠিবাড়ি, মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া হয়ে কলকাতা পর্যন্ত স্বাধীনতা সড়ক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি সমাধি, বাংলাদেশের কাছে ভারতের ১০৯টি অ্যাম্বুলেন্স হস্তান্তর, চিলাহাটি-হলদিবাড়ী রুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু, দুটি সীমান্ত হাট চালু এবং স্মারক ডাকটিকিটের মোড়ক উন্মোচন।

সইয়ের তালিকার এমওইউগুলো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আলোচনার পর দুই দেশ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত সইয়ের তালিকায় অন্তত ছয়টি সমঝোতা স্মারক রেখেছে। তবে শেষ মুহূর্তে তা বাড়তে পারে। দুর্যোগ দমনে সহযোগিতা, দুই দেশের ন্যাশনাল স্টাফ কলেজের মধ্যে সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওই সমঝোতা স্মারকগুলো সইয়ের কথা রয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্সের (এসআইপিজি) জ্যেষ্ঠ ফেলো মো. শহীদুল হক রোববার প্রথম আলোকে বলেন, সংযুক্তির এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান করতে হবে। যেমন ধরা যাক পানি বণ্টনের সমস্যা, সীমান্ত হত্যা বন্ধের মতো বিষয়গুলো বাস্তবসম্মতভাবে সমাধানে মনোযোগী হতে হবে। তা না হলে সম্ভাবনার সুফল টেকসই হবে না। পাশাপাশি এটাও মনে রাখতে হবে, সংযুক্তি যে এক পক্ষের স্বার্থে নয়, সব পক্ষই এতে সমানভাবে উপকৃত হবে, এটা মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরতে হবে।