Thank you for trying Sticky AMP!!

বাদুড় তাড়াতে নিদ্রাহীন রাত

গাজীপুরের শ্রীপুরে ছাউনি বানিয়ে আপেল কুলের বাগান পাহারা দিচ্ছেন কৃষক। ছবিটি গতকাল শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

গাছে কাঁচা-পাকা বরই দেখে কার না জিভে জল আসে! লবণ-মরিচের তৈরি ঝালে কাঁচা বরই মাখিয়ে খাওয়া আর পাকা বরই টুপটাপ মুখে পোরা—আহ্! দৃশ্যটা ভাবলেও স্বাদটা যেন মুখে লেগে থাকে। তবে গাছ থেকে এই বরই হাতে আসতে কৃষকের যে কত শ্রম দিতে হয়, কত নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়, তা অনেকেরই অজানা। কাঁচা-পাকা বরইয়ের স্বাদ বাদুড়, পাখিদেরও চেনা। তারা হরহামেশাই হামলে পড়ে গাছের ওপর। তাই দিনে পাখি আর রাতে বাদুড় তাড়াতে ব্যস্ত থাকতে হয় কৃষকদের।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বরইবাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগান পাহারায় ব্যস্ত রয়েছেন কৃষকেরা। এখন বরইয়ের মৌসুম চলছে। লাল-হলুদ রঙের বরইয়ে ছেয়ে গেছে কৃষকের বাগান। পাহারার জন্য বাগানের মধ্যে ছোট ছাউনি করে বসে আছেন কৃষক। গাছেও টাঙানো রয়েছে টিনের বাক্স। বাদুড় ও বুলবুলি পাখি তাড়াতে প্রতিটি গাছে টিন বেঁধে শব্দ তৈরি করা হয়। গাছে টাঙানো টিনের সঙ্গে লম্বা দড়ি বেঁধে এক প্রান্ত ছাউনির কাছে রাখা আছে। দিনে পাখি আর রাতে ঝাঁকে ঝাঁকে বাদুড় এসে সাবাড় করে দিতে পারে বরইবাগান। তাই কিছুক্ষণ পর পর দড়ি টেনে শব্দ তৈরি করেন বাগানের মালিক। অনেকে শখে, আবার অনেকে জীবিকার প্রয়োজনে বাগান করেছেন। উপজেলার তেলিহাটি গ্রামেই আপেল কুলের বাগান আছে অন্তত পাঁচটি। তা ছাড়া কাওরাইদ, বরমি, সিংগার দিঘিসহ কয়েকটি গ্রামে বরইয়ের ভালো ফলন হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তেলিহাটি গ্রামের মাজমের মোড় এলাকায় ৩৩টি গাছ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে একটি আপেল কুলের বাগান। এটি মৌসুমের শুরুতেই বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। বাগানটি ১৯ হাজার টাকায় কিনেছে তিনজনের একটি পাইকারি দল।

গাজীপুরের শ্রীপুরে আপেল কুলের বাগানে পাখি তাড়াতে গাছে টিন বাঁধা হয়েছে। ছবিটি গতকাল শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

দলের একজন রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় বাগানে। তিনি বলেন, দেড় মাস ধরে বাগান থেকে কিছু কিছু বরই স্থানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে বিক্রি বেড়ে যাবে অনেক গুণ। বর্তমানে প্রতি কেজি আপেল কুল স্থানীয় বাজারে পাইকারি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। আফসোসের সুরে তিনি বলেন, বরই বিক্রিতে লাভ বেশি হয় না। সারা রাত-দিন পরিশ্রম করে পাহারা দিয়ে বরই রক্ষা করতে হয়।

স্থানীয় ফরিদ মিয়া বলেন, তেলিহাটি ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি বড় বরইবাগান আছে। এগুলোর স্বাদ দেশের অন্য এলাকার বরইয়ের চেয়ে বেশি। লোকজন খুব পছন্দ করে এখানকার বরই।

খোকন নামে স্থানীয় আরেক ব্যক্তি বলেন, মাটির কারণে এই এলাকার বরইয়ের চাহিদা আছে অনেক।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মূয়ীদুল ইসলাম বলেন, এই এলাকার মাটিতে বরইয়ের স্বাদ ভালো হয়। এই মাটি বরই উৎপাদনে যথেষ্ট উপযোগী। উপজেলার প্রায় সব গ্রামেই বরইগাছ আছে। দিনে দিনে বরই উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকেই।