Thank you for trying Sticky AMP!!

বানের পানিতে ভেসে গেছে ঈদ আনন্দ

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছে বসতঘর। মন্দিরা গ্রাম, হাজীপুর ইউনিয়ন, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার, ১৪ জুন। ছবি: প্রথম আলো

দুই দিন আগেও মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের সন্দ্রাবাদ গ্রামের সফর আলীর (৪৫) সাজানো-গোছানো সংসার ছিল। কিন্তু এখন তাঁর ঘরে কোমরপানি। তাঁর মতো আরও ১০-১৫টি পরিবার বাঁধের শুকনো জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।

অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নামে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে কুলাউড়ার টিলাগাঁও, শরীফপুর, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও রাউৎগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। তাই আসন্ন ঈদের আনন্দ বানের পানিতে ভেসে গেছে বলে আক্ষেপ করে দুর্গত মানুষ।

এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ এখন পানিবন্দী। পাকা আউশ ধানের খেত পানির নিচে। সড়কে পানি ওঠায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। সামনে ঈদ। কিন্তু উৎসবের কোনো আমেজ নেই এসব এলাকায়। বানের পানিতে ভেসে গেছে মানুষের ঈদের আনন্দ। এ দিকে বন্যার পানিতে ডুবে এক চা-শ্রমিক দুদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে টিলাগাঁও, হাজীপুর ও পৃথিমপাশা ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তাঘাট সব ডুবে গেছে। বাঁধের বিভিন্ন স্থানে শুকনো জায়গায় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উঁচু স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছে। কিছু পরিবার ঠাঁই নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়কের বিভিন্ন স্থানে দু-তিন ফুট পানি।

টিলাগাঁওয়ের মিয়ারপাড়া গ্রামের পানিবন্দী ছমর মিয়া (৫৫) বলেন, ‘আখতা পানি আইলো। ধান পাকি গেছিল। সব পানির তলে। মানুষর জান বাঁচানিই অখন কঠিন হই গেছে।’

পৃথিমপাশার গজভাগ, গণকিয়া, আলীনগর ও ধামুলি গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পানি। কলাগাছের তৈরি ভেলায় অনেকে চলাচল করছে। ধামুলির আবদুল হেকিম (৪০) বলেন, ‘উজানর পানি নামিয়া এই দিকে বাড়তেছে। পরিবার সবাইরে কাইল (বুধবার) বিকালে কুটুমবাড়ি পাঠাই দিছি। ঘরর মালামাল পাহারা দিয়ার।’

টিলাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালিক বলেন, ‘গতকাল বুধবার বিকেলে স্থানীয় নওয়াবাজার থেকে লংলা চা-বাগান এলাকার বাড়িতে ফেরার সময় প্রদীপ মালহা (৩০) নামের এক শ্রমিক বন্যার পানিতে ডুবে যান। কুলাউড়া ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গিয়ে চেষ্টা চালিয়েও তাঁর সন্ধান পায়নি।’ তিনি বলেন, বাগরিহাল, আশ্রয়গ্রাম ও পাল্লাকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাংলাটিলা মাদ্রাসায় ৫০-৬০টি দুর্গত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাদুর্গত লোকজনকে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।

হাজীপুর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল বাছিত বলেন, বুধবার রাতে তাঁর এলাকার মন্দিরা গ্রামে বাঁধের ৭০-৮০ ফুট জায়গা ভেঙে পানি ঢুকতে শুরু করে। এ ছাড়া পার্শ্ববর্তী শরীফপুর ইউনিয়ন থেকেও উজানের পানি ঢুকছে। ৪০টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সব রাস্তা ডুবে গেছে। ৭০ শতাংশ নলকূপ পানির নিচে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

শরীফপুর ইউপির চেয়ারম্যান জোনাব আলী বলছিলেন ‘পানির তোড়ে নমৌজা-শমশেরনগর সড়কের একটি বড় কালভার্ট দেবে গেছে। সব স্থানে বাঁধের ওপর দিয়ে পানি ঢুকছে। নৌকা ছাড়া চলাচলের আর কোনো ব্যবস্থা নেই। সঞ্জবপুর গ্রামের পানিবন্দী সাতটি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে নেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো সরকারি ত্রাণ তাঁদের হাতে পৌঁছায়নি।’

আলীনগর, ধলিয়া, গণকিয়া, সালিকা, আমুলি ও রাজনগর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানির প্রবল স্রোতে শতাধিক কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে বলে জানান পৃথিমপাশা ইউপির চেয়ারম্যান নওয়াব আলী বাকর খান। রাউৎগাঁও ইউপির চেয়ারম্যান আবদুল জলিল বলেন, তাঁর এলাকার ছয়টি গ্রাম পুরোপুরি ও চারটি গ্রামের আংশিক তলিয়ে গেছে। অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জগলুল হায়দার বলেন, শরীফপুর, টিলাগাঁও, হাজীপুর, পৃথিমপাশা ও রাউৎগাঁও ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ একর জমির আউশ ধান পুরোপুরি নিমজ্জিত হয়েছে। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ফসলের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে এর বেশি স্থায়ী হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের আটটি স্থানে ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। ঈদুল ফিতরের আগ মুহূর্তে এ বিপর্যয়ের কারণে মানুষ চরম কষ্টে পড়েছেন। বন্যার্তদের জন্য মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। এসব চাল বণ্টন করা হচ্ছে। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের তহবিল থেকে শরীফপুর ইউনিয়নে ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার ও টিলাগাঁওয়ে ১৫ বস্তা চিড়া পাঠানো হয়েছে। দুর্গত মানুষকে উদ্ধারের জন্য কিছু নৌকারও ব্যবস্থা করা হয়েছে।