Thank you for trying Sticky AMP!!

বাস টিকিটের সূত্র ধরে খুনের আসামি গ্রেপ্তার, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

প্রতীকী ছবি

মরদেহের পাশে পড়ে থাকা বাসের টিকিটের সূত্র ধরে আকলিমা আখতার (২৫) নামের এক নারী হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটনের দাবি করেছে হবিগঞ্জ থানার পুলিশ। এই ঘটনায় এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম আনোয়ার হোসেন ওরফে সোবান মিয়া (২৮)। গতকাল বুধবার রাতে তিনি হবিগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। আনোয়ারের বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার উচাইল গ্রামে। তিনি কাঠমিস্ত্রি।

গত ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজিউড়া গ্রামের একটি খালপাড় থেকে গলায় ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় অজ্ঞাতপরিচয়ের ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশ আঙুলের ছাপ নিয়ে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁর পরিচয় জানতে পারে। উদ্ধার হওয়া ওই মরদেহ পার্শ্ববর্তী মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার জাম্বুরাছড়া গ্রামের হেলাল মিয়ার মেয়ে আকলিমা আখতারের।

পুলিশ মরদেহের পাশে পড়ে থাকা এনা পরিবহনের একটি টিকিট থেকে আকলিমার মুঠোফোনের নম্বর পায়। পরে কল লিস্টের সূত্র ধরে আনোয়ারকে শনাক্ত শেষে গতকাল সকালে গ্রেপ্তার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর পাঁচ বছরের এক সন্তানকে নিয়ে আকলিমা বাবার বাড়িতে বসবাস করতেন। ২৬ ডিসেম্বর তাঁর ভাই আমির হোসেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। আনোয়ারকে গতকাল বিকেলে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালতে নেওয়া হয়। রাত আটটার দিকে তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

আদালতের উদ্ধৃতি দিয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুক আলী প্রথম আলোকে বলেন, চার ঘণ্টা সময় নিয়ে আনোয়ার হোসেন এই হত্যাকাণ্ডের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আনোয়ার আদালতকে জানান, প্রায় আট মাস আগে তাঁর সঙ্গে মুঠোফোনে আকলিমার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আনোয়ারও বিবাহিত। কিন্তু তা গোপন রাখেন আকলিমার কাছে। বিভিন্ন স্থানে তাঁদের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ হতো। সম্প্রতি আকলিমা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়ে ঢাকায় চলে যান। সেখানেও তাঁরা দেখা করতেন। আকলিমা আনোয়ারকে বারবার বিয়ের তাগিদ দিচ্ছিলেন। অন্যদিকে আনোয়ারের স্ত্রী এই সম্পর্কের বিষয়টি জেনে গেলে তাঁদের পরিবারের মধ্যে অশান্তি তৈরি হয়। আনোয়ারের স্ত্রী রাগ করে তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান। এ অবস্থায় বিয়ের জন্য চাপ দিলে আনোয়ার ২৩ ডিসেম্বর আকলিমাকে হবিগঞ্জে আসার কথা বলেন। আকলিমা তাঁর কথামতো ওই দিন রাতে ঢাকা থেকে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ওলিপুর আসেন এনা পরিবহনের একটি বাসে করে। আকলিমাকে আনোয়ার গোপনে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান এবং একটি কক্ষে লুকিয়ে রাখেন, যাতে প্রতিবেশী কেউ জানতে না পারেন। এভাবে সেখানে দুই দিন রাখার পর ২৫ ডিসেম্বর ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে আনোয়ার আকলিমাকে বিয়ের কথা বলে বাড়ি থেকে বের করেন এবং মধ্যপথে একটি ঝুপড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে মরদেহটি পার্শ্ববর্তী একটি খালে ফেলে দেন। স্বীকারোক্তির পর আনোয়ারকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, ওই নারীর মরদেহের পাশে পড়ে থাকা একটি বাসের টিকিট থেকেই তাঁরা পুরো হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন। একাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে আনোয়ার আদালতকে জানিয়েছেন।