Thank you for trying Sticky AMP!!

বাড়ির ছাদে হরেক রকম ফুল-ফল-সবজি

দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায় সুলতানা ফেরদৌসীর বাড়ির ছাদে থরে থরে ঝুলে আছে আম। বুধবার সকালে। ছবি: রাজিউল ইসলাম

তেঁতুল নামটি শুনলেই মুখে আসে পানি। কিন্তু কেউ যদি বলেন, তাঁর গাছের তেঁতুল মিষ্টি, তখন কিছুটা অবাক হতে হয়। এমন অবাক করা কথাই শোনাচ্ছিলেন দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার সুলতানা ফেরদৌসী। পেশায় তিনি শিক্ষক। শুধু তেঁতুলই নয়, শহরে ২ হাজার ১০০ স্কয়ার ফিট আয়তনের চার তলা ছাদে ৩৯৬টি টবে দেশি-বিদেশি হরেক রকমের ফুল, ফল ও সবজির গাছ লাগিয়ে ছাদ কৃষি গড়ে তুলেছেন তিনি। 

সুলতানার মতো দিনাজপুর শহরে অনেকেই ছাদ কৃষিতে মনোযোগী হয়ে উঠেছেন। প্রায় সারা বছরই ছাদ কৃষিতে ফুল-ফল, শাক-সবজি চাষ করছেন তাঁরা। শহরে শতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি করার কথা জানা গেছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, বর্তমানে দিনাজপুরে শতাধিক ভবনের ছাদে ছাদ কৃষি আছে। প্রতিটি ছাদে ৬০ থেকে শুরু করে তিন শতাধিক ফুল ও ফলের গাছ রয়েছে। তবে শহরের বালুয়াডাঙ্গা, বালুবাড়ি, সুইহারি, গোলাপবাগ, গুড়গোলা, ইদগাহ বস্তি এলাকায় ছাদ কৃষিতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. তৌহিদ ইকবাল বলেন, ছাদ কৃষির একটি বড় সুবিধা হচ্ছে, ছাদ সব সময়ের জন্য ঠান্ডা থাকে। এক দিকে পরিবেশ রক্ষা হয়। অন্যদিকে পারিবারিক সবজি চাহিদা ও পুষ্টির জোগান দেওয়া সম্ভব হয়। প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সময়ে বাড়ির আশপাশের পরিত্যক্ত জায়গা কৃষির আওতায় আনার তাগিদ দিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে ছাদ কৃষির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে যাঁরা ছাদ কৃষি শুরু করেছেন, তাদের নিয়ে একটি কর্মশালারও আয়োজন করা হয়েছে। গাছের টবে যেন পানি জমে না থাকে, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা ছাড়াও নিয়মিত গাছের পরিচর্যার কথা বলা হয়েছে।

গত বুধবার সকালে সুলতানা ফেরদৌসীর ছাদে দেখা গিয়ে দেখা যায়, কয়েক রকমের আম, জাম, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, জাম্বুরা, সফেদা, তেঁতুল, আঙুর, ড্রাগন, করমচা। শাকসবজির মধ্যে লাউ, টমেটো, সাশা, তরই, ক্যাপসিকাম, কারিপাতা, লেটুস পাতা ও ধনেপাতা। ওষধি গাছের মধ্যে রয়েছে অ্যালোভেরা, তুলসী, আমলকী, অর্জুন। ফুলের মধ্যে আছে ক্যাকটাস, ডালিয়া, নাইটকুইন, অর্কিড, কাটা মুকুট, অপরাজিতা ইত্যাদি। আঙুর ফলের মাচায় ঝুলছে শসা, লাউ আর তরই। বাড়ির প্রথম তলা থেকে চতুর্থ তলার বেলকনিতে আকাশমণি, আগড়, বট, মেহগনিকে বনসাই করে রাখা হয়েছে।

নিজের বাড়ির ছাদ বাগান ঘুরে দেখাচ্ছেন সুলতানা ফেরদৌসী। বুধবার সকালে দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকায়। ছবি: রাজিউল ইসলাম

সুলতানার ছাদ বাগানে দাঁড়িয়ে চারপাশে প্রায় সব ভবনের ছাদে এই ছাদ কৃষি চোখে পড়ে এখন। সুলতানা বলেন, '২০১২ সালে কয়েকটি ফুলের গাছ দিয়ে শুরু করেছিলাম। তারপর আস্তে আস্তে সবজি ও ফল গাছ লাগাই। পরিমাণে কম হলেও বছরের সব সময়ই কোনো না কোনো গাছের ফল খেতে পারি।'

তাঁর এই বাগানের পরিচর্যা দেখে আশপাশের অনেকেই এখন ছাদ কৃষি গড়ে তুলেছেন। অনেককে তিনি চারা ও বীজ সরবরাহও করেন। এই ছাদ কৃষিতে সাফল্যের জন্য গত ২০১৭ সালে পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারও লাভ করেছেন সুলতানা।

ছাদে শতাধিক টবে গাছ লাগানো আছে সর্দারপাড়া এলাকার মকবুল হোসেনের। তিনি বলেন, অন্য সময়ে তেমন যত্ন নিতে না পারলেও বেশ কিছুদিন ধরে বাড়িতে থাকায় ছাদ বাগানের যত্ন নিতে পারছেন।

দিনাজপুর শহরে তিন তলা থেকে শুরু করে পাঁচতলা পর্যন্ত কয়েক হাজার ভবন আছে বলে জানান পৌর মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম। বলেন, ছাদ কৃষি যেহেতু পরিবেশে রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখে। গুরুত্ব দিয়ে কেউ এই ছাদ কৃষির উদ্যোগ গ্রহণ করলে সেই বাড়ির পৌর করের বিষয়েও শিথিলতা আনা হবে।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম বলেন, ইতিমধ্যে ছাদ কৃষির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলার সব সরকারি অফিসের ছাদে এই ছাদ কৃষি গড়ে তুলতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন। দিনাজপুর জেলা প্রশাসন মূল ভবনের দ্বিতীয় তলায় গড়ে তোলা হয়েছে ছাদ কৃষি। ফুল ও ফল মিলিয়ে সেখানে দেড় শতাধিক টবে গাছ লাগানো হয়েছে। কয়েকটি গাছে ইতিমধ্যে ফলও ধরেছে।