Thank you for trying Sticky AMP!!

বিটিভি-বেতারে পুরোটাই 'সরকার'

>

• সংবাদে সরকারি দল ও তাদের শরিকদেরই নিরঙ্কুশ প্রাধান্য
• ২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে
• ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপিসহ অন্যরা সামান্য সময় পেয়েছে
• তার মধ্যেও সরকারি দলের বিপক্ষে যায় এমন প্রসঙ্গ থাকে না

রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদে সরকারি দল ও তাদের শরিকদেরই নিরঙ্কুশ প্রাধান্য। সরাসরি নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদে ৯০ শতাংশ সময় ব্যয় হয় তাদের প্রার্থীদের জন্য। ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপিসহ অন্যরা যে সামান্য সময় পেয়েছে, তার মধ্যেও সরকারি দলের বিপক্ষে যায় এমন প্রসঙ্গ থাকে না। আর নির্বাচনসংশ্লিষ্ট অন্য খবর, অনুষ্ঠানগুলো এমনভাবে পরিবেশিত হয়, যাতে তা শাসক দলের পক্ষে যায়।

চলতি মাসের ২২ থেকে ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের সংবাদ বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। বিটিভির আধা ঘণ্টা করে প্রচারিত পাঁচ দিনের রাত আটটার সংবাদে ১২০ মিনিট সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত খবর ছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের শরিকদের দেওয়া হয় ১০১ মিনিট। আর ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি পায় ২ মিনিট ১০ সেকেন্ড। বাকিটা নির্বাচনসংক্রান্ত অন্যান্য খবর।  

আর বেতারের ১৫ মিনিট করে প্রচারিত পাঁচ দিন রাত সাড়ে আটটার খবরে ৫১ মিনিট ছিল নির্বাচনসংক্রান্ত সংবাদ। এর মধ্যে ৩৭ মিনিট ১৩ সেকেন্ড ব্যয় হয় মহাজোটের জন্য। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট পায় ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড।

২৩ ডিসেম্বর বেলা দুইটার আধা ঘণ্টার মূল খবরে ১৭ মিনিট ২০ সেকেন্ড নির্বাচন-সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশিত হয়। এর মধ্যে ১ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তারাগঞ্জ ও পীরগঞ্জের নির্বাচনী সভার সংবাদ পরিবেশিত হয়। সারা দেশে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-সংক্রান্ত সংবাদ পরিবেশিত হয় ৪ মিনিট। এতে আওয়ামী লীগের ১৯ প্রার্থী, জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টির ২ প্রার্থীর খবর প্রচারিত হয়। 

ওই দিন রাত আটটার সংবাদের চিত্রও ছিল দুপুরের মতো। ১৮ মিনিট নির্বাচনসংক্রান্ত খবরে শাসক দলের প্রার্থীদেরই প্রাধান্য ছিল। সংবাদ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের বিরতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন বিষয়ে নিয়মিত বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়।

‘রাজনীতি, নির্বাচন: মানুষের কথা’ শিরোনামে ওই দিনের নির্বাচনসংক্রান্ত একটি সংবাদ কণিকা ছিল ১ মিনিট ২৫ সেকেন্ড। সেখানে সাতজন ‘সাধারণ ভোটারের’ সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। তাঁদের বক্তব্যগুলো এমনভাবে পরিবেশিত হয়েছে, যা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে মিলে যায়।

২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বেতারের বেলা ২টা, বিকেল ৪টা এবং রাত সাড়ে ৮টার সংবাদের আধেয় বিশ্লেষণ করা হয়। বেলা ২টার সংবাদে ৫০ সেকেন্ড ছিল প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদ। ৩০ সেকেন্ড ছিল সারা দেশের নির্বাচনী প্রচারণার সংবাদ। এখানে কোনো প্রার্থীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। ২৫ সেকেন্ড ছিল নির্বাচন কমিশনের একটি অনুষ্ঠানের খবর। এটি ছিল ৫ মিনিটের খবর।

বেতারে সংবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নির্বাচনী প্রচারমূলক বার্তা যায় এবং তা ছিল সরকারি দলের পক্ষে। সম্ভাবনার বাংলাদেশ ও কথিকা অনুষ্ঠানে সরকারের নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা ছিল।

বেতার-টিভিতে সরকারি দলের এমন প্রাধান্যকে ‘অন্যায্য’ বলে মনে করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংগঠন ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ। তিনি বলেন, কাউকে বেশি এবং কাউকে কম জায়গা দেওয়া উচিত নয়।

জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্টের খবর তৈরিই হচ্ছে না। সে জন্যই সংবাদে তারা স্থান কম পাচ্ছে।’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঐক্যফ্রন্টের বেশির ভাগ প্রার্থী মাঠে নেই। তাঁদের এই আচরণ রহস্যজনক।’ তিনি বলেন, ‘যেন সঠিকভাবে সব দলের সংবাদ যায়, সে বিষয়ে আমি কথা বলব।’

গবেষক ও অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, বেতার-টিভিতে সরকারি দলের প্রাধান্য এবং বিরোধী দলের সংবাদ না থাকা ‘অসমতল নির্বাচনী মাঠের’ একটি উদাহরণ। তিনি বলেন, তথ্যমন্ত্রী যেভাবে বিরোধীদের অনুপস্থিতিকে ‘রহস্যজনক’ বলছেন, আসলে এর ভেতরেই মাঠ অসমতল হওয়ার কারণ লুকিয়ে আছে। এর অনুসন্ধান দরকার।