Thank you for trying Sticky AMP!!

বিধিনিষেধ শিথিলে বাংলাদেশসহ ১০ দেশে সংক্রমণ বাড়ছে

প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক দেশই লকডাউনের বা কঠোর বিধিনিষেধের পথে হেঁটেছে। আবার কোনো দেশ লকডাউন বা জরুরি অবস্থা জারি না করলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসুক বা না আসুক, কিছুদিন না যেতেই জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর তাগিদে বিধিনিষেধ শিথিল করতে শুরু করে কিছু দেশ। এরপরই কয়েকটি দেশে সংক্রমণ আরও বাড়তে দেখা গেছে। এমন ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান–এর বিশ্লেষণে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ব্যাপকহারে করোনার সংক্রমণ ছড়ানো ৪৫টি দেশের অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে এ ক্ষেত্রে। করোনা মহামারির বিস্তার নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, লকডাউন শিথিল করার পর ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে আবারও সংক্রমণের বিস্তার ঘটছে।

গার্ডিয়ান–এর ওই প্রতিবেদনে ওই ৪৫টি দেশকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো ‘বিধিনিষেধ শিথিলের পর সংক্রমণ বাড়ছে’, ‘বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, তবে ইতিবাচক আভাস পাওয়া যাচ্ছে’, ‘সতর্ক থাকার পরও সংক্রমণ বাড়ছে’, ‘সতর্ক আছে এবং সংক্রমণ কমছে’, ‘লকডাউন রয়েছে ও সংক্রমণ কমছে’, এবং ‘লকডাউন সত্ত্বেও সংক্রমণ বাড়ছে’। এর মধ্যে ‘বিধিনিষেধ শিথিলের পর সংক্রমণ বাড়ছে’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ রয়েছে। যদিও ইউরোপ-আমেরিকার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশে এখনো সংক্রমণ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

‘বিধিনিষেধ শিথিলের পর সংক্রমণ বাড়ছে’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ ছাড়াও রয়েছে জার্মানি, ইউক্রেন, যুক্তরাষ্ট্র, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, সুইডেন, ইরান, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরব।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুসারে যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ কঠোর বিধিনিষেধের মান ১০০ ধরা হয়েছে। অর্থাৎ জনগণকে সচেতন করতে প্রচারণা, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ পদক্ষেপ এবং সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু বন্ধ করার সার্বিক পদক্ষেপের মান ধরা হয়েছে ১০০। এ ক্ষেত্রে যেসব দেশের বিধিনিষেধ শিথিল ধরা হয়েছে, সেগুলোর সার্বিক পদক্ষেপের মান ৭০ বা তার কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে জার্মানিতে সংক্রমণ আবারও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যায়। দুটি এলাকা তো লকডাউনই করতে হয়।
দেশটিতে গত মে মাসের শুরুর দিকে সংক্রমণ মোকাবিলায় সার্বিক পদক্ষেপের মান ৭৩ থেকে কমে ৫০-এ নেমে আসে। এরপরই ওই ঘটনা ঘটে। করোনা মহামারির সার্বক্ষণিক তথ্য প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস ডট ইনফোর তথ্যমতে, জার্মানিতে শনাক্ত হওয়া করোনা সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৯৪ হাজার ছুঁই ছুঁই। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি। মারা গেছেন ৯ হাজারের কিছু বেশি।

এদিকে সৌদি আরব ও ইরানে তো সংক্রমণ আবারও ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে। এই দেশ দুটিও বিধিনিষেধ শিথিল করেছিল। সৌদি আরবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে গতকালই শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৯৩৮ জন। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ হাজার ৪৭৪ জন। আর ইরানে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে গতকাল শনাক্ত হয়েছেন আড়াই হাজারের বেশি। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত মারা গেছেন ১০ হাজার ২৩৯ জন। গতকাল মারা গেছেন ১০৯ জন।

যুক্তরাষ্ট্রে চলতি জুনে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে কয়েকটি অঙ্গরাজ্য। এতে দেশটিতে আবারও সংক্রমণ বেড়ে যায়। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এই দেশটি এখন বিশ্বের শীর্ষ দেশ। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ২৫ লাখ ছাড়ায়। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ লাখ ২৭ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশেও সরকারঘোষিত ছুটি শেষে বিধিনিষেধ অনেকটাই শিথিল হয়েছে। এরপর এখানেও সংক্রমণ আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশও সরকারঘোষিত সাধারণ ছুটি শেষে বিধিনিষেধ শিথিল করেছে।

প্রতিবেশী ভারত রয়েছে ‘সতর্ক থাকার পরও সংক্রমণ বাড়ছে’ ক্যাটাগরিতে। যে ৪৫টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তার মধ্যে সাতটি দেশ এই ক্যাটাগরিতে পড়েছে। মহামারি মোকাবিলায় যেসব দেশে সার্বিক পদক্ষেপের মান ৭০ থেকে ৮০-এর মধ্যে, আবার সংক্রমণও বাড়ছে, সেগুলোকেই এই ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এই দেশগুলো হলো ডমিনিকান রিপাবলিক, চিলি, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পর্তুগাল, ব্রাজিল ও মিসর।

এই দেশগুলোর মধ্যে ভারত এখন শনাক্ত হওয়া সংক্রমিত রোগীর সংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ দেশ। এই দেশটিতে গতকাল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ভারতে করোনা মোকাবিলায় গত মার্চের শেষ দিকে লকডাউনের পথে হাঁটে সরকার। এরপর দফায় দফায় লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হলেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। তবে বিধিনিষেধ শিথিল করার পর ভারতে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা যেন লাফিয়ে বাড়তে শুরু করে।

ভারতের প্রতিবেশী পাকিস্তান রয়েছে ‘বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে, তবে ইতিবাচক আভাস পাওয়া যাচ্ছে’ ক্যাটাগরিতে। এ তালিকায় রয়েছে ১১টি দেশ। এগুলো হলো তুরস্ক, বেলজিয়াম, কানাডা, পোল্যান্ড, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বেলারুশ, ইতালি, স্পেন, সিঙ্গাপুর ও নেদারল্যান্ডস। গার্ডিয়ান–এর ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই তালিকায় থাকা দেশগুলোয় মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যদিও এই দেশগুলোয় বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছে।

পাকিস্তানে ১ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৩ হাজার ৯৬২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮৪ হাজারের বেশি। দেশটিতে ২০ জুন থেকে দৈনিক রোগী শনাক্তের হার কমছে।

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গভর্নমেন্ট রেসপন্স ট্র্যাকার-এর প্রধান গবেষক এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাতনিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের জননীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টমাস হেল সার্বিক বিষয়ে বলেন, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙতে ও বিস্তারের গতি কমাতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল অপরিহার্য বলে প্রমাণ হয়েছে। এসব পদক্ষেপের কারণে মূল্য দিতে হলেও, এগুলোর ফলে সরকার পরীক্ষা ও রোগী শনাক্ত কার্যক্রম জোরদার, স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং দীর্ঘ মেয়াদে এই রোগ দমনে অন্যান্য নীতি গ্রহণে সরকারগুলো সময় পাবে।

টমাস হেল আরও বলেন, ‘প্রশ্নটা হলো, সরকারগুলো ব্যাপক মূল্য দিয়ে যে সময় পেল, তা তারা কীভাবে ব্যয় করল? যদি সুরক্ষামূলক নীতি গ্রহণ না করেই সরকারগুলো সব শিথিলের পথে হাঁটে, তাহলে তো সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হবেই।’