বিভক্ত নেতাদের কাছে টানার চেষ্টায় দিদারুল আলম
প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর কেন্দ্রের নির্দেশে দলীয় বর্ধিত সভা করে বিভক্ত নেতারা এক মঞ্চে জড়ো হয়েছিলেন। ওপরে এক দেখালেও মনের ক্ষত সারেনি অনেকের। তাই চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে কোন্দল মাথায় নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন সাংসদ দিদারুল আলম।
অপরদিকে হাইকোর্টের নির্দেশে মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া বিএনপির আসলাম চৌধুরী শেষ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচন করতে পারবেন কি না, সে আলোচনা রয়েছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তবে তাঁর জন্য অপেক্ষায় না থেকে ধানের শীষের বর্তমান প্রার্থী ইসহাক চৌধুরীকে নিয়ে মাঠ গরম করছেন সমর্থকেরা।
গত শুক্রবার মাদামবিবির হাট এলাকায় শ দুয়েক লোক নিয়ে গণসংযোগ এবং মিছিল করেছেন ইসহাক চৌধুরী। গণসংযোগের ফাঁকে আসলাম চৌধুরীর অগ্রজ উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক চৌধুরী বললেন, হাইকোর্টের সার্টিফায়েড কপি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়া হবে। তারপর যা হয় হবে। মনোনয়ন ফিরে পেলে আসলামই নির্বাচন করবেন।
বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানি করার অভিযোগও করেন ইসহাক চৌধুরী।
তাঁর সঙ্গে জড়ো হওয়া কর্মীদের মধ্যে একটা পরিবর্তনের আশা। তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও রয়েছে বলে জানান। ৩০ ডিসেম্বর এলাকার লোকজন ধানের শীষে ভোট দিয়ে ব্যালটের মাধ্যমে জবাব দেবেন, এমন আশা নেতা-কর্মীদের।
মো. জহির নামের এক জাহাজভাঙা কারখানার শ্রমিক ধানের শীষ নিয়ে হাজির হন। তিনি বলেন, ‘ইসহাক ভাই হোক, আর আসলাম ভাই হোক, আমরা ধানের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।’
২০০৮ সালে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আসলাম চৌধুরী। তিনি তখনকার আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ বি এম আবুল কাশেমের কাছে হেরেছিলেন। আসলাম চৌধুরী বর্তমানে কারাগারে।
চট্টগ্রাম-৪ আসনটি সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। ভোটারসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৯৩ হাজার। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত চন্দ্রনাথ পাহাড়ের ব্যাস কুণ্ডধাম। এখানে রয়েছে বারআউলিয়ার মাজার। এ ছাড়া পুরো উপজেলায় ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সাগর উপকূলে জাহাজভাঙা কারখানাও রয়েছে।
বিএনপির ইসহাক চৌধুরী এবং আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম দুজনই ব্যবসায়ী। ইসহাক চৌধুরী সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা। অন্যদিকে দিদারের বাড়ি পড়েছে সিটি করপোরেশন এলাকায়। ভোটারদের মধ্যে এই হিসাব-নিকাশও কিছুটা কাজ করবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে এই হিসাবের আগে দিদারকে দলের অন্তঃকোন্দল মেটাতে হবে। এখনো তিনি সেই অর্থে কাছে পাননি জ্যেষ্ঠ নেতাদের।
শুক্রবার সকালে দিদারুল আলম বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে শতাধিক নেতা-কর্মী স্লোগান দেন। কাপড় দিয়ে তৈরি একটি নৌকা নিয়ে মিছিল করেন তাঁরা। এ সময় তাঁর সঙ্গে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা মো. শাহজাহান ছিলেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা মোশাররফ হোসেনের বিশ্বাস, আওয়ামী লীগের সবাই কাজ করলে দিদার অবশ্যই জিতে আসবেন।
এখনো মনোনয়নবঞ্চিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল বাকের ভূঁইয়া এবং উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম আল মামুনকে দিদারের পক্ষে মাঠে দেখা যায়নি।
তবে সাংসদ দিদারুল আলমের মতে, তাঁরা সবাই ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সব নেতা-কর্মী নৌকার পক্ষে কাজ করছেন। সবাইকে নিয়ে সভা করেছি। সবাই শেখ হাসিনা এবং নৌকার পক্ষে এক এবং অভিন্ন।’
মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর ১০ ডিসেম্বর উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করেছে। সেই সভায়ও দিদারুল আলমকে তোপের মুখে পড়তে হয়। তারপরও নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য সবাই একমত হন। তবে মাঠের পরিস্থিতি তা বলছে না।
পৌর সদরে বাড়ি আবদুল বাকের ভূঁইয়ার। শুক্রবার দুপুর ১২টায় তাঁকে বাড়িতেই পাওয়া গেল। অথচ এ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী চার কিলোমিটার দূরে গণসংযোগ করছিলেন। আবদুল বাকের ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রার্থী চাইলে ঐক্য করা কঠিন নয়। আমাকে যদি প্রার্থীর প্রয়োজন থাকে, তাহলে ডেকে নেবেন। প্রার্থী চাইছে কি না, সেটাই বিষয়।’