Thank you for trying Sticky AMP!!

বিলুপ্তির সীমানা থেকে ফিরে আসছে শকুন

>
  • প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ হিসেবে স্বীকৃত শকুন
  • ২০১৬ সালে দেশে শকুন দেখা যায় ২৪০টি 
  • চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেখা গেছে ২৬০টি 
  • গত চার বছর ধরে দেশে শকুনের সংখ্যা বাড়ছে

বেশির ভাগ মানুষের কাছে শকুন অমঙ্গলের প্রতীক হলেও পরিবেশবিদেরা বহু আগেই এই পাখিকে প্রকৃতির ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মী’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। মৃত প্রাণীর মাংস খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শকুন। অন্তত ৪০টি রোগের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষা করা এই পাখি বাংলাদেশ থেকে প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সরকারের তিনটি সিদ্ধান্ত এবং প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জোট আইইউসিএনের উদ্যোগে সেই পরিস্থিতি গত কয়েক বছরে অনেকটাই বদলে গেছে। দেশের আকাশে আবার শকুনের দল ফিরতে শুরু করেছে।

আইইউসিএন জানায়, ১৯৯০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৯৯ শতাংশ শকুন বিলুপ্ত হয়ে যায়। শকুনের জন্য ক্ষতিকারক দুটি ওষুধ নিষিদ্ধ করা, এদের জন্য দুটি নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করা ও শকুন সংরক্ষক দল গঠন করার মাধ্যমে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গত চার বছর ধরে দেশে শকুনের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে।

মৃত প্রাণীর দেহ থেকে ক্ষতিকর জীবাণু প্রকৃতিতে ছড়ানোর আগেই তা খেয়ে সাবাড় করে দিত শকুন। গরু ও মানুষের জীবনের জন্য অন্যতম ঝুঁকি হচ্ছে অ্যানথ্রাক্স রোগ। একমাত্র শকুন হচ্ছে সেই প্রাণী, যে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত মৃত গরুর মাংস খেয়ে হজম করতে পারে। যক্ষ্মা ও খুরারোগের জীবাণু শকুনের পেটে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।

পাখি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইনাম আল হক প্রথম আলোকে বলেন, মৃতদেহ থেকে যেসব জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে মানুষকে রক্ষা করে শকুন। এখন শকুনও কমে গেছে, একই সঙ্গে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ার হারও বেড়ে গেছে। বন বিভাগ ও আইইউসিএন শকুন রক্ষায় যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা আরও সম্প্রসারণ করা উচিত।

বন বিভাগ ও আইইউসিএনের জরিপে দেখা গেছে, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশে শকুনের সংখ্যা ছিল ১০ লাখ। ২০১২ সালে তা মাত্র ৫৫০টিতে নেমে আসে। শকুনের ওই মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে ডাইক্লোফেনাক ও কিটোফেন নামের দুটি ওষুধকে দায়ী করেন বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা। এই দুটি ওষুধ সাধারণত গরুর জ্বরসহ বেশ কয়েকটি রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। গরু মারা গেলেও তার দেহে রয়ে যেত ওই ওষুধ দুটির অবশেষ। মৃত সেই গরুর মাংস খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শকুন মারা যেত।

এই পরিস্থিতিতে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০১০ সালে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ করে। ২০১৪ সালে দেশের সুন্দরবন ও সিলেট এলাকার ৪৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে শকুনের জন্য নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করে সরকার। ওই দুই এলাকায় শকুনের জন্য নিরাপদ খাবার সরবরাহ করা শুরু হয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে নিয়ে শকুন সংরক্ষক দল গঠন করে বন বিভাগ ও আইইউসিএন। কোথাও আহত বা অসুস্থ শকুন দেখলে সংরক্ষক দলের সদস্যরা তাদের উদ্ধার এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, শকুন রক্ষায় সরকারের আরও কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। উঁচু বৃক্ষে শকুন বাসা বাঁধে। তাই এসব বৃক্ষ রক্ষা করতে হবে। সুন্দরবন ও সিলেট ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকায় শকুনের বসতি থাকতে পারে। কেউ যদি তা দেখতে পায়, তাহলে বন বিভাগকে জানানোর অনুরোধ করেন তিনি।

বন বিভাগ ও আইইউসিএনের সর্বশেষ (গত অক্টোবরে প্রকাশ) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর এখন ১০ থেকে ১২টি শকুন বাড়ছে। ২০১৬ সালে দেশে শকুন দেখা যায় ২৪০টি। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত দেখা গেছে ২৬০টি। শকুন রক্ষায় বাংলাদেশের এই উদ্যোগ ভারত, পাকিস্তান ও নেপালে বেসরকারি পর্যায়ে অনুসরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া আফ্রিকার কয়েকটি দেশও বাংলাদেশের শকুন রক্ষার এই মডেল অনুসরণের কথা ভাবছে। এ বিষয়ে আইইউসিএনের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প পরিচালক এ বি এম সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তার সফলতা হিসেবে বিলুপ্তির কাছাকাছি চলে যাওয়া শকুনের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। বিশ্বের যে কটি দেশে এখন শকুন টিকে আছে, তারা বাংলাদেশের এই সংরক্ষণ মডেলকে অনুসরণ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।