Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বজুড়ে নানা সূচকে বাংলাদেশ এই ভালো তো এই খারাপ

বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, হাঁড়ির একটা ভাত টিপলেই বোঝা যায় ভাত সেদ্ধ হয়েছে কিনা। সূচকের অবস্থাও অনেকটা এই একটি ভাতের মতো। এ নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও এটা বলাই যায় যে, কোনো সূচকে যেকোনো দেশের অবস্থান দেখে ওই দেশটি সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়।

কারণ, সূচক কখনোই একটি দেশ বা জনগোষ্ঠীর প্রত্যেকের অভিজ্ঞতা আমলে নিয়ে করা হয় না। বেছে বেছে কিছু নির্বাচিত বিষয় ও তা থেকে পাওয়া প্রতিনিধিত্বমূলক উপাত্তের ভিত্তিতেই একটি সূচক গড়ে তোলা হয়। তাতে একটি দেশ বা খাতের সর্বোৎকৃষ্ট প্রতিচ্ছবি পাওয়া না গেলেও, যে ছবিটি পাওয়া যায়—তার ভিত্তিতে পরিস্থিতির উন্নতির জন্য করণীয় ঠিক করতে কোনো অসুবিধা হয় না।

বিশ্বে প্রতিবছর বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সূচক তৈরি হয়। চলতি বছরও হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য এমন ১৫টি সূচক নিয়ে এই প্রতিবেদন সাজানো হয়েছে। এসব সূচকে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি, আইনের শাসন, নারী ও শিশুদের অবস্থা প্রভৃতি বিচিত্র ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে। বৈশ্বিক মঞ্চে এ দেশের অবস্থান কোথায়, চলুন দেখে নেওয়া যাক।

২০১৯ সালে প্রকাশিত ১৫টি সূচকের প্রতিবেদনের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট ৭টিতে আগের অবস্থান থেকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ৬টিতে হয়েছে অবনতি। একটি সূচকে নিজেদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি বাংলাদেশ। আর একটি সূচক প্রথমবারের মতো হওয়ায় বাংলাদেশের উন্নতি বা অবনতির তুলনামূলক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

প্রতীকী ছবি


উন্নতি কতটুকু?
চলতি বছরের শুরুতেই বাংলাদেশের পাসপোর্ট শক্তিশালী হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে তিন ধাপ এগিয়ে এখন বাংলাদেশ ৯৭তম। এর আগের বছর ৫ ধাপ পিছিয়ে যাওয়ার পর এই উন্নতি। তবে একই অবস্থানে থাকা সঙ্গীদের নামগুলো খুব একটা আশাপ্রদ নয়। সংঘাতে জর্জর লেবানন, লিবিয়া ও দক্ষিণ সুদান আছে বাংলাদেশের অবস্থানেই।

গত বছরের ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচনের পরপরই গণতন্ত্রের সূচকে উন্নতি হয় বাংলাদেশের। চার ধাপ এগোলেও বাংলাদেশ এখনো আছে ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ বিভাগে। সেই দেশগুলোকেই এই বিভাগে রাখা হয়, যেখানে প্রায়ই অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। বিরোধী দল এবং বিরোধী প্রার্থীদের ওপর সরকারের চাপ এসব দেশে নিত্যকার ঘটনা। যেসব দেশে দুর্নীতির বিস্তার ব্যাপক, আইনের শাসনও দুর্বল। শক্তিশালী নয় নাগরিক সমাজও। এই বিভাগে থাকা দেশগুলোতে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন নয় এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও চাপ দেওয়া হয়ে থাকে।

অর্থনীতিতে অবশ্য সুখবর আছে। গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত অর্থনৈতিক স্বাধীনতার সূচকে সাত ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। পেছনে ফেলেছে ভারত-পাকিস্তানকেও। কিন্তু ভুটান ও শ্রীলঙ্কা এগিয়ে আছে অনেকখানি। বাংলাদেশ আছে ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অমুক্ত’ দেশের তালিকায়। সহজে ব্যবসা করার সূচকেও এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি মাসে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আট ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি উন্নতি করা দেশের তালিকাতেও ঢুকে গেছে দেশ। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এই অগ্রগতির খবর কিছুটা ম্লান হয়ে যায়। এই অঞ্চলে বাংলাদেশ শুধু যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। তা–ও এবার এগোনো গেছে। গতবারের সূচকে আফগানিস্তানও পেছনে ফেলেছিল বাংলাদেশকে।

বৈশ্বিক শিশু অধিকার সূচক বলছে, উন্নতির ধারায় ফিরছে দেশ। সূচকে এগিয়ে ১১৩ থেকে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১০৮তম স্থানে। পেছনে ফেলেছে যুক্তরাজ্য ও নিউজিল্যান্ডের মতো দেশকেও।

তবে দেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকা ঠিক সুবিধা করতে পারছে না। নিরাপদ শহর সূচক ও বিশ্বের অযোগ্য শহরের তালিকায় যথাক্রমে দুই ও এক ধাপ এগোলেও, তাকে ঠিক ধারাবাহিক উন্নতি বলার জো নেই। বরং ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চের শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। দুই ধাপ এগোলেও বিশ্বের সবচেয়ে কম নিরাপদ শহরের তালিকায় রয়েছে ঢাকা। আর বসবাসের অযোগ্যতার দিক থেকে ঢাকার চেয়ে খারাপ অবস্থা যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার দামেস্ক ও নাইজেরিয়ার লাগোসে।


অবনতি যেখানে
আইনের শাসন ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থার’ বৈশিষ্ট্য যেন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেছে! আইনের শাসনের ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ খারাপ। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাংলাদেশের আগে-পরে আছে রাশিয়া ও সিঙ্গাপুর। দুটি দেশই গণমানুষের রায়ের বদলে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসনেই বেশি আগ্রহী।

ওদিকে পুঁজি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় বৈশ্বিক সংযোগ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি হয়নি। ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকেও দেশ পিছিয়েছে দুই ধাপ। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের দক্ষতা সূচকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে অবস্থান ভাগাভাগি করতে হচ্ছে দেশকে। ব্যবসা খাত, প্রযুক্তি ও ডেটা সায়েন্স—এই তিনটি ক্ষেত্রের কোনোটিতেই ৬০টি দেশের মধ্যে শেষ পাঁচ ধাপের বাইরে বের হতে পারেনি বাংলাদেশ।

সম্প্রতি একটি বিষয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে ছাপিয়ে যাওয়ার খবর বেশ আলোচিত হয়েছে। বিশ্ব ক্ষুধা ও অপুষ্টির সূচকে বাংলাদেশ ৮৮তম স্থানে আছে। ভারত (১০২) ঢের পেছনে, পেছনে পাকিস্তানও (৯৪)। আদতে এই সূচকে এবার বাংলাদেশ পিছিয়েছে দুই ধাপ। তবে এই খাতে ভারত-পাকিস্তানকে পেছনে ফেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছে দেশ। গত বছরও এই দুই দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ।

চলতি বছর দেশে নুসরাত হত্যার মতো নারীর প্রতি চরম নৃশংসতার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। নারীর শান্তি ও নিরাপত্তা সূচকেও সবচেয়ে খারাপের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। পিছিয়েছে ১৫ ধাপ। উদ্বেগের বিষয় হলো—সূচক মতে এ দেশের ৫০ শতাংশ পুরুষ মনে করে, নারীদের চাকরি করা উচিত নয়। প্রশ্ন হলো—নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতাই যদি বিঘ্নিত হয়, তবে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে?

এত কিছুর ভিড়ে এ দেশে শান্তিও গেছে কমে। বৈশ্বিক সূচক বলছে বাংলাদেশ আগে ছিল ৯৩তম স্থানে, এখন নেমেছে ১০১-এ। তবে এ ক্ষেত্রেও সান্ত্বনা আছে। ভারত-পাকিস্তানে অশান্তি আরও বেশি!