Thank you for trying Sticky AMP!!

বীরকন্যার স্মৃতিধন্য প্রীতি ভিলা

দ্বিতল পাকা এই বাড়ি প্রীতি ভিলা নামে পরিচিত। গতকাল বেলা একটায় চট্টগ্রাম নগরের আসকারদীঘি এলাকায়।

শহরের মধ্য-পশ্চিম এলাকায় প্রকাণ্ড আসকার খানের দিঘির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ থেকে নেমে গেছে সরু গলি। এই গলি দিয়ে যেতে যেতে শেষ প্রান্তে একেবারে মিউনিসিপ্যালিটির বড় নালার উত্তরে পাশাপাশি দুটি মাটির দোতলা বাড়ি। একটিতে টিনের ছাউনি, অন্যটি বাঁশের তর্জা দিয়ে ছাওয়া। প্রথমটিতে বাড়ি দুটির মালিক মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানি জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার সপরিবার থাকেন। অন্যটি ১০ টাকায় ভাড়া দিয়েছেন। বাসার সামনে কিছুটা জায়গা ঘিরে তাতে ফুলের বাগান করেছে ছেলেমেয়েরা।

পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বীরকন্যা প্রীতিলতা বইয়ে এভাবে অগ্নিযুগের বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের শহরের বাড়ির বর্ণনা উঠে এসেছে। জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার প্রীতিলতার বাবা। মা প্রতিভা দেবী। তাঁদের ছয় সন্তানের মধ্যে প্রীতিলতা দ্বিতীয়। প্রীতিলতার জন্ম পটিয়ার ধলঘাটের মামাবাড়িতে। পরে আসকার খান বা আসকারদিঘির পাড়ের এই বাড়িতে পড়ালেখা শুরু হয় তাঁর।

গলির কোণে এখনো সেই ভিটেতে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি দ্বিতল পাকা বাড়ি। এটি প্রীতি ভিলা নামে পরিচিত। নামফলকে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘প্রীতি ভিলা ১৯৫৪ সাল।’ হোল্ডিং নম্বর লেখা রয়েছে ৩৬। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পাহাড়তলীতে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ শেষে পুলিশের গুলিতে আহত হন প্রীতিলতা। এ সময় পুলিশের হাতে ধরা না পড়তে সায়ানাইড খেয়ে আত্মাহুতি দেন এই বীরকন্যা। এরপর আরও অনেক বছর ওই বাড়িতে ছিলেন জগদ্বন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরে মাটির ঘর ভেঙে একই স্থানে দ্বিতল ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত প্রীতিলতাদের আত্মীয় হন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আসকারদিঘির পাড়ের বাড়িটিতে থেকে তিনি ডা. খাস্তগীর স্কুলে পড়তেন। ৪৭–এর দেশভাগের অনেক পর প্রীতিলতার বাবা দেশ ত্যাগ করেন। তখনো ওই বাড়িটিতে জগদ্বন্ধুর কিছু স্বজন থাকতেন। পরে তা বেদখল হয়ে যায়। এখনো সেটি অর্পিত সম্পত্তি আইনে পড়েছে। কয়েক হাত বদল হয়ে বর্তমানে তা দখলদারদের হাতে রয়েছে।

বর্তমানে এ বাড়িতে থাকেন সানোয়ার আলী নামের বিএনপির প্রয়াত এক নেতার পরিবারের সদস্যরা। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কোনো মন্তব্য করতে রাজি নন। কীভাবে বাড়িটি তাঁদের দখলে এল, তা–ও জানাতে রাজি নন। তবে অর্পিত সম্পত্তি বলে এখানে নতুন করে স্থাপনা করা যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্বিতল বাড়িটিতে পুরোনো আমলের নানা কারুকাজ রয়েছে। দোতলায় ওঠার জন্য বাইরের দিকে একটি ঘোরানো–প্যাঁচানো সিঁড়ি রয়েছে। দ্বিতলে আছে একটি ব্যালকনি। হলুদ রঙের বাড়িটির স্থানে স্থানে ভেঙে যাচ্ছে।

প্রীতিলতা আত্মাহুতি দেওয়ার পর তাঁর বাবা, কাকা, মামাসহ স্বজনেরা যেখানে যেখানে চাকরি করতেন, তাঁদের চাকরি চলে যায়। তারপরও তাঁরা চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। প্রীতিলতার মা ধাত্রীর কাজ করতেন।

জানতে চাইলে সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বলেন, প্রীতিলতার মায়ের হাতে আমার জন্ম (১৯৪০ সালে)। তাঁরা আসকারদিঘির পাড়ের বাড়িতে থাকতেন। অপর্ণাচরণ স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষয়ত্রী হয়েও প্রীতিলতা ওই বাড়িতে থাকতেন সম্ভবত। তাঁর বাবা ও স্বজনদের চাকরি চলে যায় আত্মাহুতির পর।

চট্টগ্রাম শহরে প্রীতিলতার এ রকম একটি স্মৃতিধন্য জায়গা থাকলেও তা সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। এই বাড়িতে বসে তিনি বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন বলে বিভিন্ন বইয়ে উল্লেখ রয়েছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর শামসুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, বিপ্লবের বড় বড় অনেক ঘটনার সাক্ষী চট্টগ্রাম। তাঁদের বসবাসও এখানে। প্রীতিলতা কিংবা বিপ্লবীদের এ রকম স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নেয়নি। এটা দুঃখজনক।