Thank you for trying Sticky AMP!!

বৃষ্টির দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রা শুরু

ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস ছিল কাল। ঈদযাত্রায় মানুষের ভিড় ছিল তাই বেশি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর স্টেশনে। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

থেমে থেমে বৃষ্টি—কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো ভারী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই অবস্থা চললে ঢাকার রাস্তার কী অবস্থা হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ রকম পরিবেশে যাঁরা পরিবার নিয়ে বাসে, ট্রেনে ও লঞ্চে ঢাকা ছেড়েছেন, দুর্ভোগ তাঁদের সঙ্গী হবে, এটি জানাই ছিল। সড়কপথের যাত্রীদের বিপদ আরও বাড়িয়েছে পথের যানজট ও ফেরি পারাপারে দেরি হওয়া।

বৃষ্টিতে ভিজে আর যানজট ঠেলে যাঁরা কোনোরকমে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছেন, বিড়ম্বনা সইতে হয়েছে তাঁদেরও। রেলে ঈদযাত্রারা দ্বিতীয় দিনেও সূচি মেনে চলেনি উত্তরের পথে চলাচল করা বেশির ভাগ ট্রেন।

সকাল থেকেই বাস, ট্রেন, লঞ্চ টার্মিনালে ঘরমুখী যাত্রীর ভিড় ছিল। সন্ধ্যার পরে তাঁদের ভিড় আরও বাড়ে।

ঘরমুখী যাত্রীদের বড় অংশই গতকাল সকাল থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। আজ শুক্রবার ও আগামীকাল শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। সে হিসাবে ঈদের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার আগে গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ছিল শেষ কর্মদিবস। এরপর ১১ থেকে ১৩ আগস্ট ঈদের ছুটি। ১৪ আগস্ট বুধবার অফিস খোলা থাকলেও অনেকে ঐচ্ছিক ছুটি নিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি। ১৬ ও ১৭ আগস্ট শুক্র ও শনিবার আবার সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে টানা ৯ দিনের ছুটি শুরু হচ্ছে।

ঘাটে ফেরি চলাচল ব্যাহত
বেসরকারি চাকরিজীবী শেখ শরিফুল হক যাবেন সাতক্ষীরায়। গত বুধবার রাত সাড়ে ১০টায় গাবতলী থেকে তাঁর বাস ছাড়ার কথা ছিল। সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসটি রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আটকে থাকায় নির্ধারিত সময় ঢাকাতেই পৌঁছাতেই পারেনি। দীর্ঘ আট ঘণ্টা ঘাটে আটকে থাকার পর গতকাল সকাল সাতটায় বাসটি ঢাকায় আসে। এর আধা ঘণ্টা পর বাসটি সাতক্ষীরার উদ্দেশে গাবতলী ছেড়ে যায়।

>১৫টি ট্রেন দেরিতে ছেড়েছে
বৈরী আবহাওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত
সড়কেও ছিল যানজট


শরিফুল হকের সঙ্গে গতকাল রাত পৌনে ১০টায় কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বাসটি সাতক্ষীরায় পৌঁছেছে। স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরা পৌঁছাতে ৮ ঘণ্টা লাগলেও গতকাল লেগেছে ১১ ঘণ্টা। আর বাস ছাড়ার নির্ধারিত সময় হিসাব করলে মোট ২০ ঘণ্টা লেগেছে।

বৈরী আবহাওয়া ও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল দুপুর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত সাত কিলোমিটার পর্যন্ত ছিল গাড়ির সারি। যাত্রীবাহী বাস, কোরবানির পশুবাহী ট্রাক এবং সাধারণ পণ্যবাহী ট্রাক আটকে ছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথেও ব্যাহত হয় ফেরি চলাচল। বৈরী আবহাওয়া থাকায় গতকাল সকাল থেকে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হয়। পদ্মায় প্রবল বাতাস আর স্রোত থাকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে নৌযানগুলো যাত্রী ও যানবাহন নিয়ে পারাপার হয়। বেশি ঝুঁকির মধ্যে ছিল লঞ্চ ও স্পিডবোটগুলো।

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাট সূত্র জানায়, কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে পদ্মা নদীর লৌহজং পয়েন্টে প্রবল স্রোতের কারণে বুধবার দুপুর থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। যে কারণে ঘাটে আটকা পড়ে কয়েক শ যানবাহন। গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত উভয় ঘাটে ছয় শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে।

কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. সালাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বাতাস আর স্রোত সামলাতে না পেরে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে এলে ফেরি চালাতে কোনো অসুবিধা হবে না।

ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ছেড়ে আসা গরুবোঝাই ট্রাকের ব্যাপারী খোকন তালুকদার বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে আসি। এখানে এসে বসে রয়েছি। কোনো ফেরিতে সিরিয়াল পাচ্ছি না। ঘাটে যানবাহনের অনেক চাপ। কখন পারাপার হতে পারব, কেউ বলতে পারছে না। হাট না ধরতে পারলে বড় লোকসান হয়ে যাবে।’

ট্রেন ছেড়েছে দেরিতে
নাবিলা হক বৃষ্টিতে ভিজে যখন কমলাপুরে রেলস্টেশনে ঢোকেন, তখন দুপুর ১২টা ১০ মিনিট। এসে দেখেন, রাজশাহী এক্সপ্রেস ট্রেনটি তখনো প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করেনি। দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও বিকেল পাঁচটার পর স্টেশন ত্যাগ করে রাজশাহী এক্সপ্রেস।

বিকেলে কথা হয় নাবিলা হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিতে ভিজে তাড়াহুড়ো করে এলাম। ভাবলাম, এসেই সঙ্গে সঙ্গে ট্রেনে উঠে পড়ব। সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন ছিল গতকাল। কমলাপুর থেকে বিশেষ ৩ টিসহ মোট ৫৫টি ট্রেন ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। ঈদযাত্রার প্রথম দিনের তুলনায় গতকাল শিডিউল বিপর্যয় বেশি ঘটেছে। গতকাল ১৫টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দেরিতে ছেড়েছে।

দিনের শুরুতে রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা। ট্রেনটি কমলাপুর ছেড়ে যায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে। চিলাহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও স্টেশন ছাড়ে সাড়ে ১০টায়। সকাল ৯টার রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়েছে বেলা ১১টায়। দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস সকাল ১০টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ছেড়েছে দুপুর সাড়ে ১২টায়।

কমলাপুর স্টেশন ব্যবস্থাপক আমিনুল হক বলেন, স্টেশনে যাত্রী বেশি থাকায় ওঠানামা করতে তাদের সময় বেশি লাগে। তা ছাড়া অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেনের গতি কম। এ জন্য কিছুটা দেরি হচ্ছে।

মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, যানজট
উত্তরের পথে হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা মহাসড়কে গত বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত সংস্কারকাজ চলে। এখনো সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ রয়ে গেছে। যে কারণে গাড়ি চলছে কিছুটা ধীরগতিতে। স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের ২২ জেলার ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন চলাচল করলেও ঈদের সময় দুই থেকে তিন গুণ যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পায়।

স্বাভাবিক সময়ে ঢাকা থেকে হাটিকুমরুল পৌঁছাতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে, গতকাল ৭ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে।
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুরের টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়কে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলছে। সড়কের দুই পাশেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। এর ফলে গাজীপুর, কুনিয়া বড়বাড়ী, বোর্ডবাজারসহ কয়েকটি স্থানে এক লেনে গাড়ি চলাচল করে। ঘরমুখী মানুষের কারণে মহাসড়কে যানবাহন বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। এর মধ্যে বৃষ্টির কারণে গত বুধবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সড়কের বেশ কয়েকটি স্থানে পানি জমে যায়। এতে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল সফিপুর বাজার এলাকায় উড়ালসড়কের কাজ চলমান থাকায় সেখানেও এক লেনে যানবাহন চলাচল করছে। ফলে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশারফ হোসেন বলেন, গতকাল তাঁদের প্রায় ২০০টি বাস উত্তরাঞ্চলের দিকে যাত্রা করে। বৃষ্টির কারণে প্রতিটি বাস দেরি করে ঢাকায় আসছে। গরুবাহী ট্রাকের কারণে সড়কে যানজট রয়েছে। ফলে বাস ছাড়তেও কিছুটা দেরি হচ্ছে।

লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছাতে ভোগান্তি
গতকাল বেলা দুইটার পর থেকে সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় নদীপথে ঘরমুখী মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বৃষ্টি ও যানজটের সঙ্গে সড়ক দখল করে বসা ফলের দোকানের কারণে যাত্রীদের টার্মিনালে পৌঁছাতে নাজেহাল হতে হয়েছে।

পিরোজপুরের ভান্ডারিয়াগামী এমভি রাজদূত লঞ্চের যাত্রী শিলারা বেগম বলেন, বৃষ্টি ও যানজটের কারণে ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট পৌঁছাতে তাঁর আধা ঘণ্টা লেগেছে, অথচ পাঁচ মিনিটের পথ। অন্তত ঈদের সময় এসব এলাকায় যানজট দূর করতে পুলিশের বাড়তি প্রস্তুতির দরকার।