Thank you for trying Sticky AMP!!

বেতন হচ্ছে না শত শত সরকারি চিকিৎসকের

ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিলেও বেতন পাচ্ছেন না সরকারি হাসপাতালের এক হাজারের বেশি চিকিৎসক। পর্যাপ্ত বাজেট না থাকায় উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের এক থেকে তিন মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া পড়েছে। গত ডিসেম্বরে নিয়োগ পাওয়া ৩৯তম বিসিএসের চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা বেশি।

বেতন বকেয়া রয়েছে, এমন ৬০০ চিকিৎসকের তালিকা প্রথম আলোর কাছে রয়েছে। তবে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারদের সংগঠন হেলথ ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, এই সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম সেলিম রেজা বলেন, করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসকেরা সম্মুখসারির যোদ্ধা। এই সময়েও চিকিৎসকদের বেতন হচ্ছে না, এটি অমানবিক ও দুঃখজনক। সবার পরিবার রয়েছে, খরচ আছে। মন্ত্রণালয়ের উচিত, দ্রুত এ সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা।

অন্তত ২০ জন ভুক্তভোগী চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত জানুয়ারি থেকে দেশের সব সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের বেতন হচ্ছে ‘আইবিএস++’ নামক একটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে। এ সফটওয়্যারে প্রত্যেক চিকিৎসকের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থাকে। নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে প্রতি মাসের বেতন বিল জমা দিতে হয়।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশের অনেক উপজেলা থেকে সফটওয়্যারে বেতন বিল জমা দেওয়া যাচ্ছে না। বেতন বিল জমা দিতে গেলে ‘ইনসাফিশিয়েন্ট বাজেট বা অপর্যাপ্ত বরাদ্দ’ লেখা আসছে। উপজেলার হিসাব বিভাগ বলছে, চিকিৎসকদের বেতন বাবদ বরাদ্দ না আসায় এমন সমস্যা হচ্ছে।

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন চিকিৎসকের ‍দু–তিন মাসের বেতন বকেয়া। সেখানকার একজন চিকিৎসক বলেন, ‘বরাদ্দ এলে বেতন পাব। কিন্তু কবে পাব জানি না। ব্যাপক পরিসরে এভাবে চিকিৎসকদের বেতন হচ্ছে না, এটি মেনে নেওয়া যায় না।’

বুড়িচং ‍উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) মীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকদের বেতন বকেয়ার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। কোনো সমাধান হয়নি। যাঁরা ৩৯ বিসিএস দিয়ে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁদের প্রায় সবার তিন মাসের বেতন বকেয়া।

>

৩৯ বিসিএসে নিয়োগ পাওয়া উপজেলা পর্যায়ের চিকিৎসকদের এক থেকে তিন মাস বেতন বকেয়া।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১২ জন চিকিৎসকের দুই–তিন মাসের বেতন বকেয়া। সেখানকার একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, করোনার এ দুর্যোগে যাঁরা সামনে থেকে লড়ছেন, তাঁরাই বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা হতাশাজনক। প্রণোদনা পাওয়ার বিষয় পরে, আগে যেন বেতনের মতো ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত করা হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন বেতন বকেয়া পড়েছে, তা চিকিৎসকদের অনেকেই স্পষ্টভাবে জানেন না। বেতন না পেলেও চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ তাঁদের আশ্বস্ত করেছে, কিছুদিনের মধ্যে এ সমস্যা কেটে যাবে।

দুই থেকে তিন মাস বেতন বকেয়া রয়েছে খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১০ জন, কুমিল্লার চান্দিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১৯, রাজশাহী গোদাগাড়ীর ১৪, জামালপুর সদরের ৫, কুমিল্লার দাউদকান্দির ৮, নরসিংদীর রায়পুরার ৫ এবং ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের ৫ জন চিকিৎসকের।

চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টরস ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত দেশের ২৮৭ জন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে কর্মরত। চিকিৎসকেরা বলেছেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও তাঁরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। তাঁদের বেতন বকেয়া থাকা অমানবিক।

এ বিষয়ে ১৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে উপজেলা পর্যায়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বেতন-ভাতা বকেয়া পড়ার তিনটি সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে। ‘আইবিএস++’ একটি সংবেদনশীল সফটওয়্যার। মাঠপর্যায়ের বিভিন্ন স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে চাহিদা পাঠানোর সময় সতর্কতা অবলম্বন না করা এবং নিয়মিত বরাদ্দ থেকে অন্যান্য বিল পরিশোধ করা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই চিঠিতে বলা হয়, ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বেতন-ভাতা ও সরবরাহ খাতে তৃতীয় কিস্তির বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধৈর্য ধরতে এবং নিয়মিত আইবিএস++ চেক করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বেতনের কোনো একটি খাতেও বরাদ্দ না থাকলে আইবিএস++ সফটওয়্যার বেতন বিল জমা নেয় না। মাঠপর্যায় থেকে অর্থ চাহিদা পাঠানোর সময় সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি হলেও তাই বেতন আটকে যাচ্ছে। উপজেলা থেকে চাহিদা পাঠানোর ক্ষেত্রে অসতর্কতার কারণেও কিছু সমস্যা হয়েছে।

৩৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ৪ হাজার ১৬১ জন চিকিৎসক গত ডিসেম্বরে নিয়োগ পান। তাঁদের বেতন-ভাতা বাবদ ১৩৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ অর্থ বরাদ্দের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অর্থ) শেখ মনজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুনের বেতন-ভাতা বরাদ্দ দেওয়া শুরু হয়েছে। সংশোধিত বাজেটে ৩৯তম বিসিএসের চিকিৎসকদের অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে। মাঠপর্যায়ে জানানো হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যে বেতনসংক্রান্ত জটিলতা থাকবে না।