Thank you for trying Sticky AMP!!

বৈরুতের বিস্ফোরণে আরেক প্রবাসীর মৃত্যু, লাশ ফেরত চান মা

গত ৪ আগস্ট রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। ছবি: এএফপি

লেবাননের বৈরুতের বিস্ফোরণে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেক বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মো. রাশেদ (৩৭) নামে প্রবাসী ওই কর্মীর বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। বৈরুতে বিস্ফোরণস্থলের অদূরে একটি রেস্তোরাঁর বাবুর্চির সহকারী হিসেবে কাজ করতেন তিনি। এ নিয়ে ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন বাংলাদেশি নিহত হলেন।

লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ৪ আগস্ট রাতে লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বন্দরের গুদামে রক্ষিত রাসায়নিক থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১০৬ জন বাংলাদেশি আহত হন। আহতদের মধ্যে ২১ জন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সদস্য, অন্যরা প্রবাসী কর্মী। এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে খাবার ও ওষুধ সহায়তা নিয়ে বিমানবাহিনীর একটি পরিবহন বিমান গতকাল বৈরুতে পৌঁছেছে।

বৈরুত বিস্ফোরণে সর্বশেষ মারা যাওয়া মো. রাশেদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের পশ্চিম নন্দলালপুর এলাকায়। গতকাল সোমবার রাশেদদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মাতম চলছে। শনিবার সন্ধ্যায় পরিবারটি রাশেদের মৃত্যুর খবর পায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে রাশেদ দ্বিতীয়। ২০০৮ সালে বাবা হাফিজ মিয়ার মৃত্যুর পর রাশেদ সংসারের হাল ধরেন। একটি টেক্সটাইল কারখানায় ঝালাইয়ের কাজ নেন। কিন্তু টেনেটুনেও সংসারটা চালাতে পারছিলেন না। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা খরচ করে ২০১৫ সালের ২২ জুন লেবানন পাড়ি দেন রাশেদ। এ জন্য জমি বিক্রি করতে হয়, ছোট বোনের বিয়ের জমানো টাকাতেও হাত পড়ে। এরপর থেকেই মূলত পরিবারটি রাশেদের আয়েই চলত।

গতকাল বাসায় গিয়ে দেখা গেল রাশেদের ষাটোর্ধ্ব মা লুৎফুন নেছা আহাজারি করছেন। বলছেন, ‘পাঁচ বছর দুই মাস মানিকরে দেখি
না, ওর শরীরের ঘ্রাণ পাই না। আপনারা আমার মানিকের লাশটা আইনা দেন, ধরে একটু আদর করব।’

এই মা আক্ষেপ করে বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগে ছেলের সঙ্গে তাঁর শেষ কথা হয়। ছেলে তাঁর শরীরের খোঁজ নেন। নিয়মিত খাবার ও ওষুধ নেওয়ার তাগিদ দেন।

মঙ্গলবার রাতে বৈরুতে বিস্ফোরণের হতাহতের খবর টেলিভিশনে দেখে পরিবারটি রাশেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় জানিয়ে ছোট বোন নাসরিন আক্তার বলেন, বিস্ফোরণের পরদিন তাঁদের প্রবাসী খালাতো ভাই জনি জানান, রাশেদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জনি খবর নিয়ে জানতে পারেন বিস্ফোরণে ভবনের কাচ ভেঙে রাশেদের মাথায় পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। তাঁকে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর শনিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে রাশেদের লাশ শনাক্ত হয়।

নারায়ণগঞ্জের ইউএনও নাহিদা বারিক প্রথম আলোকে বলেন, পরিবারের দাবি অনুযায়ী লাশ দেশে আনার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাঁরা যাতে চলতে পারেন, সে জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের ঘর তৈরির জন্য টিন, রাশেদের মাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড এবং বোন নাসরিনকে সেলাই মেশিন দেওয়া হবে।