Thank you for trying Sticky AMP!!

বোরোতে কৃষকের খরচ বাড়বে ৭৫৭ কোটি টাকা

দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বোরো ধানের বীজতলা তৈরির কাজও চলছে সমানতালে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলের জমিতে সেচ দেওয়া শুরু হবে। এ সেচ দেওয়ার যন্ত্রের প্রধান জ্বালানি ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ১৫ টাকা। এতে করে এবারের বোরো মৌসুমে কৃষকের সেচ বাবদ বাড়তি খরচ হবে ৭৫৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ হিসাব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের। অন্যদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে, বিঘাপ্রতি সেচের জন্য বাড়তি ৩০০ টাকা খরচ জোগানোর পাশাপাশি ধান বিক্রিতে প্রায় ৩ শতাংশ মুনাফা কমবে কৃষকের।

কৃষিবিষয়ক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর হিসাবে, কৃষকের ধানের উৎপাদন খরচ প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। সার ও কীটনাশকের দাম ঊর্ধ্বমুখী। কৃষিশ্রমিকের মজুরিও বাড়ছে। সব মিলিয়ে প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ বছরে বাড়ছে এক থেকে দুই টাকা করে। সরকারি হিসাবে, গত মৌসুমে বোরো ধানের কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ টাকা। অর্থাৎ প্রতি মণ ধান উৎপাদনে কৃষকের খরচ হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। এবার সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি চাপ তৈরি করবে।

ধান বিক্রিতে কৃষকের মুনাফা কমবে প্রায় ৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) জানায়, দেশে ধান ছাড়াও কৃষির অন্য খাতেও সেচযন্ত্রের দরকার হয়। যেমন শীতকালীন সবজি, পুকুর ও ঘেরে মাছ চাষে সেচযন্ত্রের ব্যবহার হয়। সারা দেশে প্রায় ১৬ লাখ ডিজেলচালিত ছোট সেচযন্ত্র (শ্যালো মেশিন) রয়েছে। জমি চাষ থেকে শুরু করে পণ্য পরিবহন, নৌযান চালানোর মতো কাজে সারা বছর শ্যালো মেশিনের ব্যবহার হয়। এসব যন্ত্র ডিজেলনির্ভর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর ৪৮ লাখ ২০ হাজার হেক্টর (৩ কোটি ২ লাখ ৯১ হাজার বিঘা) জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। এর ৭০ শতাংশ বা ৩৩ লাখ ৭৪ হাজার হেক্টর (২ কোটি ৫২ লাখ ২০ হাজার বিঘা) জমিতে সেচ দেওয়া হবে ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। এ হিসাবে কৃষককে বাড়তি খরচ গুনতে হবে ৭৫৬ কোটি ৬১ লাখের বেশি টাকা। বাকি ৩০ শতাংশ জমিতে সেচ দেওয়া হবে বিদ্যুৎ–চালিত সেচযন্ত্র দিয়ে। এমনিতেই ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র ব্যবহারে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বেশি। এবার বিদ্যুৎ–চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করা কৃষকদের সঙ্গে তাদের খরচের পার্থক্য আরও বেড়ে যাবে।

এ ব্যাপারে বিআইডিএসের সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম যদি বাড়াতেই হতো, তাহলেও ডিজেল ও কেরোসিনের দাম এত বাড়ানো ঠিক হয়নি। কারণ, এ দুটি জ্বালানির বেশি ব্যবহার হয় ধান চাষ, নৌকা চালানোসহ অন্যান্য কাজে, যা গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা রাখে। করোনার কারণে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় কমে গেছে। নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামের গরিব মানুষ সবচেয়ে বিপদে পড়বে। জ্বালানি দুটির দাম কমানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হিসাবে, প্রতি বিঘা জমিতে সেচ ও চাষ দিতে দরকার ২০ লিটার ডিজেল। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে এ বছর কৃষকের বিঘাপ্রতি ৩০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে। এতে তাঁর মুনাফাও প্রায় ৩ শতাংশ কমে যাবে। মাড়াই, পরিবহনের কাজেও ডিজেলচালিত শ্যালো মেশিন ব্যবহৃত হয়। ধান ছাড়াও নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত রবি মৌসুমে শীতকালীন সবজি, গম, ভুট্টাসহ প্রধান ফসলগুলো উৎপাদিত হয়। বৃষ্টিহীন এ মৌসুমে সেচ ছাড়া ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়। নদী, সাগর ও জলাশয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত নৌকার জ্বালানি হিসেবেও ডিজেল ব্যবহৃত হয়। সব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে সব ধরনের কৃষিপণ্যের ওপরে ডিজেলের এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম আসাদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ানোর ফলে বোরো মৌসুমে ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও খুব বেশি সমস্যা হবে না। এ সরকার কৃষিবান্ধব, নিশ্চয়ই কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে কৃষকের ওপর ওই বাড়তি চাপ কমাতে কোনো না কোনো উদ্যোগ নেবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে উৎপাদিত ধানের প্রায় ৬০ শতাংশ আসে বোরো মৌসুম থেকে। এ মৌসুমে ২ কোটি ৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে কী ধরনের প্রভাব পড়বে, তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। সে অনুযায়ী পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।