Thank you for trying Sticky AMP!!

ব্রুনেইয়ে কর্মী পাঠানো হঠাৎ কমে গেছে

>
  • গত বছর ব্রুনেইয়ে কর্মী পাঠানো কমেছে ৪৮ %
  • ব্রুনেইয়ে প্রতারিত হওয়া কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে
  • বাংলাদেশ দূতাবাসে প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ছে
  • প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর অবস্থা পরিবর্তনের আশা

নির্মাণ খাতে সৌদি আরবে একজন বাংলাদেশি কর্মী প্রতি মাসে গড়ে আয় করেন সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা। একই কাজ ব্রুনেইয়ে করলে পাওয়া পাওয়া যায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। যে কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশের শ্রমবাজার বাংলাদেশের জন্য বেশ সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। প্রায় আট বছর ধরে দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছর ব্রুনেইয়ে জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের হোঁচট খেয়েছে বাংলাদেশ।

সরকারের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ব্রুনেইয়ে কর্মী গেছেন ৮ হাজার ৫৮৭ জন। কিন্তু বিদায়ী ২০১৮ সালে সেখানে কর্মী গেছেন মাত্র ৪ হাজার ৪৮০ জন। যা এর আগের বছরের তুলনায় ৪৮ শতাংশ কম।

বিএমইটির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর ৮ হাজার ৮১৬ জন কর্মী ব্রুনেই যেতে পারেন বলে তাঁরা ধারণা করেছিলেন। কর্মী পাঠানো কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন তাঁরা। এ ছাড়া কাজের বৈধ অনুমতিপত্র ছাড়া অনেকে সেখানে গিয়ে বিপদে পড়ছেন।

চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ব্রুনেইয়ে গেছেন মাত্র ৮০৮ জন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে গত বছরের চেয়ে এ বছর কর্মী যাওয়ার সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রুনেই সফরের মধ্য দিয়ে অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করছেন তাঁরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দুই দেশের মধ্যে কোনো চুক্তি না থাকায় বেসরকারি খাতের ব্যবস্থাপনায় কর্মী যাচ্ছেন ব্রুনেইয়ে। অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে ভুয়া চাকরিপত্র নিয়ে সেখানে প্রতারিত হচ্ছেন। ব্রুনেইয়ের বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম বিভাগে এ–সংক্রন্ত প্রচুর অভিযোগ জমা পড়ছে। আবার অনেকে কোনোভাবে চাকরি পেলেও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। বকেয়া বেতন আদায়ে ২০১৭ সালে ২২৯ জন কর্মীকে সহায়তা করেছে দূতাবাসের শ্রম বিভাগ। গত বছর এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৩১০ জনে। এসব ঘটনা সম্ভাবনায় এই শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা।

২২ এপ্রিল ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়া ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালুর বিষয় নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে প্রবাসী শ্রমিকদের ব্যাপারে একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ করার প্রস্তাব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ব্রুনেইয়ের শ্রমবাজারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে যে আলোচনার সূচনা হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। দক্ষ কর্মী পাঠানো ও শ্রমবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জোর দেওয়া হচ্ছে। এতে করে আগামী দিনগুলোতে কর্মী পাঠানো আরও বাড়বে।

জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসসমৃদ্ধ ব্রুনেইয়ের জনসংখ্যা সাড়ে চার লাখ। দেশটির জনগণের মাথাপিছু আয় প্রায় ৮৪ হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে দেশটির অবকাঠামো নির্মাণ খাতে কাজ করছেন বাংলাদেশি কর্মীরা। নির্মাণকাজ ছাড়াও নার্স, গৃহকর্মী, কৃষি, জেলে, বাবুর্চি ও প্রকৌশলী খাতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে দেশটিতে।

জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বায়রার মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আকারে ছোট হলেও আয় বিবেচনায় ব্রুনেই খুবই সম্ভাবনাময় বাজার। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে অবশ্যই ব্রুনেইয়ে কর্মী পাঠানোর পথ সুগম হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ১৯৯২ সাল থেকে ব্রুনেই যাচ্ছেন বাংলাদেশের কর্মীরা। সে বছর দেশটিতে ২২৮ জন কর্মী যান। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য গেছেন ৭২ হাজার ৭৩ জন কর্মী। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৩০ হাজার বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন।