Thank you for trying Sticky AMP!!

জাহাজে করে রোহিঙ্গাদের চট্টগ্রাম থেকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

ভাসানচরে যাওয়া রোহিঙ্গা পরিবারগুলোতে স্বস্তি

হামলা ও হত্যাযজ্ঞের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে পরিবারের ১১ জন সদস্য নিয়ে মিয়ানমারের বুচিদং জিমখালী গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন কামাল হোসেন। পাহাড়-জঙ্গল, ঝড়-বৃষ্টি মাড়িয়ে এ দেশে এসে উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় পান। শুক্রবার কামাল হোসেনের ছেলে ও মেয়ের দুটি পরিবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় অন্যদের সঙ্গে ভাসানচরে পৌঁছেছে। মুঠোফোনে ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথার পর স্বস্তি পেয়েছেন কামাল হোসেন। সেখানকার থাকার জায়গা, রাস্তাঘাট অনেক ভালো। তারা সবাই খুশি।

কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের ঘরগুলোতে ঝড়-বৃষ্টি, খুব রোদ বা শীতে খুব ভুগতে হয়। ঘুমই হয় না। ভাসানচরের ঘর দেখে ছেলেমেয়েরা তাঁকে জানিয়েছে সেখানে নিশ্চিন্তে ঘুমানোর সব রকম আয়োজনই রয়েছে। তাঁর ধারণা, ভবিষ্যতে আরও অনেকে ভাসানচরে যাওয়ার আগ্রহ দেখাবে।

ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গাদের বহনকারী জাহাজ

রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি আজ শুক্রবার দুপুরের পর নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে পৌঁছেছে। বেলা সোয়া ২টার দিকে রোহিঙ্গা দলটি ভাসানচরে পা রাখে। দলটিতে নারী-পুরুষ ও শিশু মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী ৩৯টি বাস উখিয়া কলেজের মাঠ থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বিএএফ শাহীন কলেজ মাঠ ও বোট ক্লাব এবং এর আশপাশের এলাকায় অস্থায়ী ট্রানজিট শিবিরে আনা হয়। সেখান থেকে নৌবাহিনীর ছয়টি ও সেনাবাহিনীর একটি জাহাজে করে রোহিঙ্গারা ভাসানচরের উদ্দেশে যাত্রা করে। ভাসানচরে পৌঁছানো রোহিঙ্গারা মুঠোফোনে কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে অবস্থান করা তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছেন।

আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং এলাকার রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ঘুরে ভাসানচরে যাওয়া কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। এসব পরিবারের লোকজন তাদের কোনো নাম প্রকাশ করতে সম্মত হয়নি। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করা শিবিরসংশ্লিষ্ট এলাকার কয়েকটি রোহিঙ্গা সংগঠনের লোকজন ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা পরিচয় প্রকাশ করতে চায় না।

৬৮ বছরের এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, তাঁর কথাতেই তাঁর ছেলেসহ পরিবারের চারজন ভাসানচরে গেছে। তিনি মেয়ের সঙ্গে কুতুপালং শিবিরে রয়ে গেছেন। তাঁর ধারণা, বাংলাদেশে বিপদের সময় তাঁরা আশ্রয় পেয়েছেন। এই দেশ তাঁদের বিপদে ফেলবে না, এই বিশ্বাস থেকেই তিনি ছেলেকে ভাসানচরে পাঠান।

ভাসানচরে যাওয়ার পথে জাহাজে রোহিঙ্গারা

কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের সাতজন রোহিঙ্গা দলনেতার (মাঝি) সঙ্গে কথা হল। তাঁরা বলেন, তাঁদের জানামতে ভাসানচরে যেতে কাউকেই জোর করা হয়নি। উন্নত বাড়ি, বিদ্যুৎ, স্কুল, বিশুদ্ধ পানি, টেলিযোগাযোগ, কৃষি খামার, পাকা সড়ক, উন্নত স্যানিটেশন, বেড়িবাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, বিনোদনের ব্যবস্থা, হাসপাতাল, জীবিকা নির্বাহের সুযোগসহ নানা সুবিধার কথা শুনে অনেকেই ভাসানচরে গিয়েছে। এখানকার রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে একটা দল যেহেতু গিয়েছে আশা করা যায় কিছুদিনের মধ্যেই ভাসানচরের ভালো-মন্দ নিয়ে খবরাখবর পাওয়া যাবে। প্রথম দলটি ভালো থাকলে পরে হয়তোবা ভাসানচরে যেতে রোহিঙ্গাদের লাইন পড়ে যাবে।

লেদা রোহিঙ্গা শিবিরের এক মাঝি গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ভাসানচর ঘুরে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ভাসানচরের অবকাঠামো থেকে শুরু করে সবকিছু উন্নত মানের। আগে কিছু অপপ্রচারের কারণে রোহিঙ্গারা সেখানে যেতে চায়নি। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে তাদের স্বদেশভূমির কাছাকাছি থাকতে চায়, অনেকে মনে করে দুই-তিন মাসের মধ্যে তারা স্বদেশে ফিরে যেতে পারবে। সে ক্ষেত্রে উখিয়া তাদের জন্য সুবিধাজনক জায়গা।

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন তুলেছে জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই স্থানান্তর বন্ধের দাবি জানিয়েছে।

তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের কাউকে জোর করে ভাসানচরে নেওয়া হচ্ছে না। যারা সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে, শুধু তাদেরই স্থানান্তর করা হচ্ছে।

Also Read: ভাসানচরে পা রাখল রোহিঙ্গাদের প্রথম দল