Thank you for trying Sticky AMP!!

ভুয়া জামিনদারে নব্য জেএমবির আঞ্চলিক 'কমান্ডার' বুলবুলের জামিন

>
  • নব্য জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘কমান্ডার’ বুলবুল।
  • গত ১৮ অক্টোবর জামিন পান বুলবুল।
  • চট্টগ্রাম আদালতের পিপি ও পুলিশ বিষয়টি জানত না।
  • দুই জামিনদারের নাম-ঠিকানা ভুয়া।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গত বছরের অক্টোবর মাসে নব্য জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘কমান্ডার’ বুলবুল আহমেদ জামিন পেলেও বিষয়টি জানতেন না সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। জঙ্গি বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগার থেকে পুলিশ আনতে গেলে গত বছরের নভেম্বর মাসে বিষয়টি প্রথম ধরা পড়ে। তখন জানা যায়, জঙ্গির পক্ষে জামিননামায় উল্লেখ করা জামিনদারদের নাম-ঠিকানা ভুয়া। তবে অন্য মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় কারাগার থেকে বের হতে পারেননি দুর্ধর্ষ এই জঙ্গি।

গত বছরের ১৮ অক্টোবর হাইকোর্ট থেকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় জামিন পান বুলবুল। তাঁর আইনজীবী সরওয়ার কামাল ওই বছরের ১৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিননামা দাখিল করেন। নিয়ম অনুযায়ী জামিননামার সঙ্গে দুজন জিম্মাদারের নাম দিতে হয়। জঙ্গির জামিনদার হন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানার তুলসীপাড়ার জালাল, আর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছানগরের জামাল। জঙ্গি বুলবুলের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায়।

পরে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করে জানতে পারে ওই দুই জিম্মাদার ভুয়া। বিষয়টি গত ৭ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলিকে লিখিতভাবে জানায় পিবিআই। এরপর ১৩ মার্চ জঙ্গি বুলবুলের জামিন বাতিল চেয়ে সরকারি কৌঁসুলি আবেদন করলে তদন্তের নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর আদালত।

প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, জঙ্গি বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গত বছরের ৪ নভেম্বর আদালতে আবেদন করে পিবিআই। পরদিন চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। কিন্তু বুলবুলকে রিমান্ডে নিতে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা গত বছরের ২০ নভেম্বর কারাগারে যান। কারা কর্তৃপক্ষ পিবিআইকে জানায়, এই মামলায় বুলবুল জামিনে রয়েছেন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা জামিনদারকে খুঁজে বের করতে গোবিন্দগঞ্জ থানায় চিঠি পাঠান। থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) জাফর ইকবাল গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে জানান, ওই ঠিকানায় জালাল কিংবা জামাল নামের কেউ নেই। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামও একই কথা জানান।

একইভাবে কর্ণফুলী থানার মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত হন ইছানগরে জামাল নামের কেউ বুলবুলের জামিনদার হননি।

আইনজীবীরা জানান, কোনো আসামির জামিনদার হতে হলে ওই ব্যক্তিকে আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সামনে সশরীরে হাজির হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে হয়। এরপর জামিননামায় সই করতে হয়। কিন্তু ওই দুই জামিনদার ছিলেন ভুয়া।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুরুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জঙ্গি বুলবুলের জামিননামায় ভুয়া জামিনদার সই করার সুযোগ নেই। এ রকম হয়ে থাকলে তিনি বিষয়টি দেখবেন।

এদিকে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পরও বুলবুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে কেন ১৫ দিন সময় লাগল তা জানতে চাইলে সন্তোষ কুমার চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, হাসানসহ কয়েকজনকে জঙ্গির সঙ্গে বুলবুলকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। সে জন্য দেরি হয়।

২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর নগরের কর্ণফুলী থানার ইছানগর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে বুলবুল আহমেদসহ চার জঙ্গিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মাসে সদরঘাট থানার মাঝিরঘাটে তহবিল সংগ্রহরের জন্য জঙ্গিদের একটি দল বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রায় চার লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। এ ঘটনায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দুই জঙ্গি মারা যান। নিহত হন ওই কর্মকর্তা। বুলবুল জঙ্গিদের ওই অভিযানেও ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নগরের আকবরশাহ, কর্ণফুলী, সদরঘাট এবং ঢাকার বিমানবন্দর থানায় জঙ্গি হামলা ও সংশ্লিষ্টতার ঘটনায় ১০টি মামলা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, ভুয়া জামিনদারের মাধ্যমে জঙ্গি বুলবুলের জামিন নেওয়ার বিষয়টি আদালত পিবিআইকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।

ভুয়া জামিনদারের বিষয়ে বুলবুলের আইনজীবী সরওয়ার কামাল বলেন, জিম্মাদার হওয়ার কথা ছিল বুলবুলের স্ত্রীর। ভুলে তাঁর মামা শ্বশুর জামালের নাম ও ঠিকানা লেখা হয়েছে। আর তাঁর সহকারী ভুলে গাইবান্ধার জামিনদারের ঠিকানা লিখেছেন। সংশোধনের জন্য বিষয়টি আদালতকে লিখিতভাবে জানাবেন তিনি।

ভুয়া জামিনদার দেখিয়ে দুটি মামলায় আরও সাত আসামি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার তথ্য পেয়েছে ডিবি। ২০১৬ সালের জুন মাসে ওই ঘটনা ঘটে। এ মধ্যে একটি ডাকাতির অন্যটি চুরির মামলা। দুটি মামলারই তদন্ত কর্মকর্তা নগর ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এলাকায় ডাকাতি ও চুরির দুটি ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের এপ্রিলে। গ্রেপ্তারের সময় আসামিরা নাম-ঠিকানা ভুল বলেছিলেন। পরে ভুয়া জামিনদার দেখিয়ে তাঁরা ওই বছরের জুন মাসে জামিনে বেরিয়ে যান। এরপর থানা থেকে প্রতিবেদন আসে আসামির নাম-ঠিকানা ভুয়া। পরে আসামিদের খুঁজে বের করতে ১৪ জামিনদারকে খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় তাঁদেরও নাম-ঠিকানা ভুয়া।

ভুয়া জামিনদারদের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো আইনজীবী এসব অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত থাকলে সমিতি থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতও চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারবেন।