Thank you for trying Sticky AMP!!

ভোগান্তি ছাড়াই ঘরে আসছে জমির পর্চা

জমির পর্চা তুলতে এখন আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেকর্ড রুমে এসে আবেদন করতে হয় না। দালালের কাছে ধরনা দিতে হয় না। তীর্থের কাকের মতো বসেও থাকতে হয় না। অনলাইনে আবেদন করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডাকযোগে পর্চার কাগজ ঘরেই চলে আসে।

কোনো রকম ঝুট-ঝামেলা ছাড়াই জমির পর্চা পাওয়ার এমন নজির টাঙ্গাইল জেলার। জেলা প্রশাসনের ‘হাতের মুঠোয় পর্চা’ কর্মসূচির বদৌলতে ইউনিয়ন তথ্য ও সেবাকেন্দ্র (ইউডিসি) বা পৌরসভা ডিজিটাল কার্যালয় (পিডিসি) থেকে যে কেউ অনলাইনে নির্ধারিত ফি দিয়ে পর্চার জন্য আবেদন করতে পারেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেকর্ড রুম থেকে পর্চা প্রস্তুত করে ডাক বিভাগের গ্যারান্টেড এক্সপ্রেস পোস্টের (জিইপি) মাধ্যমে সরাসরি ব্যক্তির ঠিকানায় পর্চা সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে জনগণের হয়রানি কমেছে, সময় ও অর্থের অপচয়ও কমেছে।

জেলার কালিহাতী উপজেলার কোকডহরা ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল কালাম। পেশায় ইট-বালুর ব্যবসায়ী। লেখাপড়া জানেন না। জমির পর্চা তোলার জন্য ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকে অনলাইনে আবেদন করেন কালাম। ১১ দিনের মাথায় তাঁর বাড়ির ঠিকানায় ডাকযোগে পৌঁছে যায় জমির পর্চা। আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘরের পাশের ইউনিয়ন থেকে আবেদন করলাম, আর আমার জিনিস আমার হাতে চলে এল। তা–ও একদম আসল পর্চা। অফিস-আদালতের চক্করে পড়তে হলো না। এত সহজে জমির পর্চা পাব ভাবি নাই।’

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেকর্ড রুম সূত্রে জানা যায়, গত ১০ মার্চ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে পর্চার জন্য আবেদন জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৭০৭টি। এর মধ্যে ডাকযোগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৩৭টি। বাকি ৬৭০টি আবেদনের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। সরকারি ছুটির দিন বাদে কার্যদিবসের হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৭৫টির মতো আবেদন অনলাইনে জমা পড়ছে।

হাতের মুঠোয় পর্চা কর্মসূচিটি বাস্তবায়ন করছেন টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোস্তারী কাদেরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আগে একটা পর্চা তুলতে দূর–দুরান্ত থেকে আসা লাগত। পর্চা তুলে দেওয়াকে কেন্দ্র করে দালাল চক্র গড়ে উঠেছিল। অনলাইনে আবেদনের পর ডাকযোগে পর্চা পাঠিয়ে দেওয়ায় জনগণের ভোগান্তি কমেছে। এই পদ্ধতি বেশ সাড়া ফেলেছে।

সরকারিভাবে জরিপ করা জমিজমার বিবরণসংবলিত সরকারি দলিলকে বলে ‘খতিয়ান’। এই খতিয়ানে থাকে মৌজার দাগ অনুসারে ভূমির মালিকের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা, মালিকানার বিবরণ, জমির বিবরণ, মৌজা নম্বর, সীমানা প্রভৃতির হিসাব। আর এই খতিয়ানের অনুলিপিকেই বলা হয় পর্চা। জমি কেনাবেচা, জমি রক্ষণাবেক্ষণ ও দখলে রাখার ক্ষেত্রে পর্চার বেশ গুরুত্ব রয়েছে। পর্চায় কোনো সমস্যা থাকলে মালিকানা, জমি কেনাবেচার কাজে সমস্যা হয়।

টাঙ্গাইল জেলার ১২টি উপজেলায় ইউনিয়ন রয়েছে ১১৮টি। আর পৌরসভা ১১টি। প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা কার্যালয় থেকে অনলাইনে পর্চার আবেদন করা যাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই কর্মসূচি চালুর আগে ৫০–৬০ কিলোমিটার দূরের এলাকা থেকে জেলা প্রশাসনে এসে কয়েক দিন ধরনা দিতে হতো। পর্চা তুলে দেওয়ার নামে দালাল চক্র ছিল সক্রিয়।

বর্তমানে যে কেউ ইউডিসি ও পিডিসির উদ্যোক্তাদের (যিনি পর্চার আবেদন সম্পন্ন করবেন) মাধ্যমে পর্চার জন্য আবেদন করতে পারেন। অনলাইনে পর্চার জন্য সরকার নির্ধারিত ফি ১০০ টাকা।

অনলাইনে আবেদন করার আট দিনের মধ্যে নিজের ঠিকানায় পর্চা পেয়েছেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আমির হোসেন। তিনি বলেন, আগে পর্চা তুলতে এক মাসের বেশি লাগত। টাকাও লাগত বেশি। আর এখন কোথাও যাওয়া লাগে না। সাধারণ মানুষের জন্য কী যে সুবিধা হইসে।

তবে সব ক্ষেত্রে ৮–১০ দিনের মধ্যে পর্চা আবেদনকারীর ঠিকানায় পৌঁছে না। গোপালপুর উপজেলার ধোপাকান্দি ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ডাকযোগে পর্চা পাঠানোয় লোকজন খুব খুশি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে হাতে পৌঁছাতে ১৪–১৫ দিন লেগে যায়। দেরি হলে আবেদনকারীরা উদ্যোক্তাদের কাছে এসে জানতে চায়।

ভবিষ্যতে অনলাইনে পর্চার আবেদন করতে ইউডিসিতেও যাওয়া লাগবে না বলে জানালেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোস্তারী কাদেরী। তিনি বলেন, গ্রামের সবার পক্ষে অনলাইনে নিজে আবেদন করা সম্ভব না। তাই এখন ইউডিসির মাধ্যমে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে আবেদন–প্রক্রিয়া সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যে কেউ নিজেই ঘরে বসে আবেদন করতে পারবেন।