Thank you for trying Sticky AMP!!

ভ্যাট দেবে বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী নয়: এনবিআর

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূল্য সংযোজন কর (মূসক বা ভ্যাট) দেবেন না। মূসক দেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ব্যাখ্যা।
গতকাল বৃহস্পতিবার এনবিআরের দেওয়া ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, টিউশন বাড়িয়ে কিংবা টিউশন ফির ওপর বাড়তি মূসক আদায় করার সুযোগ নেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল বলেছেন, এই ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে না।
যদিও মূসক আইন অনুযায়ী মূসক অন্তর্ভুক্ত করেই টিউশন ফি নির্ধারণ করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এনবিআর সূত্রগুলো বলছে, মূসক হলো ভোক্তার ওপর আরোপিত কর। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, মূসক অন্তর্ভুক্ত করেই ভোক্তার জন্য যেকোনো পণ্য বা সেবার দাম ঠিক করতে হয়। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মূসক অন্তর্ভুক্ত করেই শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি নির্ধারণ করতে হবে। টিউশন ফি আলাদাভাবে নির্ধারণ করে এর ওপর মূসক আদায় করতে পারবে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যেহেতু এত দিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর মূসক ছিল না, তাই টিউশন ফির বাইরে বাড়তি অর্থ দিতে হয়নি শিক্ষার্থীদের। এখন মূসক আরোপ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের দেওয়া টিউশন ফির মধ্যেই মূসক অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি বাবদ প্রাপ্ত অর্থের ওপর মূসক আরোপ হওয়ায় মুনাফা কিংবা লোকসানের বিষয় নেই। তবে আয় কিছুটা কমতে পারে। তাই আয় ঠিক রাখতে হলে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি টিউশন ফি চাপিয়ে দিতে হবে।
এনবিআরের সাবেক একজন চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবেই বলা হোক না কেন ভোক্তা হিসেবে শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ওপরই এ মূসক চাপবে।’ এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এনবিআর ব্যাখ্যা দিয়েছে। এর বেশি তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য: এদিকে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত মূসক প্রত্যাহার করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গতকাল বিকেলে সিলেট সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। উল্টো তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা দৈনিক এক হাজার টাকা খরচ করতে পারলে ভ্যাট কেন দেওয়া যাবে না?’ অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের রাজস্ব আহরণে আমি যে সাফল্য রাখছি, আমাকে রাজস্ব আহরণ করতেই হবে। তাই ভ্যাট প্রত্যাহার হবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে যে এ ভ্যাট যাতে ছাত্রদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া না হয়।’
ব্যাখ্যা ও প্রজ্ঞাপন:এনবিআরের দেওয়া গতকালের ব্যাখ্যায় চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথমত, নতুন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায়ের উদ্দেশ্যে মূসক আরোপ করা হয়নি। দ্বিতীয়ত, বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে মূসক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তৃতীয়ত, মূসক বাবদ অর্থ পরিশোধ করার দায়িত্ব সম্পূর্ণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের, কোনোক্রমেই শিক্ষার্থীদের নয়। চতুর্থত, বিদ্যমান টিউশন ফির মধ্যে মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকায় টিউশন ফি বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই।
এনবিআরের এ ব্যাখ্যাকে শুভংকরের ফাঁকি মনে করেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এনবিআর যা-ই বলুক না কেন, এটা শুভংকরের ফাঁকি। তারা যেভাবেই ব্যাখ্যা দিক, এই মূসক শিক্ষার্থীদের ওপরই বর্তাবে। তবে শিক্ষার্থীদের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করার অনুরোধ করেন তিনি। তাঁর মতে, শিক্ষার সব ভ্যাট ও কর প্রত্যাহার করা উচিত। সরকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা করে না। তারা নিজেরা আয় করে চলে। তাও ১২-১৪টি ছাড়া বাকিগুলো সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। তাঁর প্রশ্ন, ওই সব বিশ্ববিদ্যালয় মূসক দেবে কোথা থেকে?
শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই মূসক আরোপ না করার দাবি জানিয়ে আসছিলাম। শিক্ষামন্ত্রীও এ বিষয়ে আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা নেমে পড়েছে এবং এই আশঙ্কাই আমরা করছিলাম।’
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ কর্তৃপক্ষের ওপর এ মূসক আরোপ করা হয়। এনবিআরের প্রজ্ঞাপনেও বিষয়টি পরিষ্কার করে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত সমুদয় অর্থের ওপর সাড়ে সাত শতাংশ মূসক আরোপ করা হয়েছে। এখানে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। আর শিক্ষার্থীদের প্রতিটি সেমিস্টার পড়ার জন্য যে টিউশন ফি দিতে হয়, সেটাই হলো সেবার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয় যে অর্থ পায়।