Thank you for trying Sticky AMP!!

ভ্রাম্যমাণ আদালতে শিশুর বিচার ও সাজা নয়: হাইকোর্ট

ফাইল ছবি

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুদের বিচার ও দণ্ড আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১ শিশুর সাজা বাতিল করে এ রায় দেওয়া হয়। চার মাস আগে দেওয়া রুল (অ্যাবসলিউট) যথাযথ ঘোষণা করে ওই শিশুদের মধ্যে মুক্তি না পাওয়া শিশু অন্য কোনো অপরাধে জড়িত না থাকলে তাদের অবিলম্বে মুক্তি দিতেও বলা হয়েছে রায়ে।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’  শিরোনামে ৩১ অক্টোবর প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি নজরে আনা হলে সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১২১ শিশু বা অন্য শিশুদের আটক, বিচার ও দণ্ডাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের শুনানি শেষে রায় দেওয়া হয়।

ঘোষিত রায়ে বলা হয়, সংবিধানের তৃতীয় ভাগে থাকা অনুচ্ছেদগুলো অন্যান্য নাগরিকের মতো শিশুদের মৌলিক অধিকারও নিশ্চিত করেছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া শিশুদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একই সঙ্গে প্রসিকিউটর ও বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন, যা আইনের শাসনকে আঘাত করে। ভ্রাম্যমাণ আদালত কোনো শিশুর বিচার করতে পারেন না। কেননা, শিশু আইন একটি বিশেষ আইন। শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতে হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনেও শিশুদের বিচার করা যাবে না, বিচার হলে তা আইনের দৃষ্টিতে শুরু থেকেই অবৈধ।

আদালতে প্রথম আলোর প্রতিবেদনটি নজরে এনেছিলেন চিলড্রেন’স চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন (সিসিবি ফাউন্ডেশন) চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আবদুল হালিম এবং সিসিবি ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও আইনজীবী ইশরাত হাসান। আদালতে শিশুদের পক্ষে এই দুই আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

পরে আইনজীবী আবদুল হালিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত দেশের সাধারণ আদালতের সমান্তরালে আরেক ধরনের বিচারব্যবস্থা। ভ্রাম্যমাণ আদালতের এক ম্যাজিস্ট্রেট দুটি মামলায় পৃথক দুটি স্থানে (ফার্মগেট ও শ্যামলী) ৩২ মিনিটের মধ্যে যেভাবে ২৩ শিশুর দোষ স্বীকারোক্তি নিয়েছেন, তা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এই আচরণ আইনের শাসনের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে না বলে রায়ে এসেছে।’

সংবিধান, শিশু আইন, মোবাইল কোর্ট আইন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, স্বীকৃত জবানবন্দির ভিত্তিতে আপাতদৃষ্টিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়। এখানে আইনজীবী নিয়োগের সুযোগ থাকে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শিশুকে সাজা দেওয়া শুধু সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদের (গ্রেপ্তার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ) লঙ্ঘনই নয়, এতে ৩৫ অনুচ্ছেদের (বিচার ও দণ্ড সম্পর্কে রক্ষণ) অধিকার থেকেও শিশু বঞ্চিত হয়।