Thank you for trying Sticky AMP!!

মসিউরের সমালোচনায় সংসদে এককাট্টা আ.লীগ-জাপা

মসিউর রহমান

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে জাতীয় সংসদে নিজ দল ও সরকারি দলের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মসিউর রহমান। তাঁকে সংসদে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ সাংসদেরা।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় জাপার দুজনসহ সাতজন সাংসদ মসিউর রহমানের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তবে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। তাঁর দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মসিউর রহমানের বক্তব্য সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত। জাপা এই বক্তব্য ধারণ করে না। তবে এ বক্তব্যের জন্য জাপা লজ্জিত ও দুঃখিত।

গত রোববার জাপার এক আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে ‘নেশাগ্রস্ত’ বলে মন্তব্য করেন মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘নূর হোসেন একটা অ্যাডিকটেড ছেলে। একটা ইয়াবাখোর, ফেনসিডিলখোর ছিল।’

নিজ দলের মহাসচিব মসিউর রহমানের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি বলেন, মসিউর রহমানের এই বক্তব্য জাতীয় পার্টির বক্তব্য নয়। এটা কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে না। ওই বক্তব্যের জন্য জাতীয় পার্টি লজ্জিত, দুঃখিত এবং অপমানিত বোধ করছে। যে যুবক গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে পারেন, তাঁর প্রতি জাপার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে।

মসিউর যুবদল করতেন দাবি করে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সে কোথায় আন্দোলন করেছে? কোথায় সংগ্রাম করেছে? জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে সে কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কথা বলার ধৃষ্টতা সে কোথায় পেল? প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে কথা বলেছে। গণতন্ত্রের ছবক দেয়। লেখাপড়া জানে না, আবার কাগজের মালা গলায় দিয়ে পরিবহনশ্রমিক হয়ে হঠাৎ করে বাড়ি–গাড়ির মালিক হয়ে গেছে।’

সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘একটা কথা আছে, বান্দরকে লাই দিলে গাছের মাথায় ওঠে। এই লাই আমরা দিইনি। এই সংসদ তাকে লাই দিয়েছে। কী ধরনের ব্যক্তিত্ব, যার অতীত নেই, বর্তমান নেই। কিছুই ছিল না। হঠাৎ করে তাকে মন্ত্রী বানানো হলো। আমরা তো তাজ্জব হয়ে গেলাম!’

ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, ‘লজ্জা করে না এসমস্ত কথা বলতে? আমরা তো আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আজকের প্রধানমন্ত্রী সেদিন যদি আমার পরিচয় করিয়ে না দিতেন, আমাকে যদি ভোট না দিতেন, নির্বাচিত হয়ে এই সংসদে আসতে পারতাম না। রাঙ্গা সাহেব, মানুষ এত অকৃতজ্ঞ হয় কীভাবে? পেছনে যদি আওয়ামী লীগ না থাকত, ওই রংপুরে নামতেও পারতেন না। কার কয়টা ভোট আছে, তা আমাদের জানা আছে।’

ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ধৃষ্টতা দেখায়, তার জবাব দিতে হয় আমাদের। আসামিদের কাঠগড়ায় আমাদের দাঁড়াতে হয়। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ঘাড়ে এসে পড়েছে। আমরা দুঃখিত। নূর হোসেন সম্পর্কে সে যেটা বলেছে, আমরা তা ওন করি না। আমাদের দল এটা গ্রহণ করে না। আমরা ঘৃণাভরে এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। এটা তার ব্যক্তিগত কথা, আমরা দল তার দায়িত্ব নেব না।’

মসিউর রহমানের বক্তব্যে ‘ঘৃণা’ প্রকাশ করে সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, মসিউর রহমান কুৎসিত বক্তব্য দিয়েছেন। একজন সুস্থ মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় এই বক্তব্য দিতে পারেন না। তিনি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও খারাপ মন্তব্য করেছেন। তাঁর এই বক্তব্য সারা দেশের মানুষের হৃদয়ে ব্যথা দিয়েছে। সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর ক্ষমা চাওয়া উচিত। তোফায়েল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট না হলে তিনি বিজয়ী হতে পারতেন কি না, তা বলতে চাই না।’

সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো সুস্থ লোক এ ধরনের কথা বলতে পারেন না। তাঁর বক্তব্য গোটা জাতি, বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী ও নূর হোসেনকে আঘাত করেছে। তাঁর শুধু ক্ষমা চাইলে হবে না, জাপাকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে।

সরকারি দলের সাংসদ আমির হোসেন আমু বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো এইচ এম এরশাদের কুকীর্তি ঢাকতে মসিউর রহমান অবান্তর কথা বলেছেন। নূর হোসেনকে যখন হত্যা করা হয়, তখন ফেনসিডিল, ইয়াবা—এসব শব্দের সঙ্গেও মানুষ পরিচিত ছিল না। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মসিউরের বক্তব্যের সমালোচনা করে আমু বলেন, যাঁর নেতৃত্বে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে এত বড় ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন না। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জাতীয় পার্টির আরেক সাংসদ মুজিবুল হক বলেন, মসিউর রহমান এই বক্তব্য কেন দিয়েছেন, এই সংসদের সদস্য হিসেবে তিনি সংসদেই তার ব্যাখ্যা দেবেন।

সরকারি দল আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমাদের অনেক দোষ আছে। তবে ৯৬ সাল থেকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা আপনাদের সহযোগিতা করে আসছি। এটা তো ঠিক? ২০১৪ সালে যখন অগণতান্ত্রিক সরকার আসার চিন্তাভাবনা করেছিল, তখন আমরা জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে মিলে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করেছি। এটা কিন্তু আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

গণফোরামের সাংসদ সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেন, মসিউর রহমান এই বক্তব্য দিয়ে সংসদকে অবমাননা করেছেন।

তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, মসিউর রহমান বক্তব্য প্রত্যাহার করে লাভ হবে না, তাঁকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে।

জাতীয় সংসদে আজ এই অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন সরকারি দলের সাংসদ তাহজীব আলম সিদ্দিকী। তিনি মসিউর রহমানকে অর্বাচীন আখ্যা দিয়ে বলেন, ধৃষ্টতামূলক এই বক্তব্য দিয়ে তিনি নূর হোসেনের আত্মাকে অপমান করেছেন।

আরও পড়ুন: