Thank you for trying Sticky AMP!!

মহাসড়কের পাশের পুকুর থেকে ২ মোটরসাইকেল আরোহীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে নিহত মামুনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর ভাই লিটন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা থেকে তোলা। ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা–পুলিশ দুই মোটরসাইকেল আরোহীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে। আজ শনিবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মির্জাপুর উপজেলার সোহাগপুর এলাকায় একটি পুকুর থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে পুলিশ। পুকুরটি বন্যার পানিতে নিমজ্জিত।


নিহত দুজনের একজন হলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার শান্তিনগর গ্রামের ফরিদ বেপারীর ছেলে মাসুদ রানা (৩০)। তিনি গাজীপুর সদরের ভবানীপুর সারাব এলাকার গ্রামীণ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। অপরজন রংপুর সদরের চাঁনবাড়ি এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে মামুন (৩০)। তিনি গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকায় চায়ের দোকানের পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশের ব্যবসা করতেন।


পুলিশ ও এলাকাবাসী বলেন, ঈদের ছুটি শেষে গতকাল রাত আটটার দিকে মাসুদ ও মামুন রংপুর থেকে মোটরসাইকেলে করে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হন। আজ সকাল ছয়টার দিকে এলাকাবাসী প্রথমে একজনের মরদেহ ঘটনাস্থলে পানিতে ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে মির্জাপুরের গোড়াই হাইওয়ে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও সেখানে যান।


ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, তাঁরা প্রথমে একজনের মরদেহ উদ্ধার করেন। এ সময় পানিতে মোটরসাইকেলের দুইটি হেলমেট পড়ে থাকতে দেখে তাঁদের সন্দেহ হয়। পরে তাঁদের লোকজন পানিতে নেমে খোঁজ করে আরেকজনের মরদেহ ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করেন। মরদেহ দুটির গলা কাটা রয়েছে। মরদেহ দুটির মধ্যে প্রায় ১২ ফুট দূরত্ব ছিল।


নিহত মামুনের আত্মীয়রা সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মির্জাপুর থানায় মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর বড় ভাই লিটন বলেন, ভোরে তিনি মামুনের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেছেন। তিনি তাঁকে জানিয়েছিলেন যে মির্জাপুর পাড় হচ্ছেন। মামুন মাত্র তিন মাস আগে বিয়ে করেছেন। ঈদের ছুটিতে মামুন স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। সে কারণে স্ত্রীকে বাড়িতে রেখেই মামুন কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন।


মুঠোফোনে মাসুদের ভাই মতিউর বলেন, ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় ছিলেন মাসুদ। তাঁদের বোনের বিয়ে ছিল গতকাল শুক্রবার। দেরি হয়ে যাবে বলে বোনকে বাড়ি থেকে বিদায় না জানিয়েই কর্মস্থলের উদ্দেশে রওনা হন।


নিহত মামুনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশে বাড়ি গাজীপুরের কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (বর্তমানে সিটি করপোরেশন) সাবেক সদস্য কামরুল হাসান বেপারীর। তিনি খবর শুনে মির্জাপুর থানায় যান। তিনি বলেন, লাশের গলা যেভাবে কাটা রয়েছে তাতে কোনোভাবেই এটা দুর্ঘটনা হতে পারে না। এটা নিশ্চিত হত্যার ঘটনা। কেউ তাঁদের মেরে ওই স্থানে ফেলে রেখেছিলেন।


হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ঘটনাটি দুর্ঘটনা ন। কারণ দুটি লাশেই গলাকাটা। আমার মনে হয় কেউ ওভাবে মেরে পানির ভেতরে মোটরসাইকেলসহ ফেলে গেছেন। দুটি লাশই একই কায়দায় গলায় পোচ দিয়ে কাটা। আর দুর্ঘটনার পর পানিতে ডুবলে হাতের নখের ভেতরে কাদা থাকবে। কারণ, মানুষ যতক্ষণ জীবিত থাকেন, বাঁচার চেষ্টা করেন।’


এদিকে মির্জাপুর থানার ওসি মো. সায়েদুর রহমান বলেন, দুটি লাশের গলায় জখম আছে। ঘটনাস্থলের পাশে বিদ্যুতের খুঁটির প্রোটেক্ট তার টাঙানো আছে। দুর্ঘটনার পর ওই তারের সঙ্গে আটকে হয়তোবা গলা কেটে যায়। এতে তাঁদের মৃত্যু হয়। বিদ্যুতের তারের মধ্যে কোনো রক্তের ছাপ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুই-এক ফোঁটা লাল আকৃতির কিছু দেখা গেছে। তবে তা পানের পিক না রক্ত, বোঝা যাচ্ছে না। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পেলে তা হত্যা না সড়ক দুর্ঘটনা, তা বোঝা যাবে।’