Thank you for trying Sticky AMP!!

মহেশখালীতে ১৯১ একর বনের ক্ষতিপূরণ ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৯ টাকা, বনভূমি কেটে উন্নয়ন নয়: হাইকোর্ট

বনভূমি, বন ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত অঞ্চলকে রূপান্তর করে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যবহার রোধ করতে না পারা কেন বেআইনি হবে না, সে ব্যাপারে একটি কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এ ধরনের তৎপরতা কেন দেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইনের পরিপন্থী হবে না, তা–ও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ নির্দেশ দিয়েছেন।

হাইকোর্টের ওই নির্দেশে বনভূমি ও বৃক্ষ রক্ষায় সংগতিপূর্ণ আইন প্রণয়ন, নিরপেক্ষ ও অর্থবহ পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব নিরূপণের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ ছাড়া যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও বনভূমির বিকল্প বনায়ন নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চেয়েছেন আদালত।

বেলার পক্ষ থেকে বলা হয়, গত এক বছরে অন্তত চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত, প্রাকৃতিক ও সৃজন করা বন রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ ও বন বিভাগ। ফলে দেশের ১৩ শতাংশ বনভূমি আরও সংকুচিত হচ্ছে। যেখানে সরকারি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশে বনভূমির পরিমাণ থাকতে হবে ২০ শতাংশ। বন–বিধ্বংসী এমন সিদ্ধান্ত পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকে ব্যাহত করছে বলে বাদী পক্ষ থেকে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়।

বেলার পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রায় সব ক্ষেত্রেই পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়া এবং ‘দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে’ এমন শর্তে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বিপুল পরিমাণে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ ছাড়াই মহেশখালী, কক্সবাজারে ১৯১ দশমিক ২৫ একর প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে তেলের ডিপো নির্মাণ, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ও হেমায়েতপুর সড়কের গাছ কেটে রাস্তা সম্প্রসারণ, গাজীপুরের কাপাশিয়ায় প্রাকৃতিক সংরক্ষণ বন কেটে মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণ এবং গাজীপুর সংরক্ষিত গজারি বন কেটে গ্যাস পাইপলাইন বসানোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে দুই গুণ গাছ ‘ক্ষতিপূরণ বনায়নের’ হিসেবে রোপিত হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সিদ্ধান্ত হলেও তা কোনো ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হয়নি। যা বন্য প্রাণী ও পরিবেশের ভারসাম্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।

বেলা থেকে বলা হয়েছে, বন উজাড়ে অনুমতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে কোনো সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি, যেমন মহেশখালীতে ১৯১ দশমিক ২৫ একর বিরল পাহাড়ি প্রাকৃতিক বনের ক্ষতিপূরণ ধার্য করা হয়েছে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৭৪ হাজার ৯৮৯ টাকা। এ ক্ষেত্রে বন বিভাগ ২৭৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাইলেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন ওই টাকা দিতে রাজি হয়েছে। আর একই সময়ে গাজীপুরে ৪ দশমিক ৫৫৫ একর বনভূমির ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৬৫৯ টাকা।

এই পরিপ্রেক্ষিতে বেলার পক্ষ থেকে উন্নয়নের নামে বনভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সুনির্দিষ্ট ও সামঞ্জস্যপূর্ণ আইনি কাঠামো দাবি করে জনস্বার্থে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত সব বনভূমিতে ‘ক্ষতিপূরণ বনায়ন’ ছাড়া কোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। একই সঙ্গে মহেশখালী, কক্সবাজারে প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বন কেটে তেলের ডিপোসহ অন্যান্য বনভূমির বিপরীতে ‘ক্ষতিপূরণ বনায়ন’ করা এবং তা বাস্তবায়নে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আদালতে কর্মপরিকল্পনা জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে। বেলার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও আলী মুস্তাফা খান।