Thank you for trying Sticky AMP!!

মাকে নিয়ে কিছু কথা

মায়ের সঙ্গে লেখক

আমার চোখে আমার মা একজন মহীয়সী নারী। জীবনসংগ্রামের এক অনন্ত দৃষ্টান্ত। তাঁর সংগ্রামের শুরুটা হয়েছিল কৈশোরে, অল্প বয়সে স্বামীর সংসারে এসে। ২০০১ সালে আমি যখন বাবাকে হারাই, তখন তাঁর বয়স ৩০ বছর।

মনে পড়ে পাঁচ বছর বয়সের সেদিনটার কথা, যেদিন বাবাকে হারালাম। সকালে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি ঘরভর্তি মানুষ। আম্মু চিৎকার করে কাঁদছেন। একসময় তিনি স্তব্ধ হয়ে গেলেন, পাথরের মতো দাঁড়িয়ে থাকলেন সারাটা সময়।

এর কিছুদিন পর থেকে আম্মুর শরীরে বাসা বাঁধাতে থাকল রোগ। উচ্চমাত্রার ডায়াবেটিস নিয়েও থেমে থাকেনি তাঁর জীবনসংগ্রাম। দেখে মনে হতো, আটকায় কে তাঁকে। চৌধুরী পরিবারটা যে তাঁকে সামলাতে হবে।

বাবা থাকতেই বড় দুই আপুর বিয়ে হয়েছিল। আমাদের তিনজন আর বাবার করে দিয়ে যাওয়া বিপণিবিতান দেখভাল করা মায়ের দায়িত্ব। আমাদের পড়াশোনার খেয়াল, যত্নে বড় করা—সব দায়িত্বকে একার করে নিয়ে জীবনসংগ্রামে নামেন তিনি। চলার পথটা মসৃণ ছিল না। কারণ, গ্রামে মেয়েদের নিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সব মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করেছেন। অল্প কয়েক বছর পরই টনসিলের অপারেশন হয়। বাকি দুই বোনের বিয়ে হয়। এর কয়েক বছর পরই দুটি চোখের অস্ত্রোপচার। এখানেই শেষ নয়, গত দুই বছর ভুগছেন ফুসফুসের সংক্রমণে। মাসের পর মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

সবার ছোট হওয়ায় সংসারে ভাইয়ের দায়িত্ব চলে আসে আমার ওপর। আম্মুরও যত আহ্লাদ–আবদার আমাকে নিয়ে। পড়াশোনা ঠিক রেখেছি, এখন ক্যারিয়ারে অবিচল থাকছি।

একসময় মনে হয়, আম্মু কিছুই তো পেলেন না জীবনে, আমার তো তাঁর জন্য এখনো অনেক কিছু করা বাকি! একটি পরিবারকে টিকিয়ে রাখার জন্য যিনি এত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁকে টিকিয়ে রাখতে আমি এখন নেমেছি জীবনসংগ্রামে। মাঝেমধ্যে মনে হয়, মানুষের জীবনসংগ্রাম চলতেই থাকে, শুধু ব্যক্তি আর রূপ বদলায়।