Thank you for trying Sticky AMP!!

মাঠপর্যায়ে নীতি বাস্তবায়নই চ্যালেঞ্জ

দেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩১ শতাংশের উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। দেশের অপুষ্টি দূর করতে কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

গতকাল প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘পুষ্টি উন্নয়নে বহু খাতভিত্তিক কর্মসূচি: সরকার ও উন্নয়ন-সহযোগীর ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা এ কথা বলেন। প্রথম আলো এই বৈঠকের আয়োজন করে। সহায়তা করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।

মূল উপস্থাপনায় সেভ দ্য চিলড্রেনের সূচনা কর্মসূচির চিফ অব পার্টি শেখ শাহেদ রহমান বলেন, দেশের তিনটি শিশুর একটি অপুষ্টির কারণে নানা সীমাবদ্ধতা নিয়ে বড় হচ্ছে। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ ছিল মাত্র ৬১৭ টাকা। তিনি প্রশ্ন করেন, অপুষ্টি দূর করতে দেশে যে কাজ হচ্ছে, তা যথেষ্ট কি না।

সিলেট ও মৌলভীবাজার জেলায় দরিদ্র পরিবারগুলোর দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের অপুষ্টি কমাতে কাজ করছে সূচনা। এতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের দাতা সংস্থা ডিএফআইডি। সূচনার সঙ্গে এই কাজে যুক্ত আছে আইসিডিডিআরবি, হেলেন কেলার ইন্টারন্যাশনাল, ওয়ার্ল্ড ফিশ, আইডিই, সিএনআরএস, আরডিআরএস ও এফআইভিডিবি।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (পুষ্টি ও ক্লিনিক্যাল সেবা) তাহমিদ আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে ওজনস্বল্পতার সমস্যা কমছে, তবে অতি ওজন ও স্থূলতার সমস্যা বাড়ছে। বৈশ্বিক গবেষণার তথ্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জিডিপি ১০ শতাংশ বাড়লে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের খর্বতা ৬ শতাংশ কমে ও নারীদের মধ্যে স্থূলতা ৭ শতাংশ বাড়ে। গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশের শিশুদের খর্বতা বছরে ৩.২ শতাংশ হারে কমছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নাজমা শাহীন বলেন, অনেকেই খাদ্য থেকে প্রয়োজনের অর্ধেক ক্যালসিয়াম পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের ৪০ শতাংশ মানুষ পুষ্টিসমৃদ্ধ ও মানসম্পন্ন খাদ্য খায় না।

জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচির উপব্যবস্থাপক মফিজুল ইসলাম বলেন, পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি করতে সরকার পুষ্টি কার্যক্রমে ২২টি মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করেছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুষ্টিবিষয়ক কমিটি করা হয়েছে।

ডিএফআইডির স্বাস্থ্য উপদেষ্টা শফিকুল ইসলাম বলেন, অর্থ ও কারিগরি সহযোগিতার বাইরে বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে। বিশ্বের অন্য প্রান্তের সফল উদাহরণ তারা বাংলাদেশকে দেখাতে পারে।

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মুরাদ হাসান। পাশে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক মো. শাহনেওয়াজ। ছবি: প্রথম আলো

জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা নওকি মিনামিগুচি বলেন, বাংলাদেশে তরুণের সংখ্যা বেশি। পুষ্টির কাজে তাদের যুক্ত করতে হবে, তাদের পরিবর্তনের দূত বানাতে হবে। তিনি বলেন, পুষ্টির জন্য ক্ষুধামুক্তি জরুরি। সরকারি প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা, গবেষকসহ সব পক্ষের সমন্বয়, সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব না হলে এই অর্জন সম্ভব হবে না।

গর্ভকালীন ভাতাসহ সরকারের নানা ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি অপুষ্টি কমাতে ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ নীতি কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ। তিনি বলেন, গড়ে ৩১ শতাংশ শিশু খর্বকায়। কিন্তু সবচেয়ে দরিদ্রশ্রেণির মধ্যে এই হার প্রায় ৫০ শতাংশ।

ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজেসের দেশি পরিচালক দীপক ধজ খদকা বলেন, পুষ্টির উন্নতিতে ব্যক্তি খাত ভূমিকা রাখতে পারে। ব্যক্তি খাত যদি কম দামে সেবা বা পণ্য দেয়, তাহলে মানুষ উপকৃত হবে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বিনয় কুমার বর্মন বলেন, মলা মাছ আয়রন, ক্যালসিয়াস ও ভিটামিনসমৃদ্ধ। একই সঙ্গে অনেক প্রজাতির মাছ চাষের প্রযুক্তির বিস্তার ঘটানোর মাধ্যমে অপুষ্টি মোকাবিলা সম্ভব।