Thank you for trying Sticky AMP!!

মামলা করায় জানা গেল ভয়ংকর তথ্য

নিখোঁজ শামীম সিকদারের স্ত্রী চম্পা বেগম ও ছেলে শফিউল আলম। ছবি: প্রথম আলো

দেড় বছর আগে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে (ডিবি) চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে তুলে নেওয়া হয় দুই নারীসহ নয়জনকে। তাঁদের নেওয়া হয় ঢাকার মিন্টো রোডের একটি সরকারি কার্যালয়ে। নয় দিন পর ছেড়ে দেওয়া হয় দুই নারীকে। আর ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার দুটি থানায় ইয়াবা পাচারের মামলা দেওয়া হয়। বাকি একজন এখনো নিখোঁজ। তিনি ব্যবসায়ী শামিম সরদার। তাঁর গাড়ি মেরামতের কারখানা (গ্যারেজ) রয়েছে। তুলে নেওয়ার ঘটনায় ১০ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে নালিশি মামলা হয়েছে। এতে পুরো ঘটনার বিবরণ রয়েছে।

ঘটনাটি ২০১৬ সালের ৩১ জুলাইয়ের। সেদিন ভোর ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে সীতাকুণ্ডের ফকিরহাটের গ্যারেজ থেকে শামিম, তাঁর স্ত্রী, মামাতো ভাই, তাঁদের বাসার গৃহকর্মী, গ্যারেজের তিন শ্রমিক, শামিমের পরিচিত এক জুতার ব্যবসায়ী এবং সেই ব্যবসায়ীর গাড়িচালককে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পরিচয় দেওয়া ৮ থেকে ১০ জন লোক।

ডিবির দলটি শামিমের কাছে ৫০ লাখ টাকা চেয়েছিল বলে পরিবার দাবি করেছে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় চারটি মামলা রয়েছে। তাঁর বাসা আকবর শাহ এলাকায়। তাঁর গ্যারেজটি বাসা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ফকিরহাটে। শামিম ও তাঁর মামাতো ভাই ইব্রাহিম ঘটনার দিন গ্যারেজে ছিলেন। শামিমের অসুস্থতার কথা বলে তাঁর স্ত্রীকে গ্যারেজে ডেকে আনা হয়েছিল। তিনি সঙ্গে নিয়ে আসেন গৃহকর্মীকে। গ্যারেজে ছিলেন তিন শ্রমিক। জুতার ব্যবসায়ী ও তাঁর গাড়িচালক আগে থেকেই ডিবির মাইক্রোবাসে ছিলেন। ওই মাইক্রোবাসে জায়গা না হওয়ায় গ্যারেজ থেকে শামিমের মাইক্রোবাসও নেওয়া হয়।

শামিমের স্ত্রী চম্পা বেগম বলেন, তুলে নিয়ে যাওয়ার নয় দিন পর তাঁকে ও গৃহকর্মী মিনারা বেগমকে মিন্টো রোডের কার্যালয় থেকে চট্টগ্রামের বাসায় নামিয়ে দেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোতাহের হোসেন। স্বামীকে ফিরে পেতে তিনি মোতাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দুই দফায় মোতাহেরকে নগদ ১০ লাখ টাকা দেন। টাকা দেওয়ার তিন মাস পরও স্বামী ফিরে না আসায় গত বছরের ১১ জুন পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে একটি আবেদন করেন তিনি। এর ২০ দিন পর পুলিশের এক কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে। তাঁর বক্তব্য শোনেন। এরপর কেউ যোগাযোগ করেননি।

সর্বশেষ গত বছরের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জেলা আদালতে ১০ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন চম্পা বেগম। এতে পরিদর্শক বিপ্লব কিশোর শীল, এসআই আবদুর রউফ, অহিদুর রহমান, নৃপেন কুমার ভৌমিক, এএসআই মোতাহের হোসেন, জহুরুল হক, শহিদুল ইসলাম, কনস্টেবল বিনয় বিকাশ চাকমা, আফজাল হোসেন ও আবদুর রশিদকে আসামি করা হয়। মামলায় বলা হয়, আসামিরা কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ঢাকায় কর্মরত।

চম্পা বলেন, তাঁর স্বামী অপরাধী হলে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার দেখাক। দোষী হলে প্রয়োজনে ফাঁসি দিক কিন্তু গুম করবে কেন? যে মুঠোফোন নম্বরে এএসআই মোতাহেরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন সেটি এখন বন্ধ।

চম্পা বেগমের অভিযোগের বিষয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের উপপুলিশ কমিশনার এ এইচ এম আবদুর রাকিব মুঠোফোনে বলেন, মোতাহের নামের একজন এএসআই ছিলেন। ঘটনাটি অনেক আগের। এখন পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত করছে।

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায়
ডিবির দলটি নয়জনকে দুটি মাইক্রোবাসে তোলে। শামিম, তাঁর স্ত্রীসহ চারজনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। বাকি পাঁচজনকে তোলা হয় আরেকটি মাইক্রোবাসে। দ্বিতীয় দলটিকে যে মাইক্রোবাসে তোলা হয়, সেটি শামিমের। গাড়ি ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর শামিমকে তাঁর স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে তোলা হয় অন্য গাড়িতে। ঢাকার সরকারি কার্যালয়ে নেওয়ার পর চম্পা তাঁর স্বামীকে দেখেননি।

ছয়জনের বিরুদ্ধে ঢাকার দুই থানায় মামলা
তুলে নেওয়ার পাঁচ দিন পর গত বছরের ৫ আগস্ট তিনজনের বিরুদ্ধে পুলিশের ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের এসআই মো. এছকান্দর আলী বাদী হয়ে ঢাকার খিলক্ষেত থানায় দুই লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলা করেন। এতে ইব্রাহিম, আলাউদ্দিন ও কামাল হোসেনকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রথমজন শামিমের মামাতো ভাই। বাকি দুজন তাঁর গ্যারেজের কর্মী। তিনজনই এখন কারাগারে।

এজাহারে বলা হয়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালিয়ে দুই লাখ ইয়াবা পাওয়া যায়। এজাহারে উল্লেখ করা গাড়িটি শামিমের গ্যারেজ থেকে নেওয়া। আদালতের নির্দেশে গাড়িটি এখন তাঁর স্ত্রীর জিম্মায় রয়েছে।

খিলক্ষেত থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ বি এম আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট থেকে করা মামলার তদন্তও তারা (টেররিজম ইউনিট) করে থাকে।

কারাগারে আটক গ্যারেজের শ্রমিক আলাউদ্দিনের মা হালিমা খাতুন বলেন, ছেলে কারাগারে থাকায় মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালান তিনি।

তুলে নিয়ে যাওয়া অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ৮ আগস্ট ঢাকার সবুজবাগ থানায় মামলা হয়। এতে সালাউদ্দিন, তাঁর গাড়িচালক খাইরুল আমিন ও জাকির হোসেনকে (গ্যারেজের কর্মী) আসামি করা হয়।
এজাহারে বলা হয়, কমলাপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ এলাকায় গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে আসামিদের কাছ থেকে তিন লাখ ইয়াবা বড়ি জব্দ করা হয়। যে গাড়ির (কার) কথা এজাহারে বলা হয়, সেটি জুতার ব্যবসায়ী সালাউদ্দিনের। মামলার ১৪ মাস পর গত জানুয়ারিতে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান তিনি।

সবুজবাগ থানার ওসি কুদ্দুস ফকির বলেন, যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরাই ঘটনাটি তদন্ত করেছেন।

ঘটনার বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ জুলাই রাত ১১টার দিকে পতেঙ্গা থেকে তাঁকে এবং গাড়িচালক খাইরুলকে ডিবি আটক করে। তখন নিজের গাড়িতে ছিলেন তিনি। তাঁদের দুজনকে মাইক্রোবাসে তোলা হয়। ভোরে তাঁদের নেওয়া হয় সীতাকুণ্ডে।

নয়জনকে তুলে নেওয়ার ঘটনাটি পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করতে বলেছেন চট্টগ্রামের আদালত।