Thank you for trying Sticky AMP!!

মালা ও মিলনকে নিয়ে মিলেমিশে ইসলাম

১৯ বছর পর যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন মো. ইসলাম। মুক্তির পর বাবা আবদুল আজিজ (বাঁয়ে) ও ভাইবোনের সঙ্গে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে। গতকাল দুপুরে। ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জেরে ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া মো. ইসলাম মৃধা (৪৯) অবশেষে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি দেওয়ায় উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৯ বছর ১৭ দিন কারাভোগের পর গতকাল শুক্রবার দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। ঈদের আগেই তাঁর মুক্তিতে পরিবারে খুশির জোয়ার বইছে। মুক্তির পর ইসলাম বলেছেন, স্ত্রী মালা ও ছেলে মিলনকে নিয়ে মিলেমিশেই কাটাতে চান বাকি জীবন।

আট দিন আগে কারাগারের ভেতরেই ছেলের সামনে নতুন করে বিয়ে হয় ইসলাম ও মালার। ইসলাম ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামের আজিজ মৃধার ছেলে। ২০০১ সাল থেকে কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি।

ঝিনাইদহের লক্ষ্মীপুর গ্রামের মেয়ে মালা খাতুনের সঙ্গে একই গ্রামের মো. ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরে ২০০০ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়। পরে মালা অন্তঃসত্ত্বা হন। ২০০১ সালের ২১ জানুয়ারি তাঁর গর্ভে জন্ম নেন মিলন। এরপর মালার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করেন ইসলাম। ছেলের পিতৃপরিচয় দিতেও অস্বীকৃতি জানান তিনি। এরপর মালার বাবা আবুল কাসেম ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। মামলায় ঝিনাইদহের আদালত ইসলামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।

মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ আবু তালেব বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ইসলাম আদালতে জামিনের আবেদন করেছিলেন। তবে আদালত শর্ত দেন, মালা খাতুনকে স্ত্রী ও মো. মিলনকে (১৯) ছেলের স্বীকৃতি দিলে জামিন মিলবে। এতে রাজি হলে আদালতের নির্দেশে গত ৩১ জুলাই কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে ইসলাম ও মালার বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তিনি বলেন, এটি আদালতের একটি যুগান্তকারী রায়। এতে ছেলে তাঁর বাবাকে ফিরে পেলেন, স্ত্রী পেলেন স্বামীকে। একই সঙ্গে ইসলাম ফিরে পেলেন গোটা পরিবারকে। এ ধরনের রায় বন্দীদের সংশোধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

>

স্বীকৃতির পর কারামুক্তি
স্ত্রী ও সন্তানকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় ১৯ বছর ১৭ দিন কারাগারে কাটিয়েছেন ইসলাম

ইসলামকে ফিরিয়ে নিতে তাঁর বাবা আবদুল আজিজ মৃধা, তিন ভাইবোনসহ অন্য স্বজনেরা দুপুরে কারাগারের সামনে যান। আনুষ্ঠানিকতা শেষে মুক্তি পেয়ে ইসলাম কারাফটকের বাইরে এলে স্বজনেরা আনন্দে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন।

১৯ বছর পর ছেলের স্বীকৃতি পাওয়া মো. মিলন বলেন, ‘মা-বাবাকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। মা আর আমি দুজনই এখন ঢাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করি। ঈদের আগে বাবা মুক্তি পেলেন। আমরা আর ঢাকায় থাকব না। মাকে আর কাজ করতে দেব না। বাবাকে একটা ট্রাক্টর কিনে দেব। তিনি চাইলে আমিও তাঁর সঙ্গে ট্রাক্টর চালাব। তাতে যে রোজগার হবে তাতে আমাদের চলে যাবে।’

মুক্তি পেয়ে ইসলাম মৃধা মুঠোফোনে বলেন, ‘এখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না। সামনের দিনগুলো যেন ভালো কাটে, সেটাই চাওয়া। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মিলেমিশে থাকব।’