Thank you for trying Sticky AMP!!

মাশরাফির সমর্থনে সরে গেলেন জাপা প্রার্থী

মাশরাফি বিন মুর্তজা

বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক নৌকার প্রার্থী মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নড়াইল-২ আসনে প্রার্থী খন্দকার ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ। নির্বাচনের ১০ দিন আগে তিনি সরে দাঁড়ালেন। বুধবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধু মঞ্চে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুবাস বোস, সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন খান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র বিশ্বাস জাহাঙ্গীর হোসেনসহ আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ফায়েকুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাশরাফি বিন মুর্তজা শুধু নড়াইলের গর্ব নন, সারা দেশের গর্ব। তাঁর প্রতি সম্মান জানিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই।’ এখন থেকে তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করার ঘোষণাও দেন তিনি।

মাশরাফির বাড়ি নড়াইল শহরে। তিনি দর্শন শাস্ত্রে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ততার কারণে পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি। ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক তাঁর। গত ১৭ বছরে অমিতপ্রতিভা, বুদ্ধি, অদম্য সাহস আর সাফল্য দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে। দেশের সবচেয়ে সফল এই অধিনায়কের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো উঠেছে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে। দুবার খেলেছে এশিয়া কাপের ফাইনাল। শুধু সফল অধিনায়কই নন, ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও (২৫৮) তিনি। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ২-১ এ সিরিজ জেতে বাংলাদেশ।

‘নড়াইল এক্সপ্রেস’খ্যাত মাশরাফির নড়াইলে বেশির ভাগ সময় কাটে সেসব বন্ধুর সঙ্গে, যাঁরা সমাজে সুবিধাবঞ্চিত। এলাকার উন্নয়নে সম্প্রতি গড়ে তুলেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’। এই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। কোষাধ্যক্ষ নড়াইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মির্জা নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নড়াইলে দলমত-নির্বিশেষে মাশরাফি সব মহলে জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। আমাদের বিশ্বাস, তিনি নির্বাচন করলে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না। মাশরাফির স্বপ্ন, পুরো নড়াইলকে একদিন বদলে দেবে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন।’

এ আসনে বর্তমান সাংসদ মহাজোটের শেখ হাফিজুর রহমান। তিনি ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি জয়ী হন। তিনি নড়াইলের সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ব্যক্তি বলে দাবি করেন।

লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং নড়াইল সদরের ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত। এখানে মোট ভোটার ২ লাখ ৭২ হাজার ১৫৮।

এ আসনে মাশরাফীর প্রতিদ্বন্দ্বী ফরিদুজ্জামান। তিনি ২০-দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি লোহাগড়া পৌর এলাকার কুন্দশী গ্রামে। হাইকোর্টে আইনজীবী। একসময়ে ছিলেন তিনি জাতীয় পার্টিতে (এরশাদ)। তখন জাতীয় পার্টির নড়াইল জেলার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সেখান থেকে বের হয়ে ২০০৭ সালে তিনি গঠন করেন এনপিপি। তখন থেকে দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে। যোগ দেন ২০-দলীয় জোটে।

সম্প্রতি প্রতিদ্বন্দ্বী মাশরাফিকে নিয়ে কী ভাবছেন, প্রথম আলোর এমন প্রশ্নের উত্তরে ফরিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাশরাফি দেশের সম্পদ। আমি তাঁকে পছন্দ করি। সবাই পছন্দ করে। কিন্তু খেলার মাঠ আর ভোটের মাঠ এক নয়। এখানে নির্বাচন হবে নৌকার সঙ্গে ধানের শীষের। আমি মনে করি, যদি মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়, তবে ধানের শীষ এ আসনে জিতবে ইনশা আল্লাহ।’

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, নবম সংসদ নির্বাচনে ফরিদুজ্জামান এ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আম প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। সেবার তিনি ২৯২ ভোট পান। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এস কে আবু বাকের পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৫৮ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের প্রার্থী শরীফ খসরুজ্জামান পেয়েছিলেন ৬৯ হাজার ৬৭৪ ভোট।

ওই দুজন ছাড়াও এ আসনে লড়বেন জেএসডির (রব) ফকির শওকত আলী, ইসলামী আন্দোলনের এস এম নাসির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মাহবুবুর রহমান ও এনপিপির (ছালু) মো. মনিরুল ইসলাম।