Thank you for trying Sticky AMP!!

‘মাস্টারমাইন্ড’কে ছুঁতে পারছে না পুলিশ

প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন খুনের ঘটনার ‘মাস্টারমাইন্ড’ বা মূল পরিকল্পনাকারীকে ছুঁতে পারছে না পুলিশ। সেটা লিখিতভাবে আদালতকেও জানিয়েছিলেন তদন্ত কর্মকর্তা। কিন্তু এখন পুলিশ বলছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই আদালতে অভিযোগপত্র দিয়ে দেবেন। তুরাগ থানার পুলিশ পাঁচ মাস ধরে আলোচিত এই মামলার তদন্ত করছে।

নিহত দেলোয়ারের পরিবারের অভিযোগ, তারা যাদের সন্দেহ করছে, তাদের দিকে পুলিশের কোনো নজর নেই। যে তিনজনকে পরিবার সন্দেহ করছে, তাঁদের একজন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়রের বন্ধু। পরিবার মনে করছে, হত্যার নেপথ্যে আরও বড় কারও হাত আছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে।

পরিবারের সন্দেহ এক ঠিকাদার, এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও মেয়রের ব্যক্তিগত সহকারীকে। পুলিশ বলেছে, ‘মাস্টারমাইন্ড’কে খুঁজে বের করা কঠিন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলাটি নিয়ে আমরা একাধিকবার বসেছি, কিন্তু পেছনে কেউ আছেন, এমন ন্যূনতম কোনো তথ্যপ্রমাণ মেলেনি।’ আদালতে দেওয়া প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেছেন, মাস্টারমাইন্ড থাকতে পারে; এ বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘তিনি মনে করেছিলেন, কিন্তু তদন্তে পাওয়া যায়নি।’

গত ১১ মে মিরপুরের বাসা থেকে গাজীপুরের কোনাবাড়ীর কর্মস্থলে যাওয়ার পথে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন। ওই দিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে উত্তরার ১৭ নম্বর ৫ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে একটি জঙ্গল থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী খোদেজা বেগম তুরাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত নেমে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁদের দুজন হেলাল হাওলাদার ওরফে শাহিন ও গাড়িচালক মো. হাবিব গত ২১ মে এই হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে হেলাল হাওলাদার ওরফে শাহিন নিজেকে ভাড়াটে খুনি বলে উল্লেখ করেন। এর সাত দিন পর ২৭ মে আদালতে জবানবন্দি দেন দেলোয়ারের সহকর্মী সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান। পুলিশ জানায়, কর্মস্থলে দ্বন্দ্বের জেরে আনিসের পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার তিনজন মিলে দেলোয়ারকে হত্যা করেছিলেন।‍

দেলোয়ার হত্যার পূর্বাপর খতিয়ে দেখা গেছে, সিটি করপোরেশনের হর্তাকর্তাদের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি। প্রকৌশলী আনিসুর ছাড়াও ঠিকাদারদের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু তদন্তে এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া হয়নি। নেপথ্যে কারা রয়েছেন, তা অনুসন্ধানে কেবল এক হত্যাকারীর হোয়াটসঅ্যাপের তথ্যের জন্য আবেদন করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। যদিও হোয়াটসঅ্যাপের কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার নজির নেই।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার শচীন মৌলিক প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের বাইরে তদন্তে তাঁরা আর কারও সম্পৃক্ততা পাননি। দেলোয়ারের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই তাঁরা আদালতে অভিযোগপত্র দেবেন।

নিহত দেলোয়ারের বড় ভাই নূর নবী প্রথম আলোকে বলেন, দেলোয়ারের সঙ্গে কোনাবাড়ী এলাকার উন্নয়নকাজে অংশ নেওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। তিনি রাতে একা চলতে ভয় পেতেন। তাঁরা মনে করেন, কোনো দুর্নীতিতে জড়াতে রাজি না হওয়া কিংবা তাদের দুর্নীতির খবর জেনে ফেলায় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।


হোয়াটসঅ্যাপ কল লিস্টের খোঁজে পুলিশ
দেলোয়ার হত্যা মামলার নথিপত্র সংগ্রহ করে দেখা যায়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তুরাগ থানার পরিদর্শক শেখ মফিজুল ইসলাম গত ১৬ জুলাই ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক আবেদন করেন। তাতে তিনি গ্রেপ্তার সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের মুঠোফোন নম্বরে ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপের কল লিস্ট ও খুদে বার্তার তথ্যের জন্য এ আবেদন করেন। তাতে বলেন, ‘হত্যাকারী সন্দেহভাজন মাস্টারমাইন্ডের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ কল বা খুদে বার্তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে সঙ্গে সঙ্গে এ-সংক্রান্ত সবকিছু মুছে ফেলতে পারেন। এটা অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ড, যা পুরো বাংলাদেশকে আলোড়িত করেছে। ঘটনার পেছনের মূল মাস্টারমাইন্ডকে খুঁজে বের করা কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। তাই এ বিষয়ে জরুরি সাহায্য প্রয়োজন।’ আদালত ওই দিনই হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে মফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার কামরুজ্জামান সরদার দেখছেন। এক সপ্তাহ আগে তিনি জানিয়েছিলেন, কোনো উত্তর পাননি।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার আ ফ ম আল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, হোয়াটসঅ্যাপের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই। দেওয়া না-দেওয়া তাদের ইচ্ছার বিষয়।

জবানবন্দিতে হত্যার কারণ নেই

গ্রেপ্তার হওয়া তিন আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে হত্যার কারণ সম্পর্কে তথ্য দেননি। শুধু তাঁরা হত্যার ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন বলে তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরদার গত ২২ জুলাই প্রথম আলোকে বলেন, আনিস অত্যন্ত চতুর লোক। জবানবন্দিতে তাই হয়তো বিষয়টি তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন। তবে বিরোধের জেরেই হত্যার কথা তিনি জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন। তাঁদের সহকর্মীরাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে নিহত দেলোয়ারের ভাই নূর নবীর অভিযোগ, পুলিশ সচেতনভাবে হত্যার বিষয়টি বিরোধের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছে। তাঁরা তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তনের জন্য আদালতে আবেদন করবেন।

ঘটনার পেছনে অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। মামলাটি আমরা নিষ্পত্তি করে দেব। এরপর পরিবার যদি অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করাতে চায়, সেটা তারা করতে পারে।
মো. শফিকুল ইসলাম, ডিএমপির কমিশনার

যাঁদের সন্দেহ করে পরিবার

দেলোয়ার হত্যার পর গাজীপুর কোনাবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে আছেন এ কে এম হারুনুর রশীদ। কোনাবাড়ী অঞ্চলে কত টাকার, কী কী উন্নয়ন প্রকল্প চলমান এবং কোন কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেসব কাজ করছে, এসব বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।

তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র জানায়, কোনাবাড়ী এলাকায় প্রায় ১৭৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। দেলোয়ারের বড় ভাই নূর নবী প্রথম আলোকে বলেন, কোনো কোনো ঠিকাদারের সঙ্গে দেলোয়ারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না, এটা তাঁর স্ত্রী টের পেয়েছিলেন। মুঠোফোনে প্রায়ই ‘এ কাজ আমার দ্বারা সম্ভব না, ওপর থেকে করাইয়া নেন’—এমন কথা বলতে শুনেছেন দেলোয়ারের স্ত্রী।

নূর নবী বলেন, দেলোয়ারকে হত্যার পর সহকারী প্রকৌশলী আনিস ছাড়াও আরও তিনজনের নাম শুনেছেন, যাঁদের সঙ্গে বিরোধ ছিল বলে শুনেছেন। তাঁদের একজন কোনাবাড়ী এলাকার তোতা ঠিকাদার নামের এক ব্যক্তি। কোনো একটি কাজে অতিরিক্ত বিল তিনি চাচ্ছিলেন, যার অনুমোদন দেলোয়ার দিচ্ছিলেন না। আরেকজন নাসির মেম্বার; সড়ক প্রশস্ত করার একটি কাজ নিয়ে তাঁর সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল। তৃতীয় ব্যক্তি হলেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বন্ধু এবং ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত মনিরুল ইসলাম। দেলোয়ার যাতে মনিরুলদের কথামতো চলেন, তা তিনি এক সহকর্মীর মাধ্যমে দেলোয়ারকে বলেছিলেন বলে পরিবার শুনেছে।

এ ছাড়া দেলোয়ার খুন হওয়ার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া গত ৪ জুন তাঁর স্ত্রীকে মুঠোফোনে হুমকি দেন। গ্রেপ্তার তিনজনের বাইরে আর কারও নাম বলতে মানা করেন বলে পরিবার অভিযোগ করেছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গতকাল ফোনে যোগাযোগ করা হলে গোলাম কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় মেয়র মহোদয় বলেছেন, এই বিষয়ে কেউ কিছু জানতে চাইলে বলবা আমার সাথে কথা বলতে।’ এর বাইরে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, গোলাম কিবরিয়া ২০১৬ সালের ১৩ জুন দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলার অভিযোপত্রভুক্ত আসামি। অর্থ আত্মসাতের ওই মামলায় তিন মাস জেলও খেটেছেন। নিয়ম অনুযায়ী অভিযোগপত্র দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গোলাম কিবরিয়া সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা। কিন্তু তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তোতা ঠিকাদারের নাম মো. আবদুর রহিম। তিনি ইউডিসি কনস্ট্রাকশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক। কোনাবাড়ী এলাকায় তাঁরা ২৭ কোটি ৪২ লাখ টাকার কাজ করছেন। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দেলোয়ার কোনাবাড়ী থেকে বদলি হয়ে যখন নগর ভবনে যান, তখন তাঁরা কাজটি পেয়েছেন। তিনি ফিরে আসার পর মাস দেড়েক তাঁদের কাজের তদারক করেছেন। দেলোয়ারের কাছে তাঁদের কোনো বিল হয়নি। তাই বিরোধেরও প্রশ্ন আসে না।

নাসির মেম্বারের পুরো নাম নাসির উদ্দিন মোল্লা। কোনাবাড়ীর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর এলাকায় উন্নয়নমূলক কোনো কাজ হচ্ছে না। তাই রাস্তা প্রশস্তের কাজ নিয়েও দেলোয়ারের সঙ্গে কোনো বিরোধ হয়নি।
দেলোয়ার হত্যার পর মেয়রের বন্ধু মনিরুল ইসলামের আচরণ ছিল সবচেয়ে সন্দেহজনক। ঘটনার পর তাঁকে অনেক দিন প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। হত্যাকাণ্ড নিয়ে আলোচনা কমে আসার পর আবার প্রকাশ্যে আসেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়েকজন ঠিকাদার প্রথম আলোকে বলেন, মনিরুলসহ তিনজন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজ মেয়রের হয়ে তদারক করেন। নগর ভবনের তৃতীয় তলায় তাঁদের একটি কার্যালয় ছিল। দেলোয়ার হত্যার পর কার্যালয়টি আর নেই।

আলোচনায় মনিরুল
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, মনিরুল ইসলাম ওরফে মনিরের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। ছোটবেলা থেকেই থাকেন গাজীপুরে। বোনের বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজে। ছাত্রজীবন থেকে বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে মনিরুলের সখ্য গড়ে ওঠে। দুজনেই একই কলেজে পড়তেন। পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরের বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে মনিরের গভীর সম্পর্কের কথা শোনা যায়।

মনিরের পরিচিতজনেরা জানান, ছাত্রজীবনে মনির ও তাঁর ভাইদের জীবন কেটেছে সাধারণভাবে। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে হঠাৎ আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে গাজীপুর শহরের বাঁশতলা এলাকায় একটি চারতলা বাড়ি, ছায়াকুঞ্জ আবাসিক এলাকায় ছয়তলা বাড়িসহ দামি গাড়ি রয়েছে। তাঁর ঘনিষ্ঠ কয়েক ব্যক্তি জানান, মনিরের উত্থান মেয়রের সঙ্গে থেকেই। কিন্তু কেউ তাঁর কোনো দৃশ্যমান পেশার কথা বলতে পারেননি। মেয়রের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকার কারণে এলাকাবাসীর অনেকেই মনিরকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা বলে মনে করেন।

দেলোয়ারের স্ত্রী খোদেজা বেগম গত ১৮ জুলাই ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই দিন অপরিচিত এক ব্যক্তি দেলোয়ারের পরিবারের হাতে আট পৃষ্ঠার একটি চিঠি দিয়ে যান। তাতে বলা হয়েছে, সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন অঞ্চলে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে নয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে অনেক টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এ ধরনের ফাইল তৈরিতে রাজি না হওয়ায় দেলোয়ারের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ কারও কারও বিরোধ বাধে। এ কারণে দেলোয়ারকে হত্যা করা হয়। ঘটনার নেপথ্যে মনিরুল ইসলাম এবং তাঁর সহযোগীরা রয়েছেন।

এই অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে মনিরুল ইসলামের দুটো মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করা হয়। অনেক দিন ধরে তাঁর ফোন দুটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, মনিরুল তাঁর বন্ধু। ব্যক্তিগত সহকারী নন। একসঙ্গে লেখাপড়া করায় ঘনিষ্ঠ মানুষ। বিভিন্ন কাজে মনিরুল তাঁকে সহযোগিতা করেন।

দেলোয়ার হত্যায় মনিরুলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘আমার ঘনিষ্ঠজনের কোনো চাওয়া-পাওয়া থাকলে আমার কাছে আসবে। দেলোয়ারকে হত্যা করতে যাবে কেন?’ তিনি বলেন, তদন্তকারী সংস্থাগুলো তদন্ত করছে। তারা যদি মনে করে, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, তাহলে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, দেলোয়ারকে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কোনাবাড়ী থেকে প্রত্যাহার করে নগর ভবনে সংযুক্ত করা হয়েছিল। পাঁচ মাস পর আবার তাঁকে কোনাবাড়ীতে বদলি করা হয়। এর দুই মাস পর তিনি খুন হন। দেলোয়ারকে বদলি করার কারণ হিসেবে এর আগে করপোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাঁকে উন্নয়নকাজের তদারকিতে পাওয়া যায় না। তবে দেলোয়ারের তিনজন সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এই অভিযোগ ছিল সহকারী প্রকৌশলী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে। প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগটি করেছিলেন দেলোয়ার। এর পাঁচ-সাত মাসের মাথায় দেলোয়ারকেই বদলি করা হয়। পরে আবার কোনাবাড়ীতে ফেরত আনার দুই মাসের মাথায় তিনি খুন হন। তাই পুরো বিষয়টি রহস্যজনক মনে করছেন দেলোয়ারের সহকর্মীরা।