Thank you for trying Sticky AMP!!

মাৎস্যবিজ্ঞান স্নাতকদের জন্য নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের গবেষণাগারে ব্যবহারিক ক্লাস করছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাহীদুজ্জামান সাগর

বাংলাদেশে গত এক যুগে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। ২০১৭ সালে দেশে মাছ উৎপাদন হয়েছে প্রায় ২১ লাখ মেট্রিক টন। আর এই বিপুল উৎপাদনের জন্যই পৃথিবীতে মুক্ত জলাশয় এবং স্বাদু পানিতে চাষভিত্তিক মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। মাছের জাত উদ্ভাবন, দেশীয় জাত সংরক্ষণ, মাছ চাষের পদ্ধতি, মাছের পুষ্টি ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা, উন্মুক্ত জলাশয়ে আধুনিক চাষ পদ্ধতি, মৎস্যসম্পদের প্রক্রিয়াজাতকরণে মাৎস্যবিজ্ঞান স্নাতকদের (ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েট) অক্লান্ত গবেষণা ও সহযোগিতা রয়েছে।

প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে মাছের অবদান অনস্বীকার্য। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং মৎস্যসম্পদ প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকার জোর দিয়েছে। এ কারণে মাৎস্যবিজ্ঞান স্নাতকদের বহুমাত্রিক কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি আরও নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভালো ফল অর্জনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন অনেকেই।

বর্তমান সময়ে তরুণদের বহুল প্রত্যাশিত ক্যাডার সার্ভিসে নির্দিষ্টসংখ্যক পদ থাকছে। টেকনিক্যাল ক্যাডারে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিভিন্ন উপজেলায় বর্তমানে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবং নতুন পদ উপসহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন এসব স্নাতক পাস শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি সাধারণ ক্যাডার অর্জন করেও নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিচ্ছেন মাৎস্যবিজ্ঞান পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘চাকরি করতে এসে ছাত্রজীবনে শেখা তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক শিক্ষাগুলো ভালোই কাজে লাগছে। মৎস্যচাষিদের সঙ্গে কাজ করা এবং প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করার মধ্যে অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করছে, অভিজ্ঞতাও হচ্ছে অনেক। তবে জনগণের সঙ্গে সরাসরি কাজ করতে পারছি—এটা কর্মক্ষেত্রে একজন মানুষের পরম পাওয়া।’

সরকারি ও বেসরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার ভালো সুযোগ থাকছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। এ প্রতিষ্ঠানের অধীনে ময়মনসিংহে স্বাদু পানি কেন্দ্র, চাঁদপুরের নদী কেন্দ্র, খুলনার লোনা পানি কেন্দ্র, বাগেরহাটের চিংড়ি গবেষণা কেন্দ্র এবং কক্সবাজারে অবস্থিত সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেওয়া যায়। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি উপকেন্দ্রে এ সুযোগ থাকছে। বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিস সেন্টারে চাকরির সুযোগ থাকছে।

অনেক মৎস্যবিদ উন্নয়নমূলক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ একাডেমি ফর রুরাল ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা কাউন্সিল, পল্লি উন্নয়ন একাডেমিতে চাকরি করা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লীকর্ম-সহায়ক প্রতিষ্ঠান, প্রশিকা, আশা, কাজী ফার্মস, আফতাব ও ব্র্যাকে কাজ করছেন অনেকেই। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি মৎস্য খামার, ফিড কোম্পানি, মৎস্য হ্যাচারি এবং বিভিন্ন ব্যাংকে গবেষক ও কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিজীবীর সংখ্যাও নেহাত কম নয়। মাছ উৎপাদনে মৎস্যজীবীদের অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো মাৎস্যবিজ্ঞানে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত খামার ও হ্যাচারি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরি হচ্ছে। তাঁরা দেশের জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অসামান্য অবদান রাখছেন। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা ভালো অবস্থানে রয়েছেন। দেশের বাইরেও আমার চেনা ফিশারিজ গ্র্যাজুয়েটরা ভালো ক্যারিয়ার গড়ছেন।’

মাৎস্যবিজ্ঞান স্নাতকদের সাফল্য
মাগুর, শিং, বাইন, তারা বাইন, গুচি বাইন, কই, দেশি পাঙাশ ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজননসহ ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, একসঙ্গে সবজি ও মাছ চাষের আধুনিক পদ্ধতি (একুয়াপোনিক্স), স্বল্প খরচে বরফ বাক্স তৈরি, রিং টানেল পদ্ধতিতে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ, খাঁচায় পাঙাশ মাছের চাষ, মাছের বিষ্ঠা দিয়ে সবজি চাষপদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এ ছাড়া মাছের জীবন্ত-খাদ্য হিসেবে টিউবিফেক্স (এক ধরনের কীট) উৎপাদনের কলাকৌশল, ইলিশ মাছ আহরণের পর মানসম্মত উপায়ে বাজারজাতকরণ পদ্ধতি, কৃত্রিম প্রজনন, কুচিয়া মাছের কৃত্রিম চাষপদ্ধতি, খাঁচায় দেশি কই মাছ চাষপদ্ধতি এবং ইলিশ মাছের স্যুপ এবং নুডলস উদ্ভাবন ইত্যাদি সাফল্য উল্লেখযোগ্য।

কোথায় পড়বেন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।