Thank you for trying Sticky AMP!!

মায়ের কোল পাওয়ার অপেক্ষায় তিন শিশু

ফুটফুটে তিনটি শিশু। তাদের তিনজনের মধ্যে একটি মিল রয়েছে। তিনটি শিশুই নাম-পরিচয়হীন। এদের দুজন হাসপাতালে বেড়ে উঠছে। আর একজনকে আপাত ঠাঁই দিয়েছেন এক নারী কাউন্সিলর। তবে জন্মদাতা মা-বাবা বুকে তুলে না নিলেও এই শিশুদের সন্তান হিসেবে পেতে চান নিঃসন্তান দম্পতিরা। এই আশায় আদালতে আবেদনও করেছেন কয়েকজন।

এই শিশু তিনটির দুটি মেয়ে ও একটি ছেলে শিশু। জন্মের পর এই শিশুদের একজনকে রাস্তায় পাওয়া যায়। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এক নারী কাউন্সিলর শিশুটিকে বুকে তুলে নেন। বাকি দুজনকে হাসপাতালে ফেলে চলে যান অভিভাবকেরা।

গত ২৬ আগস্ট চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন শাহানা নামের এক অন্তঃস্বত্তা এক নারী। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে তাঁর ঠিকানা দেওয়া হয় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছামতী গ্রাম। সেদিন রাতেই তিনি জন্ম দেন একটি কন্যা সন্তান। কিন্তু পরদিনই শিশুটিকে হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে ফেলে উধাও হয়ে যান শাহানা ও তাঁর স্বজনেরা। এরপর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচলাইশ থানার পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। আদালত পুলিশকে শিশুটির মা-বাবাকে খুঁজে বের করে হাজির করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পুলিশ ওই ঠিকানায় গিয়ে কাউকে খুঁজে পায়নি। ঠিকানা না পাওয়ায় গত সাড়ে তিন মাস শিশুটি নবজাতক ওয়ার্ডেই আছে। ইতিমধ্যে শিশুটিকে জিম্মায় নিয়ে লালনপালনের জন্য জুবাইদা হাসান নামের এক নারী আবেদন করেছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডের প্রধান জগদীশ চন্দ্র দাশ প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটি সুস্থ রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতাল থেকে লালনপালনের জন্য দিয়ে দেওয়া হয় মঙ্গল হবে। নাহলে সুস্থ শিশুটি সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর শিশু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি এম এ ফয়েজ বলেন, আগামী বছরের ২ জানুয়ারি শুনানি শেষে আদালত শিশুটিকে লালনপালনের জন্য আবেদনকারীর জিম্মায় দিতে পারেন।

তার মতো একই গল্প আরেকটি শিশুর। ১৩ আগস্ট নগরের বেসরকারি ন্যাশনাল হাসপাতালে জন্মের পর তাকে ফেলে চলে যান অভিভাবকেরা। হাসপাতালে রেকর্ড অনুযায়ী, শিশুটির বাবার নাম জাহাঙ্গীর আলম, মায়ের নাম রাহা। ঠিকানা হাটহাজারীর পূর্ব দেওয়াননগর। ওই শিশুটির মা-বাবাকেও ওই ঠিকানায় পুলিশ পায়নি। আদালতের নির্দেশে শিশুটি এখনো ওই হাসপাতালেই আছে।তবে শিশুটিকে জিম্মায় পেতে আদালতে এখনো কোনো আবেদন পড়েনি।

গতকাল দুপুরে নগরের ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আফরিন সুলতানা ও ফারহিন আক্তার নামের দুজন নার্সের কোলে হাত-পা ছুড়ে খেলছে শিশুটি।

হাসপাতালের উপব্যবস্থাপক মো. ফারুক ফয়সল প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশে শিশুটিকে লালনপালন করা হচ্ছে।

গত ১৫ অক্টোবর নগরের পতেঙ্গা থানার একটি কনটেইনার ডিপোর সামনে রাস্তার পাশে বেলা ১১টার দিকে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী একটি ছেলে সন্তান প্রসব করে চলে যান। খবর পেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানুর বেগম শিশুটিকে কোলে তুলে নেন। সেদিন থেকে তিনি শিশুটিকে লালনপালন করছেন। ইতিমধে৵ শিশুটিকে জিম্মায় নিয়ে লালনপালনের জন্য চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার এএএম হুমায়ুন কবির আবেদন করেছেন। আদালত আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি শিশুটিকে তাঁদের জিম্মায় দেওয়ার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

এর আগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রামের কর্নেলহাট এলাকার ডাস্টবিনে পাওয়া যায় আরেক নবজাতককে। তার নাম রাখা হয় ‘একুশ’। গত ২৯ মার্চ আদালত শিশুটিকে লালনপালনের জন্য এক দম্পতির জিম্মায় দেন।