Thank you for trying Sticky AMP!!

মা ইলিশ সংরক্ষণে ভিজিএফ চালু করতে চায় মন্ত্রণালয়

চালের পর্যাপ্ত মজুত না থাকার কারণে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ‘ভিজিএফ’ কর্মসূচি বন্ধ ঘোষণা করলেও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় চায় এ কর্মসূচি শুরু করতে। মূলত ‘মা ইলিশ সংরক্ষণে’ ও ‘জেলেদের ঋণ মুক্ত রাখতে’ এ কর্মসূচি চালু করতে চায় মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের দাবি, চাল না হলে এ কর্মসূচির আওতায় নগদ টাকা দেবে তারা। কিন্তু এ কর্মসূচি বন্ধ রাখা যাবে না।

ভিজিএফ কর্মসূচি চালু করতে দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের যুক্তি—এখন মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ। প্রজনন মৌসুমে মাছ আহরণ ছাড়া জেলেদের কোনো আয়ের উৎস থাকে না। তাদের দাদনদারদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্য জেলেদের ভিজিএফের এর চাল না দিলে তারা ক্ষুধা এবং ঋণের তাড়নায় মাছ আহরণ করবে। এ ক্ষেত্রে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পরে বলেও জানিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। তাই জেলেদের অবশ্যই চাল দিতে হবে।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয় থেকে এ কর্মসূচি চালুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি সার-সংক্ষেপে পাঠানো হয়েছে। সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে খাদ্য পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্তের ফলে সরকারের পূর্ব ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় মা ও জাটকা ইলিশ আহরণে বিরত থাকা মৎস্যজীবী, কাপ্তাই হ্রদ ও হালদা নদীর মাছ ধরায় বিরত থাকা মৎস্যজীবী, আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, শিশুদের অপুষ্টি দূর করতে স্কুল ফিডিং কর্মসূচিতে এবং দুই ঈদ উপলক্ষে সারা দেশে হতদরিদ্র জনসাধারণকে খাদ্য সহায়তা করা সব কর্মসূচি বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ছাড়া সম্প্রতি হাওর অঞ্চলের ছয়টি জেলায় আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হতদরিদ্র জনগণের জন্য খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা এ কর্মসূচি থেকেই।

দুর্যোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকলে চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ বরাদ্দ দিতে চান তারা। এ কর্মসূচির বদলে নগদ টাকা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সহায়তা হবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়কে চালের পরিবর্তে নগদ অর্থ দেওয়ার নির্দেশ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।

জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ্ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, মৎস্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের চিঠি দিয়ে এ কর্মসূচির চালুর জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। জেলেদের এ সহায়তা না দেওয়া হলে তারা জাটকা ধরবে চাল কেনার টাকা যোগাতে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চার লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ভিজিএফ বরাদ্দ আছে। তাই চাল না থাকলে আমরা টাকা দেব। কিন্তু বন্ধ রাখা যাবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মা ইলিশের বিস্তৃতির লক্ষ্য গত ২০১৬ সাল থেকে ১৫ দিনের পরিবর্তে ২২ দিনব্যাপী সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এ সময়ে উপকূলের জেলেদের মাছ আহরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এসব বিবেচনায় জাটকা সংরক্ষণরে ভিজিএফের কর্মসূচির মতো মা ইলিশ সংরক্ষণে ও জেলেদের ২০১৬ সাল থেকে ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এবার ৪০ কেজি হারে ২৫টি জেলায় তিন লাখ ৮৪ হাজার ৪৬২ পরিবারের জন্য চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত সারা দেশের প্রায় এক কোটি অতিদরিদ্র পরিবার ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় সুবিধা পেয়ে আসছিল। প্রতি ঈদের আগে ভিজিএফ কার্ডধারীদের ২০ কেজি করে চাল দেওয়া হতো। গত ঈদে অবশ্য ১০ কেজি করে দেওয়া হয়েছে। গত ৬ আগস্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক (ভিজিডি) গিয়াসউদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঈদুল আজহায় ভিজিএফ বরাদ্দ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এর আগে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ‘খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটি’র বৈঠকে ঈদুল আজহায় ভিজিএফ বরাদ্দ বাতিল করে ওই চাল বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।