Thank you for trying Sticky AMP!!

মা ও হাইকমিশন বলছে আটক, খোঁজ পাচ্ছে না র‍্যাব-পুলিশ

মোহাম্মদ আবদুস সামাদ তালুকদার

ছয় মাসের বেশি সময় পার হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ইয়াসিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ তালুকদারের কোনো সন্ধান এখনো দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ইয়াসিনের পরিবার ও ব্রিটিশ হাইকমিশন বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে আটক আছেন ইয়াসিন। কিন্তু র‍্যাব ও পুলিশ বলছে, ইয়াসিনকে আটক করা হয়নি। বাহিনী দুটি তাঁর খোঁজ পাচ্ছে না।

এদিকে ইয়সাসিনকে ‘ক্রসফায়ারে’ দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর মায়ের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়েছিলেন হাজি আলম খান নামে এক ব্যক্তি। তাঁকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, এই ব্যক্তি প্রতারক চক্রের সদস্য। নিজেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ পরিচয় দিয়ে ওই টাকা নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে আরও দুজন ছিলেন।

গত ১৪ জুলাই দুপুরে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির খুব কাছাকাছি বনানী রেলস্টেশনের সামনে থকে ইয়াসিনকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাঁর মা সুরাইয়া পারভীন তালুকদার অভিযোগ করেন। তিনি ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

এরপর ছয় মাস পার হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াছিনের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি। সুরাইয়া পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিশ্বাস আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেই তাঁর ছেলে আটক আছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এই নামের কেউ পুলিশের কাছে আটক নেই।’

ইয়াসিন তালুকদারের নিখোঁজের বিষয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনের কাছে কী তথ্য আছে, তা জানতে চেয়ে ১৮ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করেন এই প্রতিবেদক।

পরদিন হাইকমিশনের জ্যেষ্ঠ প্রেস অফিসার ফারোহা সোহরাওয়ার্দী ই-মেইলে জানান, ২০১৬ সালের জুলাইয়ে আটক বাংলাদেশি ব্রিটিশ নাগরিকের পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ রয়েছে। আইনি সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হাইকমিশন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ব্রিটিশ হাইকমিশন কেন ইয়াসিনকে আটক বলছে তা তারা ভালো জানে। র‍্যাব এখনো ইয়াসিনের সন্ধান পায়নি।

রাজধানীর বনানীর ডিওএইচএসে ইয়াসিনদের নিজেদের বাড়ি। মা-বাবা দুজনই চিকিৎসক। বাবা মারা গেছেন। ইয়াসিন ঢাকায় ইংরেজি মাধ্যমে ও-এ লেভেল পড়েছেন। পরে লন্ডনের কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি থেকে প্রকৌশলে স্নাতক পাস করে দেশে ফিরে আসেন।

ইয়াসিন বনানীর দুটি কোচিং সেন্টারে এবং নিজের বাসায় এ-ও লেভেলের ছাত্র পড়াতেন। তাঁর স্ত্রী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক। তাঁদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে আছে। তিনি ঢাকার বিভিন্ন মসজিদে ঘুরে ঘুরে জুমার নামাজ পড়তেন এবং ইমামদের বয়ান শুনতেন বলে জানিয়েছেন তাঁর মা সুরাইয়া পারভীন। তিনি দাবি করেন, তাঁর ছেলেকে হয়তো জঙ্গি সন্দেহে আটক করেছে, কিন্তু তিনি ধার্মিক হলেও উগ্রপন্থী নন।

ইয়াসিনের নিখোঁজের বিষয়ে গত ৫ নভেম্বর প্রথম আলোয় ‘চার মাস ধরে নিখোঁজ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা আদায়’ শীর্ষক একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে র‍্যাব-৪ গত ১২ ডিসেম্বর হাজি আলম খান নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে। ওই দিনই সুরাইয়া পারভীন ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করেন এবং ভাষানটেক থানায় হাজি আলম খানসহ আরও দুজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা করেন। বাকি দুই আসামি হলেন শামীম কামাল (লাবু) ও মজিবর। পরে আলমকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

র‍্যাব-৪-এর ডিএডি মো. আলাউদ্দীন মিয়ার নেতৃত্বে গ্রেপ্তার করা হয় হাজি আলম খানকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা হাজি আলমকে কোনো জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।

সুরাইয়া পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, ভাষানটেক থানায় তাঁর সামনেই হাজি আলম টাকা নেওয়ার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ২৬ লাখ টাকা খরচ করে ফেলেছেন এবং বাকি ২৪ লাখ টাকা তাঁর কাছে রয়েছে বলে জানান। তবে পুলিশ পরে টাকা উদ্ধারের বিষয়ে আর কিছু তাঁকে জানায়নি।

সুরাইয়া পারভীনের করা প্রতারণা মামলাটি এখন তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, ৭ জানুয়ারি তিনি মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছেন। মামলা তদন্তের কাজ তিনি কেবলই শুরু করেছেন। উল্লেখ করার মতো কোনো তথ্য এখনো পাননি।

এর আগে মামলাটি তদন্ত করেন ভাষানটেক থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাজু মিঞা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার হাজি আলমসহ তিনজন পরিবারটিকে নিরীহ দেখে টাকা হাতিয়ে নিয়েনে। মূলত তাঁরা প্রতারণা করেছেন। তিনি বলেন, হাজি আলম পুলিশের কাছে নিজেকে আওয়ামী ওলামা লীগের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। বাকি দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের গ্রেপ্তারের আগেই ৩ জানুয়ারি মামলা স্থানান্তর হয়ে যায় সিআইডিতে।

এদিকে ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও ছেলের সন্ধান না পেয়ে দিশেহারা প্রবীণ চিকিৎসক সুরাইয়া পারভীন। তিনি বলেন, দিনে দুপুরে রাস্তা থেকে তাঁর ছেলেকে যাঁরা তুলে নিয়ে গেছেন, তাঁদের আশপাশের লোকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বলে শনাক্ত করেন।

ইয়াসিনের নিখোঁজের বিষয়ে করা সাধারণ ডায়েরির তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পি এম ফরমান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ইয়াসিনের কোনো সন্ধান তাঁরা এখনো পাননি। তাঁরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন।