Thank you for trying Sticky AMP!!

মা-ছেলে ও তিন তরুণের করোনা জয়

ডামুড্যার করোনাজয়ী তিন তরুণকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন উপজেলা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ছবি: সংগৃহীত

শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার কনেশ্বর ইউনিয়নের ইকরি গ্রামের তিন তরুণ করোনা জয় করেছেন। বিচ্ছিন্ন জীবন থেকে ফিরেছেন পরিবারের কাছে। একই সঙ্গে ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের মুনয়া গ্রামের মা ও ছেলে এক মাস ঘরে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

ডামুড্যায় সুস্থ হওয়া তিন তরুণ হলেন ইয়াছিন মোল্যা (১৭), রাব্বি মাদবর (১৯) ও রাজন সরদার (২২)। আর ভেদরগঞ্জের মা-ছেলে হলেন রোকেয়া আক্তার (৩৮) ও মো. সাকিব হোসেন (১৭)।
মঙ্গলবার জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁদের সুস্থ ঘোষণা করে। ডামুড্যা উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ওই তিন তরুণের বাড়ি গিয়ে তাঁদের ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। এ সময় তাঁদের খাদ্যসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, ইকরি গ্রামের ইয়াছিন মোল্যা, রাব্বি মাদবর ও রাজন সরদার ঢাকার কাকরাইলে একটি বেকারিতে শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ২৪ এপ্রিল তাঁরা গ্রামের বাড়িতে আসেন। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে খবর পেয়ে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২৯ এপ্রিল তাঁদের করোনা ধরা পড়ে। এরপর ওই তিন যুবককে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। দুই দফা নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। দুবারই তাঁদের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তবে তাঁদের কোনো উপসর্গ ছিল না।

এ দিকে মনুয়া গ্রামের রোকেয়া আক্তার ও তাঁর ছেলে সাকিব হোসেন চিকিৎসার কাজে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যান। চিকিৎসা শেষে গ্রামে ফিরে এলে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে। গত ২৩ এপ্রিল তাঁদের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়।

করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রাজন সরদার বলেন, ‘করোনা শুনে অনেক ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম স্বাস্থ্যবিধি ও পরামর্শ মেনে চললেই করোনা জয় করা যায়, তখন সাহস পেলাম। ২৫ দিন পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম, তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ঘরে বসে দিনে কয়েক দফা গরম পানি, চা, দুধ, বিভিন্ন মসলামিশ্রিত গরম পানি খেতাম। ভাবতেও পারিনি এভাবে ভয় না পেয়ে ঘরে বসেই করোনা জয় করা যাবে।’

রাব্বি মাদবরের ভাই আল আমীন মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যখন ভাইয়ের করোনা পজিটিভ থাকার কথা জানতে পারি, তখন খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। আলাদা ঘরে তাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ওর জন্য অস্থায়ী শৌচাগার বানানো হয়েছিল। সব সময় তাকে সাহস জোগাতাম। এলাকার চেয়ারম্যান, প্রশাসনের লোক ও চিকিৎসকেরা নিয়মিত খোঁজখবর নিয়েছেন। কয়েক দফা আমাদের খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। ভাইয়ের করোনা জয়ের খবরে খুব আনন্দ লাগছে।’

করোনাজয়ী নারী রোকেয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের শরীরে কোনো উপসর্গ ছিল না। এক দিনের জন্যও কোনো অস্বস্তি বোধ করিনি। চিকিৎসক ও প্রশাসনের মানুষ আমাদের সহায়তা করেছেন। মা-ছেলে আলাদা কক্ষে থাকতাম। পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে আলাদা থেকেছি। নিয়মিত গরম পানি, দুধ, দেশি ফল, শাকসবজি খেয়েছি। খুব ভালো লাগছে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই আল্লাহ বিপদমুক্ত করেছেন।’

ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ মোস্তফা খোকন প্রথম আলোকে বলেন, জেলার মধ্যে ডামুড্যায় করোনা-আক্রান্ত ছিল বেশি। এখন ডামুড্যার রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন। আক্রান্তদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।। এখন আনন্দ লাগছে আমরা পরিশ্রম করে যাচ্ছি, রোগীরা সুস্থ হয়ে উঠছেন।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির আল নাসিফ বলেন, ‘করোনা-আক্রান্ত মা-ছেলে সুস্থ হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন, তাতে আমরা খুব আনন্দিত। তাঁদের পরিবারের লকডাউন অবস্থা তুলে নেওয়া হয়েছে।’

শরীয়তপুরে এ পর্যন্ত ৭৩ ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। ২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত ২ হাজার ৮৭ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮২৫ ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার ফল শরীয়তপুর স্বাস্থ্য বিভাগে এসেছে।