Thank you for trying Sticky AMP!!

মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ: জাতিসংঘের তালিকায় শতাধিক অভিযুক্ত

ফাইল ছবি

মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দল অভিযুক্ত হিসেবে শতাধিক ব্যক্তির একটি তালিকা চূড়ান্ত করেছে। এই অনুসন্ধানী দল এর আগে ২০১৮ সালে প্রাথমিকভাবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর (তাতমাদ) ছয়জন উচ্চপদস্থ জেনারেলকে চিহ্নিত করেছিল। নতুন তালিকায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, সীমান্তরক্ষী এবং কারারক্ষীসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর অধিনায়ক ও সদস্য এবং বেসামরিক কর্তৃপক্ষের জেলা, রাজ্য এবং ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। রাষ্ট্রীয় নয়, এমন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরাও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

৯ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে পেশ করা তথ্যানুসন্ধানী দলের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এ তালিকার কথা বলা হয়। প্রতিবেদনে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ নিবারণে ব্যর্থতার দায় মিয়ানমার রাষ্ট্রের ওপর বর্তায় বলে মন্তব্য করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার মারজুক দারুসমান, শ্রীলঙ্কার রাধিকা কুমারাস্বামী এবং অস্ট্রেলিয়ার ক্রিস্টোফার সিডোটির সমন্বয়ে এ অনুসন্ধানী দল গঠিত।

অপরাধীদের তালিকাটি অবশ্য গোপন রাখা হয়েছে, যা মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার সংরক্ষণ করবে। তা ছাড়া তদন্তকারী দলের বদলে মানবাধিকার পরিষদ নতুন যে ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার (আইআইএমএম) প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদের কাছেও এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, মিয়ানমার ইকোনমিক হোল্ডিংস লিমিটেড এবং মিয়ানমার ইকোনমিক করপোরেশনের নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এগুলোও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশটির সেনাবাহিনী যা আয় করে, তা দেশটির মানবাধিকার–সংকটে ভূমিকা রাখছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের খোলসে রোহিঙ্গাদের বাস্তুচ্যুত করা এবং সেসব জমিতে ফিরতে না দেওয়ার সঙ্গে এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ রয়েছে উল্লেখ করে বিষয়টিতে আরও তদন্তের প্রয়োজনীয়তা এবং সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়।

প্রতিবেদনে গত জানুয়ারিতে আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের বুথিডংয়ে সীমান্ত পুলিশের চারটি চৌকিতে যে হামলা চালায়, তার পটভূমিতে পরিচালিত সেনা অভিযানের বিষয়ে বলা হয়েছে, ওই সময়েও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হয়েছে। সেনাবাহিনী রাথেডং শহরে গত ২ মে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকজনের ওপর গুলি চালিয়ে ছজনকে হত্যা করে এবং তাদের মরদেহ শেষকৃত্যের জন্য পরিবারের কাছে ফেরত দেওয়া হয়নি। অভিযানের সময় স্কুল এবং বৌদ্ধমন্দির নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেনাবাহিনী সেগুলোকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। গত অক্টোবর থেকে জাতিগত রাখাইন এবং শিন সম্প্রদায়ের ৩২ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রতিবেদনে কাচিন এবং শান রাজ্যের সংঘাতগুলোর বিষয়েও বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হয়।

তথ্যানুসন্ধানকারী দলের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে এখন ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা আছে এবং তারা অব্যাহতভাবে একঘরে হয়ে থাকাসহ বৈষম্যমূলক নীতি ও ব্যবস্থা এবং চলাচলের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের শিকার। নাগরিকত্ব থেকে তারা বঞ্চিত, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নেই। তারা দৈহিক হামলা, নির্যাতন, নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং কোনো কোনো এলাকায় জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায়ের হামলার শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের আইনগত ব্যবস্থা এবং বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ এখনো অনুপস্থিত।

বাংলাদেশে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, চাষাবাদ, মাছ ধরা, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের মতো জীবিকা নির্ধারণের কাজে বাধা পাওয়ার কারণে তারা সেখানে থাকতে পারছে না। সেনাবাহিনী ও জাতিগত রাখাইন সম্প্রদায়ের লোকেরা বাধা সৃষ্টি অব্যাহত রেখেছে। শূন্যরেখা বা আন্তর্জাতিক সীমান্তে আটকে থাকা প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমার তাদের গ্রামে ফিরতে দিচ্ছে না।

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারা অব্যাহত থাকলে এবং নাগরিকত্বের কার্যকর স্বীকৃতি না পেলে রোহিঙ্গারা সেখানে ফিরতে চায় না।

মিয়ানমারের বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) বা অন্য কোনো অস্থায়ী আদালত গঠন করে সেখানে বিচারের জন্য পাঠাতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির বিষয়ে ১৭ সেপ্টেম্বর জেনেভায় তথ্যানুসন্ধানী দলের একটি সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে।