Thank you for trying Sticky AMP!!

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১২ ভারতীয় সেনাকে সম্মান বাংলাদেশের

বিজয় দিবসে কলকাতায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদরে সেনাবাহিনীর স্মারক স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ সেনা প্রতিনিধিরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ তম বিজয়ের দিনটি আজ রোববার সাড়ম্বরে পালন করেছে ভারতীয় সেনার পূর্বাঞ্চল কমান্ড এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন। আজই আবার কলকাতায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বিজয় উৎসব। কলকাতার উপহাইকমিশন চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে এই বিজয় উৎসবের। গত ৭ বছর ধরে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের উদ্যোগে এই বিজয় উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে কলকাতায়।

আজ বিকেলে কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন চত্বরে এই উৎসবের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগরায়ণ মন্ত্রী এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলী। আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ এবং ত্রিপুরার রাজমাতা বিভু কুমারী দেবী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান । এই উৎসব চলবে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

এবারেও এই উৎসবকে ঘিরে তিন দিনই থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। থাকছে নজরুল গীতি, রবীন্দ্র সংগীত, লোকগীতি, বাউলগান, লালন গীতি, আধুনিক গান, নৃত্য, নাটক সহ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তথ্য ও চলচ্চিত্র প্রদর্শন, আলোকচিত্র প্রদর্শন ।

ভারতীয় শহীদ সেনার পরিবারের হাতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেবে বাংলাদেশের নামীদামি শিল্পী এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা। থাকবে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত শিল্পীরাও। প্রতিদিন থাকবে আলোচনাসভা। এতে যোগ দেবেন দুই দেশের বিশিষ্টজনেরা।
এই বিজয় উৎসবকে ঘিরে আয়োজন করা হয়েছে বাংলাদেশের নানা খাবারের। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলবে এই উৎসব।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের সম্মানে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিকে এবারও ১৬ ডিসেম্বর সাড়ম্বরে পালন করেছে ভারতীয় সেনার কলকাতার পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড। উৎসবে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছে সাংসদ কাজী রোজির নেতৃত্বে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা, সেনা কর্মকর্তাসহ তাঁদের পরিবারবর্গের ৭২ জন প্রতিনিধি। গত বছরও যোগ দিয়েছিলেন , ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা, সাংসদ, সেনা কর্মকর্তা সহ তাঁদের পরিবার পরিজন; সব মিলিয়ে ৭২ জন প্রতিনিধি। এবার এই উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদর ফোর্ট উইলিয়ামে আয়োজন করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। সেনাবাহিনীর বিজয় দিবসের সূচনা হয়েছে কলকাতার প্রিন্সেস ঘাটে মিলিটারি ব্যান্ডের কনসার্টের মাধ্যমে। ছিল তাতে মিলিটারি ব্যান্ডের প্রদর্শন। হেলিকপ্টার প্রদর্শন, বাইক প্রদর্শন, ঘোড়া-কুকুরের কসরত ইত্যাদিও ছিল। এ উপলক্ষে কলকাতার এই পূর্বাঞ্চলীয় সেনা সদরে বিজয় দিবস বিষয়ে এক প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে।

এ ছাড়া এবার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা শহীদ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জন শহীদ সেনার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে মরণোত্তর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা। এই সম্মাননা তুলে দেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক। গত বছর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে এপ্রিল মাসে দিল্লিতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ ৭ সেনার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল মরণোত্তর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা।

কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশন চত্বরে বিজয় উৎসবের আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন পশ্চিমবঙ্গের পৌর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতীয় শহীদ সেনার পরিবারের হাতে এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা তুলে দিয়ে মন্ত্রী কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনার অবদানকে। মোজাম্মেল হক বলেন, সেদিন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাক সেনার মোকাবিলা করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। তিনি এই মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নাম কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ইন্দিরা গান্ধী সেদিন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথকে প্রশস্ত করেছেন। সেদিন থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যে সখ্য গড়ে উঠেছে তা আজও অটুট।

এদিন সেনাবাহিনীর স্মারক স্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ভারতীয় সেনা ও বাংলাদেশ সেনা প্রতিনিধিরা। পুষ্পস্তবক প্রদান করে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধিরা। এ সময় সেনা হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছিটানো হয়। মহড়া দেখান ভারতীয় সেনার জেট বিমান।