Thank you for trying Sticky AMP!!

মুখে মুখে বিরোধী হবে শরিকেরা?

>

• সংসদে প্রকৃত বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ দেখছে না ১৪ দল
• মুখে মুখে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের প্রস্তুতি
• ভোটাভুটির বিষয়ে নিশ্চিত নন

সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের অবস্থান কী হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। প্রকৃত বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ দেখছে না শরিকেরা। আবার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বসে বিরোধী দলের ভূমিকায়ও যেতে চায় না তারা। এই অবস্থায় কেবল বক্তৃতায় বা মুখে মুখে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তবে সংসদে ভোটাভুটির বিষয় আসলে কী করবে, সেটা এখনো নিশ্চিত নন জোটের নেতারা।

১৪–দলীয় জোটের শরিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের পাঁচজন নেতার সঙ্গে কথা বলে তাঁদের এই ভাবনা সম্পর্কে জানা গেছে।

জোটের সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু মন্ত্রিসভায় শরিকদের কাউকে রাখা হয়নি, তাই সংসদে তাদের একধরনের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন ও সরকারের নানা নীতি নিয়ে সমালোচনা করে বক্তৃতা করবে তারা। ‘হ্যাঁ’, ‘না’ ভোটের বেলায় চুপ থাকলেও সমস্যা নেই। কিন্তু সংবিধান সংশোধনসহ কোনো আইন প্রণয়নের সময়ে ভোটের প্রয়োজন হলে তখনই জটিলতায় পড়তে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ভোট করা সাংসদেরা সরকারি দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারবে না। এ জন্য সংসদে ১৪ দলের শরিকদের পক্ষে কার্যকর বিরোধী দল হয়ে ওঠার সুযোগ কম।

বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিক দলের ৭ জন সাংসদ হয়েছেন। এর মধ্যে ৬ জন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সই করা চিঠিতে নৌকা প্রতীকে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছেন। একমাত্র জাতীয় পার্টি (জেপি) আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নিজের দলের প্রতীক বাইসাইকেলে ভোট করেন। এর বাইরে যুক্তফ্রন্টের মাহী বি চৌধুরী ও আবদুল মান্নানও নৌকায় ভোট করে জয়ী হন।

তবে জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হয়ে কেউ সংসদে সরকারি দলের বিরুদ্ধে কোনো আইনে ভোট দিলে সংসদ সদস্য পদই থাকবে না। জেপির বিরোধিতা করার সুযোগ আছে। তবে তারা জোটের শরিক হয়ে কেন বিরোধিতা করবে?

গত সংসদে নিজস্ব প্রতীকে আলাদা নির্বাচন করেও এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা) কার্যকর বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তারা একই সঙ্গে সরকারেও ছিল। এ কারণে ‘গৃহপালিত’ বিরোধী দল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে ভোট করে ২২ আসন পায় জাপা। তাই এবারও দলটি সংসদে কতটা কার্যকর বিরোধী দল হতে পারবে, তা ​নিয়ে প্রশ্ন আছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, সংসদে আওয়ামী লীগের আসন এখন ২৫৭টি। উপনির্বাচনে আরও বাড়বে। চাইলে একাই যেকোনো আইন করতে পারবে আওয়ামী লীগ। মূলত বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাংসদেরা শপথ না নিলে এমনিতেই সংসদে বিরোধী মত থাকছে না। আর শপথ নিলেও আটজন নিয়ে সংসদ কার্যক্রমে প্রাণ আসবে না। সংসদ যাতে প্রাণহীন না হয়ে পড়ে, যেন কিছু গঠনমূলক বিরোধিতাও থাকে, সেটা নিশ্চিত করাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য। ১৪ দলের শরিক ও জাপার কাছ থেকে এই ভূমিকাই আশা করে আওয়ামী লীগ।

৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের পর ১৪ দলের আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠক হয়নি। শরিকদের যে মন্ত্রিসভায় রাখা হবে না, এই বিষয়ে আগে থেকে কোনো আলোচনাও হয়নি। আগামীকাল বুধবার সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে। শরিকেরা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে কি না, সেটা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি।

১৪ দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সংসদে শরিকদের কী ভূমিকা হবে, তা নিয়ে আওয়ামী লীগ শরিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করলে ভালো হতো। এখন আওয়ামী লীগের একেক নেতা একেক কথা বলছেন। ফলে তাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণে ১৪ দলের শরিকদের বিরোধী দলে থাকাই ভালো। এতে সরকারের ভুল সংশোধন এবং সমালোচনার সুযোগ থাকবে। মহাজোট নামে যে ঐক্য তা নির্বাচনী আর ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের যে সম্পর্ক তা রাজনৈতিক। রাজনৈতিক জোট থাকবে, তা আমরা ভেঙে দিইনি।’

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন এবং উত্তর ও দক্ষিণ সিটির ৩৬টি ওয়ার্ডের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একই দিন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া কিশোরগঞ্জ-১ আসনে ভোট। মার্চে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন শুরু হচ্ছে। এসব নির্বাচনে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে, এটা নিয়েও অন্ধকারে শরিকেরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি দলের পলিটব্যুরোর বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। জাসদ (আম্বিয়া) দলের জাতীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছে ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি। জাসদ (ইনু) জাতীয় কমিটির বৈঠক করবে ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি। গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠক ২ ফেব্রুয়ারি।

১৪ দলের সূত্র বলছে, এসব বৈঠকে তারা নিজেদের কৌশল নিয়ে আলোচনা করবে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে সংসদে স্বতন্ত্র একটা অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করা হবে। ১৪ দলের শরিকেরা জাপার সঙ্গে মিলে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করবে না। আওয়ামী লীগের বাইরের অন্য শরিকেরা একসুরে সংসদে ভূমিকা রাখতে পারে কি না, সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দল বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ১৪ দলের প্রাসঙ্গিকতা ছিল, এখনো আছে। তবে সংসদে একজন সংসদ হিসেবে যে ভূমিকা রাখার, তা তাঁরা রাখবেন। অতীতে মন্ত্রী হয়েও সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করেছেন, খারাপ হলে এর সমালোচনা করেছেন। ভবিষ্যতেও সেটা থাকবে।

সংসদে ভোটাভুটির প্রশ্নে অবস্থান কী হবে, জানতে চাইলে মেনন বলেন, সাধারণত হ্যাঁ-না ভোটে খুব একটা প্রভাব পড়ে না। বিভক্তি ভোটের বিষয় এলে হুইপিংয়ের (নির্দেশনা) ব্যাপার থাকে। সেটা পরে বোঝা যাবে।